পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : কান্নাই একমাত্র দোয়ার ভাষা দাবি করে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, জাতীয় শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, সাইয়্যিদ আসয়াদ মাদানী রহ.এর খলীফা শাইখুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন বলেছেন, দোয়া সমস্ত ইবাদতের মূল, কিন্তু দোয়ার কোন ভাষা নেই, একমাত্র কান্নাই দোয়ার ভাষা। দেয়ার করার সময় শিশুর মত কাঁদবে। যা কিচ্ছু চাওয়ার কেঁদেকেঁদে আল্লাহর কাছে চাইবে। অবশ্যই আল্লাহ তোমার দোয়া কবুল করবেন।
৭ অক্টোবর রোববার রাত ৮টার সময় কুচিয়া মোড়া কলেজ মাঠ মুন্সিগঞ্জে আলেম-জনতা ঐক্য গড়ার আহ্বানে, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি বিরুদ্ধে দেশব্যাপি ঐতিহাসিক পথযাত্রার জনসভায় দোয়া করার আগ মুহুর্তে তিনি এসব কথা বলেন।
দোয়াতে আল্লামা মাসঊদ যখন, ইয়া রব, ইয়া রব, মালিক, ও মালিক, ক্ষমা করো, রহম করো, কবুল করে নাও, কবুল করে নাও বলে বলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন, তখন জনসভায় উপস্থিত হাজার হাজার মানুষগুলোর আর্তচিৎকারে মেতে উঠেছিল মুন্সিগঞ্জের আকাশ-বাতাস।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের মাদক সমস্ত গুনাহের মূল উল্লেখ করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, ইসলাম ধর্মে নেশা ও মাদক সম্পূর্ণ হারাম, পাশাপাশি নেশা ও মাদক মানব-সভ্যতার চরম শত্রু। মাদকের বিষাক্ত ছোবল আমাদের যুবসমাজকে আক্রান্ত করে ফেলেছে। এদেশের যুবকেরা ধর্মপ্রেমী। ইসলাম, ধর্ম ও দ্বীনের প্রতি এতো টান অন্যান্য দেশের যুবকদের মাঝে কমই দেখা যায়। কিন্তু পরিকল্পিত ভাবে কিছু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের দেশের উন্নতি সহ্য করতে না পেরে আমাদের যুব সমাজকে মদও নেশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকাসক্ত করে আমাদের যুব শক্তি নষ্ট করার পায়তারা করছে।
একা সরকারের পক্ষ মাদকমুক্ত সমাজগঠন করা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ক্রসফায়ার ও সারাদেশে পুলিশ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে ফেললেও মাদক মুক্ত সমাজ গঠন করা যাবে না। মাদকমুক্ত সমাজ গঠন করতে হলে আগে মানুষের হৃদয় থেকে মাদকের চাহিদা নষ্ট করতে হবে। আর মাদকের চাহিদা নষ্ট হয় অন্তর পয়দা করার দ্বারা। জাহিলী যুগে আরবে লোকেরা সবচেয়ে বেশি মাদকাসক্তিতে আসক্ত ছিল। এমন কি ইসলামের শুরুতে মদ-নেশা জায়েয ছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষ অন্তর পয়দা করেছিলেন, তাই মদ হারাম হওয়ার সাথে সাথে সবাই মাদক ছেড়ে দিয়েছে। একমাত্র উলামায়ে কেরামই পারেন যুবসমাজের অন্তর পয়দা করে মাদকের চাহিদা নষ্ট করে দিতে।
বাতাস বিষাক্ত হয়ে গেছে মানুষের পাপাচারে মন্তব্য করে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন বলেন, বাতাস বিষাক্ত হয়ে গেছে আল্লাহর নাফরমানিতে, চারপাশে মিথ্যার সয়লাবে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়িছে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি গন্ধ। এখন বাতাসকে আমাদের ভারী করতে হবে আল্লাহর আওয়াজে, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে।
দুর্নীতি দেশের উন্নতি নষ্ট করে দেয় মন্তব্য করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি। সমাজের সর্বত্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এদেশের এই উন্নয়নের ধারা আকড়ে রাখতে হলে আমাদেরকে দুর্নীতি বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজটা উঠাতে হবে, যাতে করে মানুষ সচেতন হতে পারে।
তাবলীগ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জমিয়তে উলামা হিন্দের চেয়ারম্যান বলেন, তাবলীগের মাধ্যমে সারাবিশ্বে সুন্দর একটা দাওয়াতি কাজ চলছিল। তাবলীগের সাথীরা পৃথিবীর সর্বত্রে দ্বীনের প্রচার-প্রসার করছিল। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, এই তাবলীগের মধ্যেও বিভক্তি সৃষ্টি হয়ে গেছে। অথচ রাসূল সা. আমাদের মাঝে কোন বিভক্তি রেখে যাননি, আর ইসলাম ও বিভাজনকে পছন্দ করে না। আমরা এই পথযাত্রার মাধ্যমে দেশব্যাপি এই কথা জানিয়ে দিতে চাই- ‘আমাদের মধ্যে কোন বিভক্তি নেই, আমাদের সবার একটাই পরিচয়। আমরা উম্মত।
এসময় জনসভায় উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা হোসাইন আহমদ, মাওলানা আব্দুর রহীম কাসেমী, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাইফী, মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী, মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকী, মুফতি তাজুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা সদরুদ্দিন মাকনুন, মাওলানা আইয়ুব আনসারী, মাওলানা আব্দুল আলীম ফরীদী, মাওলানা সাঈদ নিজামী, মাওলানা শুয়াইব আহমদ, মাওলানা মাসঊদুল কাদির, মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ মাসঊদ, মাওলানা জিয়া বিন কাসেম, মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ, মাওলানা রুহুল আমীন, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন, মাওলানা ওয়াহীদুজ্জামান, মাওলানা আব্দুর রহীম তালুকদার, মাওলানা সারওয়ার আলম ভূইয়া প্রমুখ।