ত্রাণের জন্য গাজাবাসীর অপেক্ষা আরও বাড়লো

ত্রাণের জন্য গাজাবাসীর অপেক্ষা আরও বাড়লো

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: মিসর থেকে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শুক্রবার ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেনি। জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রথম ত্রাণ বহরের গাজায় প্রবেশ শুরু হতে পারে আগামী দিন বা আরও পরে। এর ফলে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের মধ্যে জরুরি ত্রাণের জন্য গাজাবাসীর আরও অপেক্ষায় থাকতে হবে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

জেনেভায় জাতিসংঘের মানবিক প্রধান মার্টিন গ্রিফিতকে উদ্ধৃত করে মুখপাত্র জেন্স লায়ের্ক বলেছেন, গাজায় যত দ্রুত সম্ভব ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের গভীর ও অগ্রিম আলোচনা করছি। প্রথম চালান আগামী দিন বা তার পরে শুরু হতে পারে।

তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, কখন এই পরিবহন শুরু হবে সেটির নির্দিষ্ট সময় জানা নেই আমার। অবশ্যই আমরা আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব তা শুরু হবে। আমরা চেষ্টা করছি তা নিরাপদ, সুরক্ষিত ও টেকসই হিসেবে শুরু করার জন্য।

তিনি আরও বলেছেন, আমাদের সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে করে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে এসব ত্রাণ পৌঁছানো যায়। তবে অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান আমাদের অব্যাহত থাকবে।

গাজার কাছে মিসরের অংশে অতি জরুরি আন্তর্জাতিক ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো আটকে আছে। ইসরায়েলি অবরোধে থাকা গাজার অধিবাসীদের খাদ্য, পানি, ওষুধ ও জ্বালানি জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।

জাতিসংঘ বলেছে, গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে দশ লাখের বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। প্রতি দিন অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে।

এর আগে মিসরীয় সম্প্রচারমাধ্যম আল কাহেরা নিউজ জানিয়েছিল, শুক্রবার রাফাহ ক্রসিং চালু হবে। কিন্তু পরে কায়রো জানিয়েছে, সড়ক মেরামতের জন্য তাদের আরও সময় প্রয়োজন। গাজায় প্রবেশের একমাত্র রাস্তা হলো রাফাহ ক্রসিং। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বুধবার রাতে বলেছিলেন, শুক্রবার নাগাদ ত্রাণ নিয়ে গাজায় প্রায় ২০টি ট্রাক প্রবেশ করতে পারে। এ বিষয়ে মিসরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার সমঝোতা হয়েছে।

শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রাফাহ ক্রসিং উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে তিনি হতাশামাখা কণ্ঠে দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ শুরুর তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় ত্রাণ সরবরাহে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে এই বিধিনিষেধের বিষয়ে স্পষ্ট হতে কাজ করছি। যাতে এসব ট্রাক যেখানে প্রয়োজন সেখানে পৌঁছাতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব এসব ট্রাক আমাদের নিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেছেন, মানবিক ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশের জন্য প্রস্তুত। এই ট্রাকগুলো জীবনরক্ষাকারী। এগুলো অনেক মানুষের জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য।

মিসর জানিয়েছে, শনিবার কায়রোতে একটি শান্তি সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেতাদের। গাজায় বেসামরিকদের সুরক্ষা ও উত্তেজনা প্রশমনের জন্যই এই উদ্যোগ।

কাতার, তুরস্ক, গ্রিস, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব, ইরাক ও সাইপ্রাস তাদের প্রতিনিধি পাঠানোর বিষয় নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে মিসরের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা। এছাড়া ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও আরব লিগের মহাসচিব তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক কায়রোতে মিসরীয় প্রেসিডন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এক মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাজ্যের অগ্রাধিকার হলো মানবিক ত্রাণের জন্য রাফাহ ক্রসিং চালু করা।

এর আগে তিনি সৌদি আরবে কাতারের আমির ও সৌদি যুবরাজের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। বৃহস্পতিবার তেল আবিবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হামাসবিরোধী লড়াইয়ে ইসরায়েলের পাশের থাকার ঘোষণা দিয়ছেন তিনি।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাস ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। জবাবে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। উপত্যকায় পানি, বিদ্যুৎ, খাবার ও ওষুধের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মতে, ইসরায়েলি বোমা বর্ষণে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র শুক্রবার বলেছেন, গাজার সাতটি হাসপাতাল ও ২১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সেবা দিতে পারছে না। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৬৪জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *