পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দেশে প্রথমবারের মতো কভয়ংকর মাদক ডিওবি (ডাইমেথ অক্সি ব্রোমোঅ্যামফেটামাইন) জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ডিওবি সেবন করলে তার বৈপ্লবিক চিন্তাভাবনা জাগ্রত হয়। এর মাধ্যমে পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে চায় সেবনকারী।
ডার্কওয়েবের মাধ্যমে বিটকয়েন দিয়ে মূল্য পরিশোধ করে পোল্যান্ড থেকে এসব মাদক আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) তেজগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তরের কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল, খুলনায় একজনের কাছে এলএসডি রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে খুলনায় অভিযান চালায় সংস্থাটির কর্মকর্তারা। একজনের কাছে কিছু এলএসডি উদ্ধারের পর অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে ডিওবির তথ্য মেলে।
ওই মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত দুজনকে সোমবার খুলনার বয়রা মুজগন্নী এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
তারা হলেন, আসিফ আহমেদ শুভ ও তার বন্ধু অর্ণব কুমার শর্মা। এছাড়াও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের খুলনা বয়রা বাজার শাখার ম্যানেজার মামুনুর রশীদকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯০টি ডিওবি স্ট্রিপ ও ৫টি এলএসডি স্ট্রিপ জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা। এতে নেতৃত্ব দেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান।
সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মাদকসেবীদের কাছে প্রতি ব্লট (পিস) ডিওবি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এটা সেবনে তৃতীয় নয়ন খুলে যায় বলে দাবি মাদকসেবীদের।
সংবাদ সম্মেলনে মো. ফজলুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া একটি কী ওয়ার্ডের ‘syash’ মাধ্যমে অনুসন্ধানে নেমে জানতে পারেন দেশে একটি নতুন মাদক প্রবেশ করছে। এই মাদকের চালান ধরতে গত আগস্ট থেকে ডিএনসির কর্মকর্তারা অনুসন্ধানে নামেন। অনুসন্ধান চলাকালে তারা আইসসহ কয়েকটি চক্রকেও গ্রেপ্তার করেন। পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কর্মকর্তারা এলএসডি ও ডিওবি বিক্রির করা এই চক্রটির সন্ধান পান।
অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান আরও বলেন, সন্ধান পাওয়া চক্রটির কাছ থেকে ক্রেতা সেজে এলএসডি কেনেন ডিএনসির কর্মকর্তারা। গত ২১ নভেম্বর সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের এলিফ্যান্ট রোড শাখায় এই এলএসডি এলে সেগুলো জব্দ করেন এবং সেখান থেকেই মূল হোতার ঠিকানা পান। পরে গত সোমবার ঢাকা থেকে খুলনা গিয়ে অভিযান চালিয়ে মো. আফিস আহম্মেদ শুভকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসির আভিযানিক দল।
গ্রেপ্তার শুভকে জিজ্ঞাসাবাদে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, তার বন্ধু অর্ণব কুমার শর্মার বাসায় বিপুল পরিমাণ ভয়ংকর মাদক ডিওবি রয়েছে। তার দেয়া তথ্যমতে বাসায় অভিযান চালিয়ে ৯০টি ডিওবি স্ট্রিপ জব্দ করা হয় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দুইজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের বয়রা শাখার ম্যানেজার মো. মামুনুর রশীদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কিভাবে এই মাদক ক্রেতাদের কাছে পাঠানো হতো জানতে চাইলে অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের বয়রা শাখার ম্যানেজার মো. মামুনুর রশীদদের সহায়তায় তথ্য গোপন করে এসব ভয়ংকর মাদক ঢাকায় পাঠাতো শুভ ও অর্ণব।
গ্রেপ্তার শুভ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ডার্কওয়েবের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি (বিট কয়েন) ব্যবহার করে পোল্যান্ড থেকে ১০০টি ডিওবি কেনেন তিনি। এসব মাদক পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসে। পরে তারা ১০টি স্ট্রিপ বিক্রিও করেন।
ডিওবি সেবন করলে তার বৈপ্লবিক চিন্তাভাবনা জাগ্রত হয় এবং এর মাধ্যমে পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে চান সেবনকারী। ডিওবি সেবন করার পর সেবনকারীকে যেকোনোভাবে প্রভাবিত করা যায়। ফলে সেবনকারী নির্দেশিত কাজ করতে উদ্যমী হয়ে ওঠে। এরজন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করতে হয়। বেশি পরিমাণে সেবন করলে মৃত্যু ঘটতে পারে বলেও জানান অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান।