পাথেয় রিপোর্ট : ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে মাদকদ্রব্য ও বিপুল পরিমাণ টাকাসহ আটক চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মাদক মামলায় দুই দিনের রিমান্ড আদালত মঞ্জুর করেছে বলে জানা যায়।
২৯ অক্টোবর সোমবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল মাহমুদ রিমান্ড শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। সকালে কিশোরগঞ্জ কারাগার থেকে সোহেল রানা বিশ্বাসকে আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এর আগে চট্রগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, আড়াই কোটি টাকার এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তারের পর শনিবার তাকে সাময়িক এই বরখাস্ত করা হয়েছে।
এসব টাকা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের কারা উপমহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিকের। তাঁদের কাছে টাকাগুলো ঢাকায় নিয়ে হস্তান্তরের কথা ছিল বলে দাবি জেলার সোহেল রানার। তবে রানার নামেও প্রায় তিন কোটি টাকা ডিপোজিটের তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
জেলার সোহেল রানা ২০০২ সালের পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার পদে কর্মরত ছিলেন। তখন থেকেই অবৈধভাবে টাকা আদায় করতেন বলে জানিয়েছেন ওই সময়ে একটি মামলার হাজতি বন্দি শামসুল হক জাবেদ। তিনি বলেন, আমি একটি রাজনৈতিক মামলায় ২০০২ সালে কারাগারে গিয়েছিলাম। আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর জেল থেকে বের হওয়ার আগ মুহূর্তে সোহেল রানা আমার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। না হলে অন্য মামলায় আমাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
ডেপুটি জেলার হিসেবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বেশ কয়েক বছর চাকরির পর সোহেল রানা অন্যত্র বদলি হন। পরে জেলার পদে পদোন্নতি পেলে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে যোগদান করেন। চট্টগ্রামে এসেই পুরনো পথে হাঁটেন সোহেল। তিনি রাজনৈতিক বন্দিদের জামিন হওয়ার পর মুক্তির আগে পুলিশকে খবর দেবেন এবং পুলিশ পুনরায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাবে এমন ভয় দেখিয়ে শত শত হাজতি বন্দির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ আছে।
ঢাকার সহকারী কারা মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন তাকে মৌখিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করেন। অফিস খোলা হলে অফিসিয়ালভাবে পত্রের মাধ্যমে এই আদেশ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এর আগেও জেলার সোহেল রানার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করা, মাদক সেবন ও ব্যবসা করা, অফিসিয়াল শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় তাকে আগেও দুইবার সাময়িক বরখাস্ত হয়। পরে অফিসিয়াল আপিলের মাধ্যমে চাকরি ফেরত পান তিনি।
উক্ত ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে শনিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মজিদ জানান, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও মাদক আইনে ভৈরব রেলওয়ে থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। মাদক মামলাটি পুলিশ তদন্ত করবে আর অর্থ পাচারের মামলাটি দুদক তদন্ত করবে। এ বিপুল পরিমাণ টাকার সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী লোক জরিত আছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার দুপুরে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, আড়াইকোটি টাকার এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ রেলওয়ে পুলিশ চট্রগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও মাদক আইনে ভৈরব রেলওয়ে থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।