আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের ব্যস্ততম বাস টার্মিনালে সন্ত্রাসী আক্রমণের চেষ্টার অভিযোগে আটক আকায়েদ উল্লাহর কারণে ব্যাপক উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে বাংলাদেশি কম্যুনিটিতে। আটক হবার সময় আহত ঐ ব্যক্তিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশি অভিবাসী বলে উল্লেখ করেছে।
এছাড়া শহরটির মেয়র বিল দা ব্লাসিও বলেছেন, সন্ত্রাসীরা কিছুতেই জয়ী হবে না। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর শরীরে নি¤œ-প্রযুক্তি একটি বোমা বাধা অবস্থায় আকায়েদ উল্লাহকে আটক করা হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ একাধিক মার্কিন সংবাদ মাধ্যম পুলিশকে উদ্ধৃত করে বলছে, আকায়েদ উল্লাহ একজন বাংলাদেশি অভিবাসী এবং ব্রুকলিন এলাকার বাসিন্দা। এরপর থেকে সেখানকার বাংলাদেশি কম্যুনিটির মধ্যে উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়ে।
নিউ ইয়র্কে দীর্ঘদিন ধরে একটি তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাচ্ছেন এবং কমিউনিটিতে প্রভাবশালী ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিফ বলছিলেন, স্বাভাবিকভাবে পুরো কম্যুনিটির মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। যেসব জায়গায় বাংলাদেশিদের বেশি আনাগোনা, বিস্ফোরণের পর সেটি একেবারেই কমে গেছে। এমনকি যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে এবং নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা ভয় পাচ্ছে। যারা অবৈধ আনডকুমেন্টেড কিন্তু কাগজপত্রের জন্য অ্যাপ্লাই করেছে, তারা সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। সবার আশঙ্কা তাদের বৈধতার কাগজপত্র তৈরির পথে এ ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে। হানিফ আরো জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী নীতির মধ্যে এ ধরণের ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ তৈরি করে।
বাংলাদেশি কম্যুনিটির সকলেই একবাক্যে বলছেন, হামলাকারী বাংলাদেশি অভিবাসী হলেও সে কিছুতেই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। তার শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন কম্যুনিটির নেতৃবৃন্দ। হানিফ বলেছেন, ২০১৩ সালে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে হামলা চালিয়েছিল ২১ বছর বয়েসী একজন অভিবাসী বাংলাদেশি। তখনো সেখানকার বাংলাদেশিদের উদ্বেগে দিনপার করতে হয়েছে।
এদিকে, ম্যানহাটনে টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে বাস স্টেশনে যাতায়াতের ভূগর্ভস্থ পথে বোমা হামলার অভিযোগে আটক করা বাংলাদেশের নাগরিক আকায়েদ উল্লাহর পরিবারকে খুঁজছে বাংলাদেশ পুলিশ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
আকায়েদ উল্লাহর দেশের বাড়ি সন্দ্বীপের মুছাপুরে। বাবার নাম সানাউল্লাহ মিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে তিনি ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় থাকতেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে তার পরিচিত কাউকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।
মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল খায়ের নাদিম জানান, পুলিশ তার পরিবারকে খুঁজছে। এখন পর্যন্ত কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
রয়টার্সকে বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে আকায়েদ উল্লাহর সম্পর্ক ছিল না। তিনি গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে এসেছিলেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামিম আহসান বলেন, আকায়েদ উল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনে থাকতেন। তার সঙ্গে তার মা, বোন ও দুই ভাই থাকেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড পেয়েছেন।
মঙ্গলবার আকায়েদ উল্লাহর এক আত্মীয়কে শনাক্ত করে রয়টার্স। আহমেদ উল্লাহ নামের ওই ব্যক্তি জানান, আকায়েদ উল্লাহর বাবা পাঁচ বছর আগে মারা যান। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে আকায়েদ উল্লাহ সাধারণ সরকারি স্কুলে লেখাপড়া করতেন।
নিউইয়র্কের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, কর্মস্থলে বিস্ফোরকটি তৈরি করেছিলেন আকায়েদ উল্লাহ। প্রাথমিক তদন্তে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আকায়েদ এটি স্বীকার করেছেন। তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ হয়নি। আকায়েদ ইচ্ছে করেই নির্দিষ্ট স্থানে বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছেন।
তদন্তের সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেন, আকায়েদ উল্লাহ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক এস্টেটের প্রোপাগান্ডা দেখতেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গত সোমবার ম্যানহাটনে টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে বাস স্টেশনে যাতায়াতের ভূগর্ভস্থ পথে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনজন আহত হন। প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে আহত অবস্থায় বাংলাদেশি নাগরিক আকায়েদ উল্লাহকে আটক করে পুলিশ।