নীরবতার মূল্য

নীরবতার মূল্য

  • ফাহমিদা মুন্নী 

যখন ওরা আফগানিস্তানকে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করেছিল, তখন আমি নীরব ছিলাম — কারণ, সেটাতো আমার দেশ ছিল না।

যখন ওরা ব্যাপক বিধ্বংসী মারনাস্ত্রের উছিলায় ইরাক আগ্রাসন করে, সেদেশের জনগণকে লাঞ্ছিত করেছিল, তারপর, দেশটাকে ধূলোর সাথে মিলিয়ে দিয়েছিল, তখনও আমি নীরব ছিলাম — কারণ, সেটাতো আমার দেশ ছিল না।

যখন সিরিয়ার স্বৈরাচারী শাসক সে দেশের জনগণকে নির্মম ভাবে হত্যা করছিল, তখনও আমি নীরব ছিলাম — কারণ, সেটাতো আমার দেশ ছিল না।

যখন ওরা যুগ যুগ ধরে কাশ্মিরের মুসলিমদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালাচ্ছিল, যখন গুজরাটে মায়ের পেট থেকে বের করে সদ্যজাত শিশুকে ওরা আগুনে নিক্ষেপ করেছিল, তখনও আমি নীরব ছিলাম — কারণ, সেটাতো আমার দেশ ছিল না।

যখন ওরা আরাকানের নিরীহ মুসলিমদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে, তাদের নারীদের ধর্ষণ করে, তাদের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করেছিল, তখনও আমি নীরব ছিলাম — কারণ, সেটাতো আমার দেশ ছিল না।

যখন ‍উঁইঘুরের মুসলিমদের উপর ওরা বর্বর নির্যাতন চালিয়েছিল, তাদের নূন্যতম ধর্মীয় স্বাধীনতাটুকু কেড়ে নিয়েছিল, তাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল, তখনও আমি নীরব ছিলাম — কারণ, সেটাতো আমার দেশ ছিল না।

যখন ওরা ফিলিস্তিনে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিল, সে দেশের জনগণের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে নিজভূমে তাদের পরবাসী করেছিল, তারপর, অত্যাধুনিক মারনাস্ত্রের আঘাতে তাদের মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল, তখনও আমি নীরব ছিলাম — কারণ, সেটাতো আমার দেশ ছিল না।

যখন ওরা ফ্রান্সে হিজাব-নিকাব নিষিদ্ধ করেছিল, তখন আমি মাথা ঘামাইনি — কারণ, সেটা আমার সমস্যা ছিল না।

যখন ওরা সুইডেনে কোরআন পুড়িয়ে দিয়েছিল, আমি তখনও মাথা ঘামাইনি — কারণ, আমার ব্যক্তিগত কোরআন খানা আমার ব্যক্তিগত সেলফে নিরাপদেই ছিল।

যখন আফিয়া সিদ্দিকীকে ওরা কারাগারে বছরের পর বছর ধর্ষণ করছিল, আমি তখনও নীরব ছিলাম — কারণ, আমার বোনটা তখন নিরাপদেই ছিল।

আমি ব্যস্ত ছিলাম জীবন উপভোগে। আমি ব্যস্ত ছিলাম নিত্যনতুন পসরা দিয়ে জীবনটাকে আরো সুন্দর করে সাজাতে। আমি ব্যস্ত ছিলাম ভোগে আর বিলাসে। জীবনটা ভালোই কাটছিল আমার আরামে আর আয়েশে। প্রতিবাদ করার সময় হয়নি আমার। প্রতিবাদ করার সাহসও হয়নি আমার – কি জানি, যদি পাছে লোকে কিছু বলে! আজ ঘুম ভাঙ্গলো আমার দরজায় প্রচন্ড কড়ানাড়ার শব্দে। ভাবলাম, এই ভোর সকালে কে এলো আমায় আগে থেকে না বলে!

দরজা খুলে দেখলাম – ওরা এসেছে, আমায় নিয়ে যেতে। চিৎকার করে বললাম, “শুনছো!! কেউ কি আছো তোমরা – আমাকে বাঁচাতে? চারিদিকের শুনশান নীরবতা শুধু জানিয়ে দিল- কেউ বেঁচে নেই আর আমার জন্য প্রতিবাদের ভাষায় মুখর হতে।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *