দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাস শেষ হবে ২৩ বছরেই

দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাস শেষ হবে ২৩ বছরেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪১২ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর বিভিন্ন কূপ থেকে উৎপাদন হয় ২৭৯ কোটি ঘনফুট। ফলে ঘাটতি থাকছে প্রায় ১৩২ কোটি ঘনফুট। ২০৪১ সাল নাগাদ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৬৭৮ কোটি ঘনফুটে। তবে এর মধ্যে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে, এখন যেসব কূপ থেকে উৎপাদন হচ্ছে সেগুলোর মজুদ ফুরিয়ে যাবে। অর্থাৎ ওই সময় দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদন শূন্যতে দাঁড়াবে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির যৌক্তিকতা নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) দেয়া এক প্রতিবেদনে এই চিত্র ও পূর্বাভাস তুলে ধরেছে পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলা ওই প্রতিবেদনে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজি ও দেশীয় গ্যাসের গড় মূল্যহার ১২ টাকা ৯৫ পয়সা করার প্রস্তাব করে। যদিও বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় মূল্য ৭ টাকা ৩৯ পয়সা। এ দিকে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজি সরবরাহ বাবদ ৪০ পয়সা সঞ্চালন মাসুল বৃদ্ধির দাবি করেছে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। পেট্রোবাংলাও বিতরণ মাসুল বাবদ ৮৮ পয়সা বৃদ্ধির প্রস্তাব করে।

পেট্রোবাংলার এই প্রাক্কলন-পূর্বাভাস সম্পর্কে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ তাদের সমুদ্রসীমা থেকে গ্যাস আহরণ করে বিদেশে রফতানি করছে। অথচ মূল ভূখন্ডের সমান একটি সমুদ্রসীমা ফেলে রেখে আমরা ব্যয়বহুল গ্যাস আমদানি করছি। দেশের অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল ও নতজানু করে দিয়ে কিছু মানুষকে ব্যবসার সুযোগ করার জন্য এই এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এটা খুবই হতাশাজনক। তিনি বলেন, বর্তমানে ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে প্রতি ঘনমিটার দাম ৫ টাকা ৩২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৩ টাকা করার প্রস্তাব এসেছে। ভবিষ্যতে যখন চাহিদা আরও বাড়বে, তখন যদিও আরও আমদানি হয় ওই গ্যাসের দাম কত হবে সেই প্রাক্কলন কি পেট্রোবাংলা করতে পারবে?

মূল্যবৃদ্ধি না করেই এলএনজি মিশ্রিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেয়া সম্ভব বলে মনে করে ভোক্তা প্রতিনিধি সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। একইসাথে এলএনজি আমদানি একটি ভুল সিদ্ধান্ত বলেও মত দেন তারা।

ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, আমাদের হিসেবে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ভোক্তাপর্যায়ে এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের মূল্যহার হবে ৯ টাকা ৯ পয়সা। বিদ্যমান মূল্য ৭ টাকা ৩৯ পয়সা। ফলে ঘটতি থাকে ঘনমিটার প্রতি ১ টাকা ৭১ পয়সা বা ৫ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। এই ঘাটতি তিতাসের সিস্টেম লস মূল্যহারে সমন্বয় না করে, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল বাতিল করে, গ্যাসের উপর এসডি-ভ্যাট নেয়া বন্ধ, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের অর্থ ভর্তুকি হিসেবে বিনিয়োগ এবং সরকারের ডিভিডেন্ড থেকে অর্থ নিয়ে এই ঘাটতি সমন্বয় করা সম্ভব। ফলে এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *