নয় বছরেও শনাক্ত হয়নি বঙ্গবন্ধুর ৪ খুনির অবস্থান

নয় বছরেও শনাক্ত হয়নি বঙ্গবন্ধুর ৪ খুনির অবস্থান

পাথেয় ডেস্ক : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক ছয় আসামির মধ্যে চারজনের অবস্থান নয় বছরেও শনাক্ত হয়নি। বাকি দুজনের অবস্থান বিদেশে শনাক্ত হলেও তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে দন্ডাদেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে চলমান আলোচনায় এখনো কোনো সুফল আসেনি।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে ১৫ আগস্ট বুধবার জাতীয় শোক দিবস পালন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে। দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। এই হত্যাকান্ডে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ২০১০ সালে। বাকীদের একজন মারা গেছেন এবং ছয়জন পলাতক আছেন।

খুনিরা হলেন আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন। তাদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা আছে। এদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় এবং এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বলে নিশ্চিত রয়েছে ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। বাকিরা কোথায় আছে সেবিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা না থাকলেও সম্ভাব্য যে সব দেশে তাদের অবস্থানের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর সঙ্গে এনসিবি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।
স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে কাজ করছে বলে এনসিবির সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক মহিউল ইসলাম জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও এম রাশেদ চৌধুরীর অবস্থান নিশ্চিত হলেও তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এ মুহূর্তে নতুন কোনো তথ্য নেই। মহিউল সাংবাদিকদের বলেন, কিছুদিন আগে শোনা গিয়েছিল, রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় গেছে। কানাডার কাছে জানতে চাওয়া হলে তাদের দেশে রাশেদ নেই বলে জানিয়ে দেয়। এ কারণে আমরা নিশ্চিত যে রাশেদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় যাননি। ওই দুইজনকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে জোরালোভাবে যোগাযোগ চলছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দন্ডিত বাকি চার আসামির মধ্যে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ভারতে রয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। আব্দুর রশিদ ও শরিফুল হক ডালিম কখনো পাকিস্তান কখনো লিবিয়ায় অবস্থান করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। আব্দুল মাজেদ রয়েছে সেনেগালে।

এই চারজনের সবার অবস্থানই ‘সম্ভাব্য’ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এসব দেশের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ‘ক্লিয়ার’ কিছু বলছে না জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমদ (আর্টিলারি), বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার) ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি। আজিজ পাশা ২০০১ সালের মাঝামাঝি জিম্বাবুয়েতে মারা যান বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য। তারপর ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচারের পথও রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খোলে; মামলার পর বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর ফের শ্লথ হয়ে যায় মামলার গতি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দ-িত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *