পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: চৈতন্য, আদর্শ ও মহানুভবতায় ইকরা বরাবরই ছিলো নান্দনিক। প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোগত আড়ম্বরতার খরাও যেনো কেটে গেলো এবার। নান্দনিকতার ছোয়াঁ লাগলো এবার এর কংক্রিটের অবয়বেও। আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও জামিআ ইকরা বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আজ (শুক্রবার) শুভ সূচনা হলো জামিআ ইকরা বাংলাদেশের পাঁচতলা বিশিষ্ট আধুনিক আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের নতুন নান্দনিক ভবনের।
জামিআ ইকরা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও শাইখুল জামিআ আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দামাত বারাকাতুহুম ও যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও ইকরা টিভির চেয়ারম্যান ইমাম কাসেম আহমাদ রশিদ আজ জুমআর পরে নতুন ভবনটির উদ্বোধন করেন।
মাদরাসা ভবন বলতেই মানসপটে এতোদিন যেই অন্ধকার প্রকোষ্ঠের সংকীর্ণ ছবি ভেসে উঠতো ইকরার সুপ্রশস্ত আঙিনায় আলো বাতাসময় রৌদ্রস্নাত উন্মুক্ত আকাশের তলে নান্দনিক এই ভবন সেই ধারণা পুরোই পালটে দিবে। এর পেছনের গল্পের কারিগর জামিআ ইকরা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রশাসনিক মুহতামিম মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন হাফিজাহুল্লাহ। উদ্বোধনের পর তিনি পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন–
আমার কাছে এটি স্বপ্নের মতো লাগছে
‘আল্লাহ তাআলার অশেষ কৃপায় আমরা খুব দ্রুতই কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। আমার কাছে এটি স্বপ্নের মতো লাগছে। জামিআ ইকরার ছাত্ররা দীর্ঘদিন ধরে আবাসনের কষ্ট করে আসছে। রোদ বৃষ্টি ঝরে তাদের পড়াশোনা ও থাকা খাওয়ার মারাত্মক বিঘ্ন হতো। তাদের কষ্টের দিকে তাকিয়েই আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা. আমাকে এই কাজের দায়িত্ব দেন। আমি সামান্য চেষ্টা করেছি, আল্লাহ তাআলা এর পূর্ণতা দান করেন। আলহামদুলিল্লাহ। আল খায়ের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মহোদয়কে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, আরও শুকরিয়া জানাচ্ছি আল খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জনাব সজিব ভাইকে। বিল্ডিংটির কনস্ট্রাকশনের কাজ সম্পাদন করেছে আল নূর স্টিল। এর চেয়ারম্যান জনাব আবূ বকর ভাইকেও আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
নতুন এই ভবনটি মোট পাঁচতলা বিশিষ্ট। নীচ তলায় হবে অন্ধদের কুরআন হিফজ ও পুনর্বাসনের জন্য ‘আল খায়ের ব্লাইন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’। ২য় তলায় শাইখুল জামিআর কার্যালয় ও অতিথিশালা। বাকি তলাগুলো ছাত্রাবাস ও শ্রেণীকক্ষ হিসেবে ব্যাবহৃত হবে।
উদ্বোধনের সময়, নতুন ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে জামিআ ইকরা বাংলাদেশের শীক্ষার্থীদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের রেখা। নতুন ভবনের উদ্বোধনের খবর শুনে জামিআ ইকরার ফাযেল মাওলানা ইসহাক আবেগাপ্লুত স্বরে পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন–
‘আজ থেকে ১৩ বছর আগে যখন ইকরায় আসি তখন একতলা ভবন ছিলো। চালা ছিলো টিনের তৈরী। বৃষ্টির পানি পরতো ঝরঝরিয়ে। দুপুরের তীব্র রোদের তাপদাহে রুমে থাকা অসহনীয় হয়ে পড়তো। সেদিন রঈসুল জামিআ শাইখ আরিফ উদ্দীন মারুফ হাফিজাহুল্লাহ আমাদের বলেছিলেন– ‘তোমাদের এই কষ্টের দিন শেষ হবে, আধুনিক স্থাপনায় ইকরা একদিন বহুতল বিশিষ্ট হবে’। শায়েখের দেখানো সেদিনের স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হলো। উস্তায সদরুদ্দীন মাকনুন হাফিজাহুল্লাহ এর ঐকান্তিক নিরলস প্রচেষ্টায় আজ ইকরা আক্ষরিক অর্থেই মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। আমরা হয়তো এর ফল ভোগ করতে পারবো না, কিন্তু অনুজরা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করতে পারবে এতেই আমরা খুশি।’
এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এরও উপস্থিত ছিলেন, ভারতের প্রখ্যাত আলেম ও মুফাসসির হযরত আনিস আযাদ বিলগ্রামী, জামিআ ইকরা বাংলাদেশের রঈস শাইখ আরিফ উদ্দীন মারুফ, আল নূর স্টিলের চেয়ারম্যান জনাব আবূ বকর সিদ্দীক সোহেল ও জামিআর অন্যান্য আসাতেযায়ে কেরাম। উপস্থিত ছিলেন এলাকার মুসল্লি ও শুভাকাঙ্ক্ষীগণও।
রমযানের পর আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই ভবনে ইকরার যাবতীয় কার্যক্রম আরম্ভ হবে বলে জানা যায়।