নতুন বাজারে বাড়ছে পোশাক রফতানি

নতুন বাজারে বাড়ছে পোশাক রফতানি

নতুন বাজারের মধ্যে পোশাক রফতানিতে শীর্ষে জাপান, দ্বিতীয় অবস্থানে অস্ট্রেলিয়া

 ৯ মাসে আয় ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৯.১১ শতাংশ বেশি

এরমধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে আয় ১ হাজার ১৩২ কোটি ১১ লাখ ডলার, ওভেন পোশাক রফতানিতে আয় ১ হাজার ১৫১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : তৈরি পোশাকের উপর ভর করে দেশের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই এই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এর পাশাপাশি নতুন বাজারেও তৈরি পোশাক রফতানি বাড়ার প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশের সার্বিক রফতানি আয় বেড়েছে ৬.৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। অর্থবছর শেষে তৈরি পোশাকের রফতানি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন রফতানিকারকরা।

বিজিএমইএ ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বড় ধসের পর অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ- প্রতি মাসেই বেড়েছে রফতানি আয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ২৯ শতাংশ, আগস্টে রফতানি আয় বাড়ে ১০.৭১ শতাংশ। এই দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ১৪ শতাংশ; লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। সেপ্টেম্বর শেষে সেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে নেমে আসে, লক্ষ্যমাত্রাও হোঁচট খায়। তবে এর পর থেকে ক্রমান্বয়ে রফতানি আয় বাড়তে থাকে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৪৪ লাখ (২২.৮২ বিলিয়ন) ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯.১১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে ১ হাজার ১৩২ কোটি ১১ লাখ ডলার এবং ওভেন পোশাক রফতানিতে ১ হাজার ১৫১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার আয় হয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই-জানুয়ারি সময়ে মোট রফতানি আয়ের মধ্যে ৮৩.১৮ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৩.০৩ শতাংশ। এই নয় মাসে নিট খাতে রফতানি বেড়েছে ১১.৬১ শতাংশ। আর ওভেনে বেড়েছে ৬.৭৫ শতাংশ।

বিজিএমইএ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি নতুন বাজারে পোশাক রফতানি হয়েছে ২৫৬ কোটি ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ২৪৭ কোটি ডলার। এই হিসাবে আলোচ্য সময়ে রফতানি বেড়েছে ৯ কোটি ডলার বা ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। নতুন বাজারের মধ্যে পোশাক রফতানিতে শীর্ষে রয়েছে জাপান। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যে নানা বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। এ ছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকায় নিয়মিত বা পুরনো বাজারের পাশাপাশি নতুন বাজারে দেশের পোশাক রফতানি বাড়ছে। তবে এসব বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে। সরকারসহ সবার সহযোগিতা পাওয়া গেলে রফতানি আরো বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।

ইপিবির তথ্যমতে, ২০০৮ সালে নতুন বাজারে রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৮০ কোটি ডলার। সেই রফতানি বেড়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হয়েছে ৩৯০ কোটি ডলার।

বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনের কারণে আমরা পুরনো বাজারের পাশাপাশি নতুন বাজারে স্থান করে নিচ্ছি। রাশিয়া, জাপানসহ কয়েকটি বাজারে পোশাক রফতানি বাড়ছে। তিনি বলেন, মূলত এসব বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকায় রফতানি বাড়ছে। তবে নতুন এসব বাজারে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলো অতিক্রম করেই আমরা বাজার বৃদ্ধি করছি। আশা করি ভবিষ্যতে বাজার সমপ্রসারণে সরকার থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যাবে। নতুন বাজারসহ সার্বিকভাবেও পোশাক রফতানি বাড়ছে।

জানা গেছে, সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডাÑ এসব দেশে বাংলাদেশ নিয়মিত পোশাক রফতানি করে থাকে। এসব দেশের বাইরের দেশগুলোকে নতুন বা অপ্রচলিত বাজার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেমন- ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, ব্রাজিল, চিলি, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি। পোশাক রফতানির বিপরীতে সরকারের আর্থিক প্রণোদনা, উৎপাদনকারীদের নতুন নতুন বাজার খেঁজা, বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর খুচরা বিক্রি বাড়ানো ও উঠতি বাজারগুলোতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়াসহ কয়েকটি কারণে এসব বাজারে রফতানি বেড়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ বর্তমানে চীন, জাপান ও ভারতে পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। ফলে এসব বাজারে বেশ রফতানি বাড়ছে। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশ পোশাক রফতানিতে আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে আসছে। তবে জাপানে পোশাক রফতানি বাড়ছে খুব দ্রুত। চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে দেশটিতে রফতানি হয়েছে ৪৪৬ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ রফতানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১.৯৪ শতাংশ। বছর শেষে এই রফতানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ২০১১ সালে চীনে বাংলাদেশের ৫ হাজার পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছিল দেশটি। যার অধিকাংশই হচ্ছে পোশাক খাতের।

বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু মনে করেন, আগামী জুন পর্যন্ত (চলতি অর্থবছর) রফতানি আয় বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছর শেষে সামগ্রিক রফতানিতে মনে হয় ৬/৭ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *