- মুহাম্মাদ আইয়ুব
ইন্নাস সফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআ’ইরিল্লাহ৷ নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্যতম।যে কয়টা পাহাড় মুসলিম উম্মাহর ভালোবাসায় সিক্ত তন্মধ্যে এই দুটি পাহাড় সবার ঊর্ধ্বে। জমজমে তৃপ্ত হয়ে এখন দুরুদুরু বুকে সাফা পাহাড়ে উঠছি সাঈ সম্পন্ন করব বলে। এখানে সবকিছু যে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। স্মৃতি হাতরে চার হাজার বছর পূর্বে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা চলল কতক্ষণ। কেমন ছিল তখন এই পবিত্র পাহাড় ভূমি?
সাদা পোশাকের জান্নাতি মিছিল এখানেও সরব। সারা বিশ্ব থেকে আল্লাহ পাগলরা ছুটে এসেছেন, সাঈ করছেন। আমরা সাঈ শুরু করব সাফা পাহাড় থেকে। পাহাড়ের কিছুটা নিদর্শন সৌদি সরকার অবশিষ্ট রেখেছে যেটা দেখা যায় কিন্তু ছোঁয়া যায় না। এখান থেকে কা’বা শরীফ দেখা যায় পূর্ণমাত্রায়। আমরা ভালোবাসার ঘরখানার দিকে মুখ করে দোয়া করলাম। আল্লাহর কাছে চাওয়া ও ভিক্ষায় যে ভালোলাগা ও তৃপ্তি তা এখানে সমানতালে টের পাওয়া যায়। গোনাহগারের দৃষ্টি, ধ্যানধারণা সবতো বস্তু কেন্দ্রিক। কিন্তু মনে হচ্ছে এখানে এখন সব আল্লাহ কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।
প্রথমে ঈমানের সাথে মৃত্যু চেয়েছি। আরো চেয়েছি যন্ত্রণা ছাড়া মৃত্যু। আবেদন করেছি আখেরাতের সব কষ্ট থেকে মুক্তি। জান্নাত চেয়েছি সবচেয়ে বড় ও সুন্দরটা। জান্নাতুল ফেরদৌস।
আবেগে অনেক কিছু চেয়ে ফেললাম আমার মেজবানের কাছে। আশ্চর্য! চোখ দিয়ে পানিও বের হচ্ছে। পাঠক! জানতে মনে চায় কি চাইলাম? যদি কোনদিন এখানে আল্লাহ আপনাকে আনেন তাহলে আপনিও চেতে পারেন এসব। প্রথমে ঈমানের সাথে মৃত্যু চেয়েছি। আরো চেয়েছি যন্ত্রণা ছাড়া মৃত্যু। আবেদন করেছি আখেরাতের সব কষ্ট থেকে মুক্তি। জান্নাত চেয়েছি সবচেয়ে বড় ও সুন্দরটা। জান্নাতুল ফেরদৌস।
প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ নিয়ে অনেক কিছু চেয়েছি মাওলার কাছে। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলছি ও কা’বার মালিক আমার মেজবান! কাদিয়ানীদের অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত করে দাও।
শুভ্র পোশাকের জান্নাতি বহরে নেমে পড়লাম মারওয়া অভিমুখে, সামান্য যেতেই সবুজ জায়গাটুকু। দৌঁড়ালাম আশা নিয়ে যদি মিলে যায় নবী জননী’র চাওয়া পাওয়া’র সাথে। সব দেশের সব মানুষ অভিন্ন এক স্বপ্ন ও আশায় দৌঁড়াচ্ছেন যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। হাজার হাজার বছর ধরে আল্লাহকে পাওয়ার মিছিলে এই যে প্রচেষ্টা সেখানে শামিল হতে পেরে নিজের জন্ম ও যৌবনের উপর ফখর হচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ !
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সবটুকু জায়গা, সমতল ভূমি, টাইলস বিছানো, জোয়ান মর্দ, পেটে পর্যাপ্ত আহার তারপর ও যাচ্ছেতাই দশা অথচ মহিলা হযরত হাজেরা আ. কেমনে দৌঁড়ালেন? হযরত ইবরাহীম আ. ও তাঁর পরিবার একটা বিস্ময় ও আবেগের নাম। অসম্ভব কে সম্ভব করাই ছিল তাদের কাজ। হযরত ইবরাহীম আ. ও তাঁর পরিবার সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতগুলো যেমন শিহরণ জাগায় তেমনি অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে আল্লাহর আদেশগুলোর কথা চিন্তা করে।
মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তা ও বোঝা মনে হয়, মাত্র একমাস রোযা রাখা খুব কষ্টকর লাগে। চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে কলজে ছিঁড়ে যায়। জীবনে মাত্র একবারই তো হজ ফরজ। অথচ হজের কথা শুনলেই দম আটকে আসে, এত্তোগুলো টাকা খরচ করব? অথচ পুরষ্কার আর ফল চাওয়ার সময় আমাদের দশা হল, আল্লাহ! জান্নাত দাও, সরাসরি জান্নাতুল ফেরদৌস। আল্লাহর সাথে কি বিষ্ময়কর মশকরা!
সাফা পাহাড় কিছুটা বড়সড় রাখা হলেও মারওয়া পাহাড়ের নিদর্শন মাটির সাথে কোনমতে মিশে আছে। সামান্য আলামত রাখা আছে। এখান থেকে কা’বা শরীফ দেখা যায় না। তারপর ও কা’বা শরীফের দিকে ফিরে কান্নার ভান ধরে দোয়া করলাম। আবার সাফা’র দিকে। সাত চক্কর শেষ হল মারওয়ায় এসে।
আসলে ওর পতনের মূল কারণ হচ্ছে অহংকার। যেজন্য দুনিয়া আখেরাত সব ধুলোয় মিশে জাহান্নামে উড়ছে।
ডানদিক দিয়ে বের হওয়া যায় তাই আমরা বের হলাম। আবু জাহলের বাড়ি না থাকলেও কুলাঙ্গারটার স্মৃতি ধরে রাখার আয়োজন করে রেখেছে সৌদি সরকার। আবু জাহলের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে সুবিশাল শৌচাগার। আধুনিক কালে যাকে আমরা বলি, টয়লেট। মরেও শান্তি হলো না পাপিষ্ঠের। কাফেরদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমি ভাবি আবু জাহলকে নিয়ে।
পৃথিবীতে যদি কপালপোড়াদের স্তর বিন্যাস করা হত তাহলে সুনিশ্চিতভাবে নরাধম আবু জাহল তার ভাই ফেরাউন, নমরূদকে দুই তিনে ঠেলে নিজে প্রথম স্থান দখল করে নিত। কারণ শয়তানিতে তার সবসময় উপরে থাকা চাই। আসলে ওর পতনের মূল কারণ হচ্ছে অহংকার। যেজন্য দুনিয়া আখেরাত সব ধুলোয় মিশে জাহান্নামে উড়ছে।
মাথা মুণ্ডণ করে ফেলব কিন্তু পরিবেশ ও ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। হাঁটতে হাঁটতে পা দু’টো ক্লান্ত। শেষমেষ আমাদের সাহায্য করল কুমিল্লার একটা ছেলে। দশ রিয়াল চেয়েছিল কিন্তু পবিত্র ভূমিতে গিয়েও দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া দরদামের স্বভাব, অভ্যেসটা ভুলি কেমনে? হেরেম শরিফের আঙিনায় দরদাম করে পাঁচ রিয়ালে থামলাম। ছেলেটা আমাদের “আবরাজ আস সফা”র ৩ তলায় নিয়ে গেল। বিশাল মার্কেট মাথা নষ্ট কায় কারবার। এক কোনে তিন চারটে সেলুন। তার পরিচিত একটায় নিয়ে গেল। পাকিস্তানিদের সেলুন। এ সেক্টরটাও মনে হয় ওদের দখলে। স্বভাবতই আমার চুল কামাবে পাকিস্তানী, শুরু হয়ে গেল কাজকর্ম। অবিশ্বাস্য গতিতে মাথা কামিয়ে ফেলল।
জীবনে এই প্রথম দ্রুততার সাথে চুল কাটালাম। পাওনা দিলাম এবং বাঙালি স্বভাবের অলংকার হিসেবে অতিরিক্ত একটা সালাম ও ধন্যবাদ দিয়ে আসলাম।
ক্রমশ…
লেখক, শিক্ষক ও মাদরাসা পরিচালক