দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনমানের উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করা যাইতেছে। করোনা মহামারি, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ, পাকিস্তানের বন্যা, শ্রীলঙ্কার দেউলিয়াত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি কারণে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি এখন রহিয়াছে চাপের মুখে। তবে ভারতের দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে দেশটির গুরুত্বের কারণে এই অঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে আরো সম্ভাবনাময়। আমাদের প্রতিবেশী এই দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ, তথ্যপ্রযুক্তিগত ও শিল্প খাতে উন্নয়ন লক্ষণীয়; কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশের আমদানিনির্ভরতাই অধিক। রপ্তানি খাতের উন্নয়নে কাঁচামালের সমস্যা বহুদিনের। এমন এক পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হইয়া গেল দুই দিনব্যাপী সাউথ এশিয়া ইকোনমিক সামিট। এই সামিটে সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গঠনে আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হইয়াছে।

দক্ষিণ এশিয়া সম্ভাবনাময় ও জনবহুল একটি অঞ্চল। এখানকার জনসংখ্যা ১৯০ কোটি। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৪ শতাংশ লোক বসবাস করে এই অঞ্চলে। এখানে একটি বড় ভোক্তাবাজার থাকিলেও এই সকল দেশের মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্যের হার খুবই কম। মাত্র ৫ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার পশ্চাত্পদতার ইহা অন্যতম কারণ। অথচ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য ২৬ শতাংশ। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইহা ৬২ শতাংশের অধিক। ইহার কারণ কী? প্রথমত এই সকল দেশ বাণিজ্যের দিক দিয়া বিশ্বের সবচাইতে কম কানেকটেড। নিজেদের মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়াইতে পারিলে ভবিষ্যতে বাণিজ্যও সম্প্রসারিত হইবে। এই সকল দেশের জনগণের মধ্যেও যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি হতাশাজনক। এই জন্য নিজেদের ভয়, অনাস্থা ও অবিশ্বাস দূর করিয়া দেশগুলির মধ্যে নিয়মিত আলোচনা ও সহযোগিতা বাড়াইতে হইবে। ভিসা জটিলতা ও শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর করিতে হইবে। দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি বহুপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধি করিতে হইবে। একসময় দক্ষিণ এশিয়া ছিল ইউরোপের চাইতেও অধিক সংযুক্ত। সেই গৌরব এখন ফিরাইয়া আনিতে হইবে। নৌ, সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাইতে হইবে।

বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে ২৬ শতাংশ অবদান রাখিতেছে দক্ষিণ এশিয়া। বিশ্বমন্দার সময়েও এই অঞ্চলে অব্যাহত ছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এফডিআই বাড়িবার পাশাপাশি বাড়িয়াছে মাথাপিছু আয়ও। তবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব রহিয়াছে। যদিও এই মুহূর্তে বাংলাদেশসহ তিনটি দেশ নিম্ন আয়ের দেশের গণ্ডি অতিক্রম করিবার চেষ্টা করিতেছে; কিন্তু স্মুথ গ্র্যাজুয়েশন চ্যালেঞ্জ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ইহার মূল কারণ যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। এই অঞ্চলে কর্মসংস্থানের অভাবে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সদ্ব্যবহার করা যাইতেছে না। দক্ষ জনশক্তির দিক হইতেও আমরা পিছাইয়া রহিয়াছি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পিছনে এখনো কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্র কাজ করিতেছে প্রতিবন্ধক হিসাবে। এই অঞ্চলের খাদ্যনিরাপত্তা লইয়াও প্রশ্ন রহিয়াছে। ইহা একটি মানবিক ইস্যু হইলেও এই ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার নজির কম নহে। এই অঞ্চলে একক মুদ্রার ধারণা এখনো জনপ্রিয় হয় নাই। অভিন্ন মুদ্রা প্রচলনের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো এতদঞ্চলে ভিসামুক্ত সুবিধা চালু করা দরকার বলিয়াও অনেকে মনে করেন।

দক্ষিণ এশিয়ার এখন অন্যতম বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি। ইহার সমাধানে এই সকল দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার হস্ত সম্প্রসারিত করিতে পারে। নিজেদের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে একটি দপ্তর থাকাও দরকার। সর্বোপরি মুক্তবাণিজ্য নীতি গ্রহণের মাধ্যমে এই অঞ্চল একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হইবে বলিয়া আশা করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *