দেখা-সাক্ষাৎ ছাড়াই যার থেকে উপকৃত হয়েছি: মাওলানা যাহিদুর রশিদী

দেখা-সাক্ষাৎ ছাড়াই যার থেকে উপকৃত হয়েছি: মাওলানা যাহিদুর রশিদী

আজকের আলোচনা এমন এক মহান ব্যক্তির ব্যাপারে শুরু হবে যার নাম আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। এবং তার সাথে বিনা সাক্ষাতে অনেক ফায়দা হাসিল করেছি। আমার এ কথা বলাও ভুল হবে না যে তিনি ওই সমস্ত ওলামায়ে কেরামের মধ্যমণি যাদের নাম নিয়ে আমরা নিজেরা গর্ববোধ করি এবং নিজেদের পরিচয় দেই, যার নাম নিয়ে কোনো কথা আসলে আমরা স্বস্তিতে সত্যের পথ চলতে পারি, যার নাম নিয়ে এমন ভরসা রাখতে পারি যে ইনশাআল্লাহ কেয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা ওনার সাথে থাকার সুযোগ করে দিবেন।

আমি কিছু কথা ব্যক্তিগত প্রভাব থেকে বলবো। শাইখুল ইসলাম মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. এর নাম সর্বপ্রথম ওনার মৃত্যুর পর শুনেছি। বলা যায় পড়েছি। ওই সময় আমি ১০/১১ বছরের ছিলাম। আমি ‘ঘাখারে’ এক দোকানে কিছু সদাই নিতে গেলাম। তখন সেখানে এক লোক শহরের নামী খবরের কাগজ পড়ছিলো। সেখানে এক কাগজের কোণায় ছোট করে লেখা ছিলো, ‘দেওবন্দওয়ালা হুসাইন আহমাদ মাদানী ইন্তেকাল করেছেন’। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন। পরে যখন ঘরে আসি তখন আমার সম্মানিত আব্বাজান মাওলানা সরফরাজ খান রহ. এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম—

দেওবন্দওয়ালা হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. কে?

আব্বা বললেন, কেন? কী হয়েছে?

তখন আমি বললাম, তিনি ইন্তেকাল করেছেন।

একথা শুনে তিনি ‘ইন্না লিল্লাহ’ পড়ে বললেন, তোমাকে কে বলল?

তখন তো এখনকার মতো এত মোবাইল টেলিফোনে যোগাযোগের সয়লাভ ছিলো না। পত্রিকার খবর আমি বললাম।

কোথায় পত্রিকা? যাও আনো তো দেখি!

আমি দোকানে গিয়ে বললাম, আব্বা পত্রিকাটা চাচ্ছেন। পত্রিকা নিয়ে বাড়ি আসলাম। সংবাদটা সামান্য চার পাঁচ লাইনের ছিলো। কিন্তু আব্বাজানের একদম নাজেহাল অবস্থা হয়ে গেল। ওই অবস্থা এখনো আমার মনে আছে। অস্থিরতায় একদম ঢুলে ঢুলে চলছিলেন। বারবার ইন্না-লিল্লাহ পড়ছিলেন। আমি অবাক হলাম আব্বাকে এমন কখনো দেখি নাই। আজকে আব্বার কি হলো! কিছু সময় পর তিনি শান্ত হয়ে বললেন, তিনি আমাদের শিক্ষক এবং সবচেয়ে বড় শিক্ষক। আমরা ওনার থেকে অনেক কিছু শিখেছি এবং উনিই দেওবন্দের শাইখুল হাদীস ও প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

ওটাই হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ এর সাথে আমার প্রাথমিক পরিচয়। যেটা আমার যেহেনে এমনভাবে গেঁথে আছে যা এখনো আমার মাথায় ঘুরতে থাকে। মুহতারাম আব্বাজান সরফরাজ খান রহ. ওনার শাগরেদ ছিলেন। আমার মুহতারাম চাচা সুফী আবদুল হামীদ খানও হযরতের শাগরেদ ও মুরীদ ছিলেন। ওনার বাইয়াতও শাইখুল ইসালাম রহ. এর থেকে ছিলো। এজন্য এই দুই বুজুর্গ থেকে ক্লাসে এবং ক্লাসের বাইরেও হযরতের ব্যাপারে অনেক জানার সুযোগ পাই। আমার আরেক তৃতীয় উস্তাদ মাওলানা আবদুল কাইয়ূম হাজরউই রহ. ছিলেন। তার কাছে বড় বড় শায়েখদের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য যে দুই তিনজন শায়েখের কথা শুনেছি তার মধ্যে সায়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. ছিলেন।

পরে যখন ছাত্রাবস্থায় আন্দোলনের সাংগঠনিক ও দলীয় কার্যক্রম শুরু হয়, তখন আমি মুতাওয়াসসিতা জামাতে পড়ি। কিতাবাদি পড়ার আগ্রহও ছিলো। ওই সময়ই আমি মাদানী রহ. এর আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘নকশে হায়াত’ পড়ি। এখনোও পড়ি। হুজুরের প্রতি বিশ্বাস এবং ভালোবাসা এই পরিমানে ছিলো যে, তিনি আমার দাদা হুজুর ছিলেন। এই ৬০ সাল থেকে ৭০ সালের মধ্যে হযরতের যা যা ইরশাদাত এবং লেখা যত পড়েছি তত তার প্রতি বিশ্বাস এবং ভালোবাসা বেড়েছে। (আমি মাদানী রহ. এর লেখা দেখেছি এবং পড়েছি।) যত আগে বেড়েছি তার থেকে ফায়দা হাসিলের সুযোগ হয়েছে।

কোনো কুণ্ঠাবোধ ছাড়াই আমি একথা বলি যে কোনো ব্যক্তির সাথে দেখা সাক্ষাত ছাড়া যাদের থেকে উপকৃত হয়েছি তাদের মধ্যে প্রথমে থাকবেন হযরত সায়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ.। ওনার মদীনা মুনাওয়ারাতে অবস্থান, মাল্টায় কারাবাস, জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম। মোটকথা, ওনার জীবনের প্রতিটা প্রজ্ঞাপূর্ণ পদক্ষেপ আমাদের সামনে। সব বিষয়ে আলোচনা সম্ভব না। দুয়েকটা বিষয় আলোচনায় রাখছি—

মাল্টায় কারাবন্দী অবস্থায় তার উস্তাদ মুহতারাম শাইখুল হিন্দ হযরত মাওলানা মাহমুদ হাসান (কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহুল আযীয) এর সাথে তাঁর যে সময় অতিবাহিত হয়েছে আমি ওই ঘটনাকে ভুলতে পারি না। এমন নজীরবিহীন আত্মত্যাগের ঘটনা পৃথিবীতে নেই। মাদানী রহ. যে আন্দোলনে ধরা পড়েছিলেন তার প্রতি বিরূপ ছিলেন না। তিনি বছরের পর বছর মদীনায় ছিলেন এবং তার কাজ করেছেন, পড়িয়েছেন। এবং মদীনায়ই থেকে গিয়েছিলেন। ছাত্র উস্তাদের মধ্যে এই সম্পর্ক ছিলো। আর তাঁর সাথে তিন সাড়ে তিন বছর ওখানেই ছিলেন। কোরবানী এবং আত্মাত্যাগের এমন মাত্রা আর কোথাও কি পাওয়া যায়? এই জিনিসই আমায় ভীষণ প্রভাবিত করেছে।

আমি মদীনা মুনাওয়ারার সময় তাঁর একটি কথাও শুনেছি এবং আমি মখদুম হযরত মাওলানা সায়্যিদ আসআদ মাদানী রহ.-এর কাছ থেকেও শুনেছি যে, হযরত মাদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হাদীস শিক্ষা দিতেন। মদীনা মুনাওয়ারাহ শরীফে হাদিস শিক্ষাদানে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিলো। তিনি তাঁর এক ছাত্রের নাম উল্লেখ করেছেন, আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শায়খ আব্দুল হামিদ বিন বাদিশ রহ. এবং তার সাথে শেখ ইব্রাহিম রহ. (আমিও লাহোরে তাদের সাথে দেখা করতে পেরেছি।) শায়খ বিন বাদিশ রহ. এর সাথে দেখা করতে পারিনি। তিনি আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনে বন্দী ছিলেন।

পরে যখন হযরত মাদানী রহ. এর কাছ থেকে পড়াশোনা করে শেষ করে নিজে পড়ানোর জন্য শায়েখের কাছে অনুমতি চাইলেন তখন শায়েখ বললেন, নারে ভাই! তোমার দেশ গোলামীর মধ্যে আছে। নিজের দেশে ফিরে যাও। ওলামায়ে কেরামকে একত্রিত করো এবং স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ নেও। আমার তথ্য অনুযায়ী শায়খ বিন বাদিশ এবং শেখ ইব্রাহিম আল আকবর ‘জমিয়তে উলামা আল-জাযাইর’ গঠন করেছিলেন, তাদের পিছনে রয়েছেন শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (আল্লাহ তাকে রহমত দান করুন।) ছিলেন। আমি যখন ইতিহাসের দিকে তাকাই, আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের পিছনে আমি শাইখুল ইসলামকে দেখতে পাই।

পাকিস্তান রাষ্ট্র হওয়ার পর শাইখুল ইসলাম মাদানী রহ. তিনি যে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের বিপক্ষে অন্যতম একজন ছিলেন এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ওইদিকে (পাকিস্তানে) তাকে মুহাব্বত করা ভক্তরা বেশী থাকাতে ওনার জন্য সমস্যা সৃষ্টি হলো। কিন্তু তিনি যে সমঝতার সাথে এখানকার লোকদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং নিজের দেশের সাথে একনিষ্ঠতার সাথে জুড়ে ছিলেন তার একটা উদাহরণ এমন দেয়া হয় যে— মসজিদ নির্মাণের সময় দেখা যায় যে লোকেরা এই নিয়ে কথা কাটাকাটি করে কেউ বলে যে এখানে বানানো হবে আর কেউ বলে ওখানে বানানো হবে, কেউ বলে ওদিক দিয়ে বানানো হবে আবার কেউ বলে এদিকে বানানো হবে, এমন নকশায় তৈরী হবে আবার ওমন নকশায় তৈরী হবে। এমনকি ঝগড়াও হয়ে যায়। কিন্তু যখন মসজিদ তৈরী শেষ হয়ে যায় সেটা মসজিদই থেকে যায়।

এখানে পাকিস্তানে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম (বাকি বুজুর্গদের কথ আমি অস্বীকার করি না) এটি শাইখুল ইসলাম মাদানীর শাগরেদগণ সমাধান করেছিলেন (আল্লাহ তাকে শান্তি দান করুন) আর এটাই ইতিহাস এবং সরল দৃষ্টিকোণ।

দারুল উলূম দেওবন্দের বার্ষিক সম্মেলনে (মার্চ ১৯৮০ ইং) আব্বাজান মাওলানা সরফরাজ খান ও হযরত সুফী আবদুল হামীদ খান সাওয়াতি রহ. এর বন্ধুসুলভ আচরণ এবং তত্ত্বাবধানে এবং মুফতি মাহমুদ রহ. এর নেতৃত্বে আমার সেখানে যাওয়ার সুযোগ হয়। ওইদিনের কথা আমি কখনো ভুলবো না। আমরা মাওলানা সালিম কাসেমীর মেহমান ছিলাম এবং ওনার ঘরেই উঠলাম। সেবারই আমি ইন্ডিয়া প্রথমবার গেলাম। আর দেওবন্দের প্রতি হৃদয়ের আকুলতা আর ভালোবাসা তো বলে বোঝাতে পারবো না।

একদিন দুই মুরুব্বি মিলে মাশওয়ারাহ করলেন —যাহিদ প্রথম আসলো তাকে দেওবন্দ ঘোরানো উচিত।

পুরো একদিন ওনারা আমাকে নিয়ে দেওবন্দ ঘুরালেন। হযরত আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি রহ. এর ঘরে নিয়ে গেলেন। মাওলানা আহমাদ রেজা বিজনূরী রহ. আসলেন। তার সাথে দেখা-সাক্ষাত হলো। মাদানী মঞ্জিলে গেলাম। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো যেটা আমি আজ পর্যন্ত ভুলতেই পারি নি।

যখন ‘কবরস্থান-ই- কাসেমী’তে গেলাম, সেখানে পাশাপাশি উস্তাদ-শাগরেদের কবর এক জাগায় দেখে আমার অন্তরের অবস্থা বদলে গেলো। আমি আমার অন্তরের অবস্থা অনুভব করছিলাম। তারা কেমন উস্তাদ-শাগরেদ ছিলেন? একজন শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান আর আরেকজন শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ.। কবর দুটো দেখে আমি নিরব নিথর হয়ে গেলাম। আর আমার অন্তরের অবস্থা এমন হলো যে আমি যেন এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি। ওই জায়গায় নিজ অন্তরের প্রশান্তি, বরকত আর অন্তরের ওই আন্দোলিত অবস্থা আমি আজ পর্যন্ত অনুভব করতে পারি। তারাও দোয়া করলেন এবং হযরত সুফী সাহেব তো প্রায় আমার কোলেই বসে পড়েছিলেন।

আমি এমনিতেও আমার জন্য সম্মানের মনে করি যে পাকিস্তানে যখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইতিহাস সংকলনের কাজ চলছিল, তখন আমাদের একজন সংকলক ছিলেন। পারভীন রোজিনা সাহেবা। জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের ইতিহাস সংকলনের পান্ডুলিপি তার দায়িত্বে অর্পণ করা করা হয়। তিনি হযরত মাওলানা সায়্যিদ হামীদ মিয়া সাহেবের সাথে যোগাযোগ করেন। আর হযরত হামীদ সাহেব এ ব্যাপারে আমার আগ্রহ সম্পর্কে জানতেন। উনি তখন মুহতারমাহ পারভীনকে আমার কাছে পাঠিয়ে আমার কথা বলে বলেন যে, এ লোক আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য দিবেন এবং তার বিশ্লেষণও করে দিবেন। এটাকে আমি আমার পরকালীন মুক্তির জন্য যাবতীয় কাজের একটা অংশ মনে করি।

পারভীন রোজিনা সাহেবা আমার কাছে আসলেন এবং আমার সাথে তিনি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতেন এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের উপর তিনি যে নথি তৈরি করেছিলেন সেটা তৈরীতেও সাহায্য করেছি। এখানে ছাত্রদের সমস্যাও আছে আবার সুবিধাও আছে। আমারও এই সমস্যা ছিল যে খিলাফতে উসমানিয়া কীভাবে সঠিক খেলাফত হয়? খেলাফত পাওয়ার জন্য তো কুরাইশ বংশীয় হওয়া শর্ত। এটার উপর জমহুর ওলামাদের যুগ যুগ ধরে ‘ইজমা’ হয়ে এসেছে। আমার জানা মতে তুর্কিরা তাতারী এবং হালাকু খানের বংশধর। তারা খলিফা কীভাবে হয়ে গেলো। আমি সন্তোষ হতে পারছিলাম না। অনেকভাবে এই ব্যাপারে সমাধানের জন্য চেষ্টা করতে থাকলাম।

যখন আমার কোনো বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয় সেটার সমাধান না করা অবধি তার পিছু ছাড়ি না। অনেক কিছুই এ ব্যাপারে জানছিলাম কিন্তু তৃপ্ত হতে পারছিলাম না। তখন মাদানী রহ. এর একটা বয়ান সংকলনে এ ব্যাপারে কিছু আলোচনা ছিলো। সেটা পড়া শুরু করলাম। ওইটা পড়ে আমার যাবতীয় সংশয় দূর হলো। এবং আমি মাদানী রহ. এর উত্তরে সন্তোষ হলাম আর আমার মতকে পাল্টে ফেললাম।

বাংলাদেশে একবারই যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। আমার জানা ছিলো যে হযরত মাদানী রহ. রমজানে সিলেটে ইতিকাফে বসতেন। ওনার মারকাযও ছিলো। মাল্টার কারাগার থেকে বের হয়ে তিনি ওখানেই সময় দিতেন। ওখানেই থেকে তিনি নিজের মারকায প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দারুল উলূম দেওবন্দের সমস্যার কারণে তাঁর দেওবন্দ আসতে হলো। আমি সিলেটে গিয়ে হুজুরের ইতিকাফ করার মসজিদ খুঁজে বের করলাম। সেখানে একটা মাদরাসা ছিলো হুজুরের নামেই ‘দারুল উলূম হুসাইনিয়া’। মাদরাসার লাইব্রেরীতে একটা কিতাব পেলাম। হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. কর্তৃক করা একটি কিতাব ”নেসাবে তা’লীম”। ওই কিতাব হাতে পেয়ে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। যে কাজ আমরা এখন করার চেষ্টা করছি তিনি ১০০ বছর আগেই তা করে রেখেছেন।

যখন ‘নেসাবে তা’লীম’ বইটা আমি মাদরাসার মুহতামীমের কাছে চাইলাম তখন তিনি বললেন, এই কিতাব তো দেয়া যাবে না। ওই সময় ফটোকপি করার মেশিনও খুব প্রচলিত ছিলো না। তারপরও আমি বললাম, তাহলে একটা ফটোকপিই দিয়ে দিন। তিনি বললেন, পাঠিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ। আমি তাকে বললাম, না। আমি নিয়েই যাবো ইনশাআল্লাহ। পরবর্তীতে তিনি আমাকে ফটোকপি করে এনে দিয়েছেন। সেটা এখনো আমার কাছে আছে। সেটা নিয়ে আমি এখানেও (পাকিস্তানে) কাজ করছি। এটা নিয়ে বিস্তরভাবে হিম্মত নিয়ে কাজ করার ফলে সেটা এখন আলহামদুলিল্লাহ পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

আমি শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী সম্পর্কে কিছু ব্যক্তিগত মতামত আলোচনা করেছি। আমি আমার তাঁর প্রতি ভক্তি এবং ভালোবাসা বলে বোঝাতে পারবো না। শুধু মুখে বলা ছাড়া। আর এই ভক্তিই এই জীবনে আশা এবং পরকালে সহায়। ওইসব বুজুর্গদের ছত্রছায়া আর চাদরের নিচে যেন আমরা পার হতে পারি। এছাড়া তো আমাদের তেমন কিছুই নেই।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের নাজাত দিন। দুনিয়াতে তাদের জীবনের নেক কাজের বরকত যেমন নিচ্ছি আখেরাতেও যেন আল্লাহ তাদের সুহবত আমাদের নসীব করেন।

উর্দু থেকে ভাষান্তরে: তামিম আব্দুল্লাহ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *