দাম নিয়ন্ত্রণে এবার আলু আমদানির সুপারিশ

দাম নিয়ন্ত্রণে এবার আলু আমদানির সুপারিশ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: হিমাগার ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেঁধে দিয়েও আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি সরকার। দাম নির্ধারণের পর সেই দাম কার্যকর করতে সারা দেশে টানা অভিযানও চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। হিমাগারে গিয়ে তদারকিও করে ভোক্তা অধিদপ্তর। তারপরও আলুর বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হয়নি।

দাম বেঁধে দিয়ে ও অভিযান চালিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এখন ভোক্তা অধিদপ্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সীমিত পরিসরে আলু আমদানির সুপারিশ করেছে। সম্প্রতি আলু নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনো কোনো ডিম আমদানি হয়নি। এখন আলু আমদানির সুপারিশের ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নেয়, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন আমদানিকারকেরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, বর্তমান সংকট মোকাবিলায় সীমিত আকারে আলুর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৃত তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া হিমাগার, ব্যাপারী, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে যারা অস্থিরতা তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে আরও যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে আছে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া, কৃষকদের জন্য শস্য বিমা চালু, কৃষিপণ্যের পাইকারি ও খুচরা বাজারে নজরদারি বাড়ানো, টেকসই বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে প্রান্তিক কৃষকদের ন্যায্যমূল্যে বীজ আলু, সার ও কীটনাশকপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার মতো বিষয়।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আলুর বাজারের সার্বিক অবস্থা অবহিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এখন বাজার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে আলুর দাম সহনীয় রাখতে কী করা যেতে পারে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া ভোক্তার প্রতিবেদনে আমদানির সুপারিশের পাশাপাশি কিছু পর্যবেক্ষণও তুলে ধরা হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণ তৈরি হয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বাজার ও হিমাগার অভিযানের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। বিশেষ করে আলু উৎপাদনকারী বড় চার জেলা মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও নীলফামারীতে হিমাগার পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কৃষিঋণ প্রকৃত কৃষকেরা পাচ্ছেন না। হিমাগারমালিকেরা এই সুবিধা নিচ্ছেন কৃষকদের নামে। পরে তারা এজেন্টদের মাধ্যমে আলু উৎপাদন মৌসুমে দাদন প্রথা চালু করেন। এর মাধ্যমে হিমাগারমালিকেরা কৃষকদের স্বল্প মূল্যে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করেন। আর এজেন্টরা প্রাপ্ত অর্থ ব্যবহার করে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে তা হিমাগারে সংরক্ষণ করে।

এ ছাড়া অনেক সময় এ খাতের প্রভাবশালী মহল অনৈতিক বিনিয়োগ করে কৃষকের জমি থেকেই আলু বিক্রি করতে বাধ্য করে। হিমাগারকেন্দ্রিক এজেন্টরা প্রত্যক্ষভাবে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলেও ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আলুর ব্যবসা পরিচালিত হয় মুঠোফোনে যোগাযোগ ও খুদে বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রসিদ দেওয়া হয় না। পরিমাণ উল্লেখ থাকলেও বিক্রয়মূল্য উল্লেখ থাকে না।

আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন বা হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, সরকার জনগণকে কম দামে আলু খাওয়াতে চাইলে আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সরকারের সেই সুযোগ আছে। তবে এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষকের সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পাওয়া উচিত।

আমদানিকারকেরা বলছেন, আলুর মতো পণ্য আমদানি করতে হলে সেটা কাছাকাছি কোনো দেশ থেকে করতে হবে। সরকার যদি আলু আমদানির অনুমতি দিতে চায়, সেই সিদ্ধান্তও আসতে হবে দ্রুত। কারণ, সামনে আলুর মৌসুম আসছে। তাই আমদানির সিদ্ধান্ত দ্রুত না নিলে বাজারে সুফল মিলবে না।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে খুচরায় আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২ থেকে ২৪ রুপি বা ২৯ থেকে ৩২ টাকা। পাইকারিতে সেখানে দাম আরও কম। এদিকে ঢাকার বাজারে আলুর দাম প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। সরকার খুচরা পর্যায়ে দাম বেঁধে দিয়েছে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আলু আমদানির কোনো তথ্য পাওয়া যায় না; বরং বাংলাদেশ থেকে কিছু আলু রপ্তানি হয়ে থাকে। এবার আলুর সংকটে রপ্তানিও কম হয়েছে।

রাজধানীর বাদামতলীভিত্তিক আমদানিকারক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমারে আলুর দাম কম। তবে মিয়ানমারের সঙ্গে সব ব্যাংক লেনদেন বন্ধ থাকায় এখন আমদানি করা যাবে না। আলু আমদানিতে ভারতের ওপরই নির্ভর করতে হবে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে উৎপাদিত আলুর সাড়ে ৫ শতাংশ স্থানীয় বাজার পর্যায়ে বিক্রি হয়। বাকি ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ জেলা শহর পর্যায়ে বা সারা দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। আলু উৎপাদনশীল ১০টি জেলায় কৃষক মোট উৎপাদনের ৮৫ দশমিক ৩ শতাংশ স্থানীয় বড় ব্যাপারীর কাছে বিক্রি করেন। ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ ফড়িয়া সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যান। মাত্র ১ শতাংশ স্থানীয় বিক্রেতার মাধ্যমে বিক্রি হয়।

সূত্র: প্রথম আলো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *