নির্বাচন কমিশন গঠনে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়

নির্বাচন কমিশন গঠনে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার স্বার্থে যুগান্তকারী রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির শীর্ষ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবে একটি কমিটি।

সেই কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন দেশের প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং লোকসভার বিরোধী দলের নেতা।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কে এম যোসেফের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) এই ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট রায় দিতে গিয়ে বলেছেন, সারা দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনারদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিন সদস্যের কমিটি নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবে। তার ভিত্তিতেই কমিশনারদের নিযুক্ত করবেন রাষ্ট্রপতি।

বিচারপতি কে এম যোসেফ, অজয় রাস্তোগি, অনিরুদ্ধ বসু, হৃষিকেশ রায় ও সি টি রবিকুমারের সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে জানিয়েছেন, স্বচ্ছতার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। আদালতের পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের প্রধান যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হন, নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্যকেও সেইভাবে নিয়োগ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী নেতা ও প্রধান বিচারপতির সুপারিশ মেনে রাষ্ট্রপতি সেই নিযুক্তি দেবেন।

এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নির্বাচন কমিশনারদের নিযুক্ত করেন রাষ্ট্রপতি। তাদের কার্যকালের মেয়াদ হয় ৬ বছর। সচরাচর দেশের প্রাক্তন আমলাদের এই পদে বেছে নেওয়া হয়। তবে এই মনোনয়ন নিয়ে বারে বারেই প্রশ্ন উঠেছে। কংগ্রেস কিংবা বিজেপি, বিভিন্ন আমলেই বিরোধী দলগুলি দাবি করেছে, সরকারের ঘনিষ্ঠ আমলাদের নির্বাচন কমিশনার করা হচ্ছে।

আপাতভাবে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন এবং স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও বহু বার তাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। শাসকদলের বেলায় নীরব আর বিরোধী দলগুলির ব্যবহারে অতিসক্রিয়—কমিশনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও উঠেছে। সম্প্রতি ‘প্রকৃত’ শিবসেনা হিসাবে কমিশন শিন্ডেসেনাকে স্বীকৃতি দেওয়ায় উদ্ধব ঠাকরের সমর্থকেরা কমিশনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তোলেন। উদ্ধব নিজে কমিশনকে শাসক দলের ‘দলদাস’ বলে কটাক্ষ করেন। এমন প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

এই রায়ের পর নির্বাচন কমিশন এক স্বাধীন সচিবালয় পাবে। স্বাধীনভাবে নিয়মনীতি তৈরি করতে পারবে। নিজেদের বাজেট স্বাধীনভাবে তৈরি করতে পারবে। তহবিলের জন্য সরকারের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। সরাসরি কেন্দ্রীয় ট্রেজারি থেকে টাকা তোলার ক্ষমতা পাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *