নূর নবীজীর দেশে || পর্ব ০৯

নূর নবীজীর দেশে || পর্ব ০৯

  • মুহাম্মদ আয়ুব

মন চাচ্ছে খোদার ঘরের পাশে বায়তুল্লাহর আঙিনায় রাতটা কাটিয়ে দেই। কিন্তু ক্লান্তির সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছিনা। মানুষ আমি কত অসহায়। পানাহার, বিশ্রাম সবকিছুর প্রয়োজন। নইলে আমি অচল। অথচ ভিতরে কত অহংকার। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। পা দুটো বড্ড বেয়াড়া ও দুর্বল তাই এশার নামাজ শেষ করে হোটেলের দিকে পা বাড়ালাম।

আশ্চর্য! আমি মানুষ কত অসহায় দুর্বল অথচ গুনাহ করার সময় খুব দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিই। আল্লাহ খোদা সামনে থাকেনা । মানুষ হিসেবে এটা অবশ্যই কলঙ্কজনক অধ্যায়।


এখন কাছের হোটেলটাও অনেক দূরে সরে গেছে। হাঁটছি তো হাঁটছি কিন্তু দেখা পাচ্ছি না হোটেল নামক বিল্ডিংয়ের। অবশেষে হোটেলের গলির দেখা পেয়ে গেলাম। হোটেলে গিয়ে ধপাস করে বিছানায় পড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন কাজ ছিল না তখন।


আশ্চর্য! আমি মানুষ কত অসহায় দুর্বল অথচ গুনাহ করার সময় খুব দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিই। আল্লাহ খোদা সামনে থাকেনা । মানুষ হিসেবে এটা অবশ্যই কলঙ্কজনক অধ্যায়।

ক্ষুধায় পেট চো-চো নয় একশ কিঃমিঃ বেগে শো শো করছে। “হাল মিম মাঝিদ” , “হাল মিম মাঝিদ” রব উঠা দেখছি সময়ের ব্যাপার মাত্র।

আমাদের মুআল্লিম মুফতি আজমাল হুসাইন সাহেবের আরবযাত্রা বহুত পুরোনো। তাই হাজ্বী সাহেবানদের আরামের কথা মাথায় রেখে দেশ থেকে কাচা তরকারি, চাল, ডাল, গরুর গোস্ত, চিংড়ি মাছ ,ইলিশ মাছ ভুনা করে ফ্রিজিং করে নিয়েছিলেন। সাথে রাইস কুকার প্রেসার কুকার ইত্যাদি। আল্লাহর রহমতে কোনকিছুই নষ্ট হয়নি সবকিছু ছিল ভালো। দুই দেশের ইমিগ্রেশনে ও কেউ বিরক্ত করেনি। খেয়েদেয়ে খুব তৃপ্তি পেলাম ।


মন থেকে মুয়াল্লিম ও মুয়াল্লিমা সাহেবার জন্য দোয়া করলাম। (মজার বিষয় হচ্ছে উনারা আমার শশুর শাশুড়ী) তবে আমাকে একা নয়। তারা জামাই আদরে সবাইকে সমান রাখলেন কারণ আল্লাহর মেহমান বলে কথা। আল্লাহ পাক দুনিয়া ও আখেরাতে উনাদের জন্য সর্বোত্তম মেহমানদারির ব্যবস্থা করুন সাথে আমাদেরকে ও।

আর মুয়াল্লিম সাহেবানরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে আল্লাহর ঘরের মেহমানদের সেবা করবেন। ভেবে দেখুন, তাদের উসিলায় আপনি নূর নবীজীর দেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন সুতরাং দুনিয়া নয় আখেরাতের বিজনেসে মনোযোগী হওয়ায় হতে পারে চিরস্থায়ী শান্তির স্থায়িত্ব।


আসলে হুট করে বিদেশি খাবারের সাথে মানিয়ে নেওয়া খুব কঠিন । আর মক্কা শরীফে তো দম ফেলার ফুরসত নেই, ইবাদাতের মধ্যেই কাটাতে হয়। এর ভিতর খাবারটা রুচি ও স্বাস্থ্যসম্মত না হলে চলাফেরা শুধু কঠিন নয় বড্ড কঠিন। আর কাফেলায় যদি বয়ষ্ক ও নারীরা থাকে তাহলে তো তাদের স্বাস্থ্যের ও মারাত্মক অবনতি হয়। এসব বিবেচনায় শশুর মশাইয়ের এই বুদ্ধি আমাদের খুব আরাম দিয়েছে।

আমার জানা মতে মুয়াল্লিমগণ হাজী সাহেবদের খেদমতের কোন ত্রুটি করেন তথাপিও কাফেলায় অনেক কিসিমে’র মানুষ থাকেন; কারো মেজাজ চড়া, কেউ চাপা স্বভাবের আবার কেউ শারীরিকভাবে অসুস্থ, মেজাজে কেউ খিটখিটে।


এই সব মিলিয়ে পুরো কাফেলাকে পরিচালনা করা মুয়াল্লিমের পক্ষে খুবই কঠিন হয়। এর মধ্যে রুচির বৈচিত্র্য ও কারুন টাইপের কেউ যদি কাফেলায় থাকেন তাহলে মুয়াল্লিমের জীবন নরক। আল্লাহ পাক হেফাজত করুন। ইবাদত ও নৈকট্যের পবিত্র সফর তখন হয়ে যায় আল্লাহর রহমত থেকে দূরে ছিটকে পড়ার উপযুক্ত মাধ্যম। এজন্য দেশ থেকে আসার সময় মনটা বড় করে আসতে হবে,ক্ষমার মহৎ গুণ ভিতরে ধারণ করে নবীর দেশে আসতে হবে।
হজ্ব ও ওমরা মুয়াল্লিম ছাড়া আদায় করা সম্ভব নয়। একদিকে তারা আমাদের শিক্ষকতুল্য। সুতরাং ব্যবহারটা হওয়া চাই ক্ষমার চাদরে আবৃত।
আর মুয়াল্লিম সাহেবানরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে আল্লাহর ঘরের মেহমানদের সেবা করবেন। ভেবে দেখুন, তাদের উসিলায় আপনি নূর নবীজীর দেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন সুতরাং দুনিয়া নয় আখেরাতের বিজনেসে মনোযোগী হওয়ায় হতে পারে চিরস্থায়ী শান্তির স্থায়িত্ব।


সারাদিন কে কি ইবাদাত করলাম তার একটা হিসেবনিকেশ আমাদের আলোচনায় অবধারিতভাবে চলেই এলো। দাদাশশুর মাওলানা আলী আকবর সাহেব আমার উপর মনে হয় কিছুটা ক্ষিপ্ত সাথে অভিমানের সুর ও বাঁজছে কেন তাঁকে সঙ্গ দিইনি। ক্ষমা চেয়ে নিলাম। তবে মনে মনে বললাম, দাদু!এটা পাক জমিন মক্কা। যৌবনকালে আল্লাহ পাক এনেছেন ডানে বামে চলার সময় কই। যে যত পার খোদার রহমত লুফে নাও।

ক্রমশ…

লেখক, শিক্ষক ও মাদরাসা পরিচালক

Related Articles