আল্লামা আশরাফ আলী দা.বা. বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সিনিয়র সহ-সভাপতি। জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস। দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ আলেম কওমী মাদরাসার স্বীকৃতির জন্য গঠিত আল হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার কো-চেয়ারম্যান। বয়োবৃদ্ধ এ মুরব্বী এখনও দেশ ও জাতির প্রয়োজনে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি আদায়ে তার অবদান অনস্বীকার্য। আল্লামা শাহ আহমাদ শফীর অবর্তমানে সকল কাজ তাঁর দিক নির্দেশনাতেই এগিয়ে চলেছে। স্বীকৃতির অগ্রগতি সহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন পাথেয় টুয়েন্টিফোর এর সাথে। বর্ষামুখর এক বিকেলে মালিবাগ জামিয়ায় তাঁর মুখোমুখি হয়েছেন পাথেয় প্রতিবেদক তানজিল আমির ।
পাথেয়ঃ- বহু কাঙ্ক্ষিত কওমী সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা হয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি নতুন অধ্যায়, এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
মাওলানা আশরাফ আলী : আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবানীতে কওমী সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা এসেছে। কওমী মাদরাসার লাখো শিক্ষার্থীর বহুদিনের এ দাবী এখন বাস্তবায়নের পথে। স্বীকৃতির জন্য বহু বছর যাবৎ আন্দোলন ও প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছি। এর ধারাবাহিকতায় বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখন একটি পর্যায়ে উপনীত হয়েছি।
৬ বোর্ডের ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাগুলো নতুন এক প্লাটফর্মে দাঁড়িয়েছে। মাদারিসে কওমীয়ার স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে যেন স্বীকৃতি হয়, প্রথম থেকেই বিষয়টি নিয়ে আমরা সচেতন ছিলাম। সবদিক বিবেচনা করে সম্মিলিতভাবে স্বীকৃতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই তাড়াহুড়া না করে, ভেবেচিন্তে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
পাথেয় : ঘোষণা হয়েছে গত ১১ এপ্রিল । অথচ এখনও আইনত কোন ভিত্তি তৈরী হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাই যে, আসলে কেন দেরী হচ্ছে?
মাওলানা আশরাফ আলী : এখানে প্রক্রিয়া ও আইনগত অনেক কাজ রয়েছে। সরকার কোন প্রক্রিয়ায় দেবে, আমরা কোন প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করবো, সবকিছু এখনই ভেবেচিন্তে ঠিক করতে হবে। আমরা রমজানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে আমাদের প্রক্রিয়া জানিয়ে এসেছি। পুরো বিষয়টি আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। এখন সেই মোতাবেক দাপ্তরিক কাজ চলছে এবং প্রক্রিয়াগত ব্যাপার নিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় কাজ করছে। আশা করি, খুব দ্রুতই সব কাজ সমাধা হবে।
পাথেয় : ২০০৬ সালেও আমরা ঘোষণা পেয়েছিলাম কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয়নি। এখনও অনেকে তেমনটাই আশঙ্কা করছে, বিশেষত সংসদে আইন পাশ না হওয়ায় এ আশঙ্কা আরও তীব্র হয়েছে।
মাওলানা আশরাফ আলী : ভয় বা হতাশার কিছু নেই। এ পর্যন্ত সরকারের সবাইকেই আন্তরিক মনে হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দও আন্তরিকভাবে যোগাযোগ রাখছেন। সংসদে দ্রুত আইন পাশ করানোর জন্য আমাদের লিয়াজোঁ কমিটি তৎপর রয়েছে। কাজের অগ্রগতির জন্য নতুন সদস্যও কো-অপ্ট করা হয়েছে। সোমবার কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে আমাদের মিটিং ছিলো। সেখানেও কাজের অগ্রগতি ও সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পাথেয় : ৬ বোর্ডের ঐক্যবদ্ধতা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই আশাজাগানিয়া ও আনন্দের বিষয়। একতার এ বন্ধন কতটুকু অটুট বলে আপনি মনে করেন?
মাওলানা আশরাফ আলী : আমাদের কওমী মাদরাসাগুলো ৬ বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় ও আঞ্চলিকভাবে সবাই কাজ করে। কিন্তু ইতোপূর্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিলো না। স্বীকৃতিসহ দ্বীনি মাদরাসার কল্যাণ কামনায় সবাই একটি ছায়াতলে সমবেত হয়েছে। সবার সমম্বিত অংশগ্রহণে গঠিত হয়েছে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যা। আলহামদুলিল্লাহ, এ ঐক্যের সূফল হিসাবেই আমরা স্বীকৃতির ঘোষোণা পেয়েছি। এখনও সবাই ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আমরা সামনের কাজগুলো সমাপ্ত করবো। হাইয়াতুল উলইয়ায় সকলে মিলেমিশে কাজ করছে।
সবার সমম্বিত অংশগ্রহণে গঠিত হয়েছে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যা। আলহামদুলিল্লাহ, এ ঐক্যের সূফল হিসাবেই আমরা স্বীকৃতির ঘোষোণা পেয়েছি। এখনও সবাই ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আমরা সামনের কাজগুলো সমাপ্ত করবো। হাইয়াতুল উলইয়ায় সকলে মিলেমিশে কাজ করছে।
পাথেয় : দাওরায়ে হাদিসকে দুই বছর করার কথা শোনা যাচ্ছে, আসলে কি এমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বা হবে?
মাওলানা আশরাফ আলী : দাওরায়ে হাদিসকে দুই বছর করার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এমন কোন কথা আমার জানা নেই। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন আলোচনাই উঠেনি। ভিত্তিহীন কোন কথা নিয়ে চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই। আমাদের মিটিংয়ে যা আলোচনা হয়, সে সব বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং পরবর্তীতে আমরা সিদ্ধান্তগুলো সবাইকে জানিয়ে দেই, তাই না জেনে কোন কথা না ছড়ানোর জন্য আমি সবাইকে অনুরোধ করবো।
পাথেয় : দারুল উলূম দেওবন্দের সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক কিন্তু এ দেশের শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়তে যেতে পারে না । কারণ উভয় দেশের কতৃপক্ষের মধ্যে কোন চুক্তি নেই। তাই বাংলাদেশি ছাত্রদের দেওবন্দে বৈধভাবে পড়ার ব্যাপারে উভয় দেশের মাঝে কোন শিক্ষা চুক্তির ব্যাপারে কি হাইয়াতুল উলইয়া ভাববে?
মাওলানা আশরাফ আলী : আসলে উভয় দেশের কতৃপক্ষ আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এটি রাষ্ট্রীয় ব্যাপার। স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হলে এর পথ অনেকটা সুগম হবে। তখন গুরুত্বের সঙ্গে আমরা সরকারের কাছে এ বিষয়ে দাবি জানাবো। আগামী সোমবারের মিটিংয়ে আমি বিষয়টি উপস্থাপন করবো।
পাথেয় : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মাওলানা আশরাফ আলী : তোমাকেও ধন্যবাদ।