পর্ব-১
মুহাম্মাদ (সা.), সেই সে নাম
সীরাতুন নবী সা. এর সৌন্দর্য, জ্যোতি ও ব্যাপ্তি অন্তহীন। প্রেমাষ্পদ নবীজী সা. এর প্রতিটি পদবিক্ষেপ, আচরণ-উচ্চারণ, ওষ্ঠের মৃদু কম্পন সবকিছুই নূরপূর্ণ। তাঁর নাম, বংশকৌলিন্য, তাঁর শহর, তাঁর হেঁটে যাওয়া পথের বাঁক, মরু বিয়াবনে তাঁর উষ্ট্রীর খুড়ের ছাপ সব কিছুই চির দীপ্তিমান। নিরুপম সেই মহান মানুষটির জন্ম ও তিরোধানের মাস এই রবিউল আউয়াল।
মুমিন হৃদয় এই মাসে যেনো নবী বরকতে আপ্লুত থাকে, মননে অঙ্কিত থাকে তাঁর কল্পিত ছবি, সে লক্ষ্যে পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজন করেছে ধারাবাহিক সীরাত বিষয়ক আয়োজন— নিখিলের ধ্যানের ছবি।
সউদী আরবের প্রথিতযশা আলেম ও আরবী সাহিত্যিক ড. আঈদ আল ক্বরনী রচিত “মুহাম্মাদুন কা’আন্নাকা তারাহু” এর ভাবানুবাদ গ্রন্থ “নিখিলের ধ্যানের ছবি” থেকে চয়নকৃত এই লেখা পরম্পরা। অনুবাদ করেছেন, মুফতি আব্দুস সালাম ইবনু হাশিম।
.প্রিয় পাঠক, চলুন সিক্ত হই নবীজী সা. এর সীরাতের এক পশলা রূপোর মতো মেঘগলা বৃষ্টিতে…
মুহাম্মাদ; সেই সে নাম, অতুল বিভায় যে নাম জ্যোতির্ময়। আলোর উপর দ্যুতির শুভ্র দীপ্তি, মহত্ব-ঐশ্বর্যের অনির্বাণ এক দীপ, মনোহারিতার ললাটতটে এঁকে দেওয়া সে যেনো মহাজ্যোতির টিপ।
মুহাম্মাদ; যিনি স্বর্গের শুকতারা। নিরুপম, অপূর্ব, উচ্ছল, উদ্দীপ্ত এক স্বত্ত্বা। নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ প্রাণ এক। নবীধারার শেষ স্বর্গীয় ফুল। খোদার ঘনিষ্ঠতম। সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠতম। একাধিপতি। মানবকুলের প্রিয়তম, তাদের মনের অনুভবে, হৃদয়ের গহীনে মিশে থাকা নাম। একটুকরো রহমতের নৈবেদ্য হয়ে, নিবেদিত একখণ্ড নে‘আমত রূপে যিনি আবির্ভূত হয়েছেন এ ধরিত্রীতে।
বরকতস্নাত যিনি সর্বত্র। ঐশ্বী পরিচর্যার সযতন চাঁদোয়ায় ঘেরা যিনি সর্বময়, ভ্রমণে-নিভ্রমণে সম্ভ্রমের ছায়াবেষ্টিত। যিনি স্বভাবসুলভ প্রশংসিত; কারণ ওহীর আদলে সে স্বভাব গঠিত। প্রকৃতিগত তিনি উন্নত, কারণ নবুয়তের পেলব ছোঁয়ায় তা পরিশীলিত। আল্লাহু মাহমূদুন; চির শংসিত, রাসূল মুহাম্মাদুন; কত না প্রশংসিত!
তাঁর নাম আহমাদ, বিস্ময়ে স্বজাতির কাছে গেয়ে ওঠা নবী ঈসার স্তুতিময় প্রেমাষ্পদ। তিনি আকীব, শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী। তিনি হাশির, যার পদসম্মুখে উত্থীত হবে মনুষ্যকুল। তিনি মাহী, কুফরের বুকে কুঠারাঘাতকারী। তিনি নবীকুলের অগ্রদূত, রাসূলগণের নেতা, হাউজে কাউছারের তিনিই অধিকর্তা। ‘লিওয়াউল হামদ,’ স্তুতির ঝাণ্ডা মুষ্টিবদ্ধ থাকবে তাঁরই হাতে। তিনিই হবেন মাকামে মাহমূদের অধিকারী । ‘গুররাহ’ ‘তাহযীল’ ‘শুভ্রললাট’ ‘ধবল পদের’ তিনিই অধিপুরষ। তাওরাত-ইঞ্জিলে ঘটেছে যাঁর রূপের পূর্ণ চিত্রায়ণ, জিব্রীল আমীন কর্তৃক ঘটেছে যার রূপায়ণ।
তিনি বনু লুওয়াই এর মর্যাদার নিশানধারী। তিনিই বনু আবদে মানাফের বরেন্দ্রভূমির বড়ুয়া। প্রেমের কাব্যে উচ্চার্য যারা, তাদের সবচেয়ে যুগন্ধর চরিত্র তিনি। নগর ও পল্লিগাঁয়ের শ্রেষ্ঠতম। সর্বোৎকৃষ্ট সংস্কারক ও দিশারী তিনি। তিনিই মহামতি। উন্নত হৃদয়সম্পন্ন।
তাঁর ছিলো সাহস বিস্তৃত এক বক্ষপট। তাঁর নাম অতি উচ্চার্য অমৃত বাচন। সিদ্ধান্তগ্রহণে ছিলো তাঁর সুপক্বতা। কৃতার্থমনা খোদার দাস তিনি। সদা সাহায্য সুরক্ষিত। সব পঙ্কিলতার স্পর্শন থেকে অবমুক্ত। বরকতসিক্ত অনবরত। তাঁর অনুকম্পা সমুদ্রসমান, দানশীলতা বৃষ্টিবিন্দুর মত অঝোর, বদান্যতা জগদ্বিদিত। তাঁর উপর, তাঁর স্বজন ও নিকটজনের উপর ঝরুক শান্তির অবারিত ধারা। ঝরে যাক, যত রাত আকাশে জ্বলে মিটিমিটি তারা, মধুর সুরে গান গায় বিহগেরা, যতদিন বয়ে যায় ফুরফুরে হাওয়া, পথচলে যায় যতদিন পথিকেরা।
মূল: ড. আঈদ আল ক্বারনী
ভাবানুবাদ: আব্দুস সালাম ইবনু হাশিম
পরিচালক আত তুরাস একাডেমী ও ইমাম শাইবানী ফিকহ একাডেমী। সাবেক মুহাদ্দিস, জামিআ ইকরা বাংলাদেশ