পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: সিরকিউজের সম্রাট ছিলেন হিয়োরো। তিনি একটা মুকুট তৈরি করতে দিয়েছিলেন এক স্বর্ণকারকে। স্বর্ণকার কয়েকদিন পর একটা মুকুট এনে রাজাকে দেয়। মুকুট বেশ ভালোই বানিয়েছে স্বর্ণকার।
কিন্তু সম্রাটের খটকা লাগে। সন্দেহ হয়, মুকুটে খাদ মেশানো আছে। তিনি স্বর্ণকারকে জিজ্ঞেস করেন সে কথা। কিন্তু স্বর্ণকার জোর গলায় অভিযোগ অস্বীকার করে।
তবু সম্রাটের মনের খচখচানি যায় না। তিনি দরবারের পণ্ডিতদের ডেকে পাঠালেন। হুকুম দিলেন মুকুট না ভেঙে এতে খাদ আছে কিনা বলতে হবে। পণ্ডিতেরা সমাধান দিতে পারলেন না।
তখন আর্কিমিডিসের শরণাপন্ন হলেন সম্রাট। কিন্তু আর্কিমিডিসও পড়ে গেলেন বেকায়দায়। মুকুট গলিয়ে খাদ মেশানো আছে কিনা পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু সে তো সম্রাট করতে দেবেন না। কী করবেন তিনি?
কেউ কেউ বলেন, রাজা আর্কিমিডিসকে এক মাস সময় দিয়েছিলেন।
আর বলেছিলেন, আর্কিমিডিস যদি বলতে ব্যর্থ হন, তবে তাঁর গর্দান যাবে। তবে এ কথা সত্যি কিনা নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
যাইহোক, নাওয়া-খাওয়া ভুলে উপায় খুঁজতে লাগলেন আর্কিমিডিস। সারাক্ষণ চিন্তায় ডুবে থাকেন। এভাবে কাটল বেশ কিছুদিন। একদিন তিনি চৌবাচ্চায় গোসল করতে গেলেন। পানিতে নামার সাথে সাথে কিছু পানি চৌবাচ্চা থেকে উপচে পড়ে গেল। বিদ্যুৎ খেলে গেল আর্কিমিডিসের মাথায়। সমাধান পেয়ে গেছেন! ‘ইউরেকা! ইউরেকা!’ বলে চেঁচিয়ে উঠলেন। এক লাফে চৌবাচ্চা থেকে উঠে ভেজা গায়ে ছুটলেন রাজ দরবারে। সম্রাট-সভাসদরা দেখলেন আর্কিমিডিসের দেহে সুতোটিও নেই!
যাইহোক পরে পোশাক-টোশাক পরে এসে আর্কিমিডিস সম্রাটকে বললেন এক পাত্র পানি, মুকুট আর মুকুটের সমান ওজনের খাঁটি সোনা দিতে। তাই দেওয়া হলো। আর্কিমিডিস প্রথমে পানি ভর্তি পাত্রে খাটি সোনা ডোবালেন। কিছু পানি উপচে পড়ল। উপচে পড়া পানিটুকু ওজন করা হলো। তারপর আবার পাত্রটাকে পানি দিয়ে ভর্তি করা হলো। এবার সেই পানিতে ডোবানো হলো মুকুট। আবার কিছু পানি উপচে পড়ল। এবারও উপচে পড়া পানিটাকে ওজন করা হলো। দেখা গেল আগের বারের চেয়ে এবারের পানির ওজন কম। তারমানে খাঁটি সোনা যতটুক পানি উপচে ফেলেছিল মুকুট ততটুকু পারেনি। মুকুট খাঁটি হলে উভয় ক্ষেত্রেই উপচে পড়া পানির ওজন সমান হত। তার মানে মুকুটে খাদ মেশানো আছে। সমাধান হয়ে গেল। এই পরীক্ষা থেকেই আর্কিমিডিস আবিষ্কার করলেন বস্তুর আপেক্ষিক ঘনত্ব নির্ণয়ের সূত্র।
সূত্র: Eureka! The Archimedes Principle