নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে সময় দেবে বিএনপি

নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে সময় দেবে বিএনপি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল সোমবার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন। গতকাল বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপির সাথে প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটা নির্দিষ্ট সময় লাগবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে। আমরা তাদেরকে সেই সময়টি অবশ্যই দিয়েছি। আমরা তাদের(অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের) সব বিষয়গুলোতে সমর্থন দিয়েছি।

জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এ বৈঠকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বাতিলের বিষয়ে মতামত নেয়া হয়েছে। দলগুলো শোক দিবস বাতিলের পক্ষে তাদের মতামত দিয়েছে
গতকাল বিকেল ৪টা থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দলগুলোর সাথে বৈঠক হয়েছে। বৈঠক সূত্রগুলো জানায়, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও এদিন ছুটি বাতিল করার বিষয়টি মূল আলোচ্যসূচি ছিল। তবে প্রসঙ্গক্রমে বিএনপিসহ কয়েকটি দল তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

বৈঠকে পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্য দলগুলো জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাদের সাথে প্রধান উপদেষ্টার কোনো আলোচনা হয়নি।
বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছে দলটি।

বিএনপির সাথে বৈঠকের পর জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদের দুই অংশ, গণতন্ত্র মঞ্চ ও এনডিএমসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। সব দলের সাথে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বাতিলের বিষয়ে মতামত নেয়া হয়। দলগুলো শোক দিবস বাতিলের পক্ষে মত দেন।

সরকারকে সময় দেবে বিএনপি : নির্বাচনের পরিবেশের জন্য সরকারকে সময় দেবে বিএনপি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে নির্বাচন নিয়ে আমরা কথা বলিনি। আমরা আগেও বলেছি আপনারা জানেন যে, একটা নির্দিষ্ট সময় লাগবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে। তাদেরকে সেই সময়টি আমরা অবশ্যই দিয়েছি। আমরা তাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের) সব বিষয়গুলোতে সমর্থন দিয়েছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলেছি যে, বর্তমানে দেশে যে অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তোলা হচ্ছে এগুলোতে জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হয় এবং জনগণ ঠিক পূর্বের মতোই সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে অক্ষুণ্ন রেখে, তাদের নিরাপত্তাকে অক্ষুণ্ন রেখে যেন সরকারকে সহায়তা করে। এ জন্য আমরাও পুরোপুরিভাবে তাদেরকে সেইভাবে সহায়তা করছি।

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, এই সরকারকে সহায়তা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের একমাত্র কর্তব্য। আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই মহলটি যারা বাংলাদেশের অধিকারহরণ করে নিয়েছিল তারা আবার বাইরে থেকে বিদেশ থেকে এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে অবস্থান নিয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশের যে বিজয় অর্জন হয়েছে জনগণের সেই বিজয়কে নস্যাৎ করার জন্য চক্রান্ত শুরু করেছে।

সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে তথাকথিত সংখ্যালঘুর ওপরে নির্যাতনের যে একটা গল্প ফাঁদা হয়েছে। সেই গল্পটা পুরোপুরিভাবে উদ্দেশ্যমূলক, বাংলাদেশ ও সরকারকে হেয় করা, ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করে দেয়ার আরেকটি চক্রান্ত।

এক ঘণ্টার এই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সাথে ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, এত হত্যা, এত নির্যাতন, এত নিপীড়ন, এত ছাত্রদের হত্যা করার পরও সেই দলটি (আওয়ামী লীগ) আবারো তারা বিভিন্ন রকমভাবে কথা বলছে, যা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে। আমরা মনে করি সরকারের এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। আমরা মনে করি, সরকার অবশ্যই রাজনৈতিক দলের সাথে কথা বলবে। কিন্তু হত্যাকারীর সাথে যারা ছাত্রদের হত্যা করেছে, যারা শিশুদের হত্যা করেছে, যারা রাজনৈতিক নেতাদেরকে হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণ আছে এবং এই ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে গেলে আমরা সরকারকে অবশ্যই সমর্থন দেবো। এরপর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বৈঠকের বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানান নেতারা। এই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির করণীয় কী তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ওই দিনের ছুটি বাতিল করে। তবে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দিন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটি বাতিলকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

 

Related Articles