পণ্য রপ্তানি কমেছে ১.২৫ শতাংশ, এনবিআরের হিসাব

পণ্য রপ্তানি কমেছে ১.২৫ শতাংশ, এনবিআরের হিসাব

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : হঠাৎ পণ্য রপ্তানির হিসাব ওলটপালট হয়ে গেছে। তাতে হিসাবে থাকা ২৩ বিলিয়ন (গত দুই অর্থবছরের ২০ মাসে ) ডলার উধাও হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে গত জুন মাসের রপ্তানির হিসাব এখনো প্রকাশ করেনি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। ফলে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনো মিলছে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য-পরিসংখ্যান ব্যবহার করে রপ্তানির হিসাব দিয়ে থাকে ইপিবি। এনবিআরের প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪৯৩ কোটি বা ৪৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৫৫১ কোটি ডলারের পণ্য। তার আগের ২০২১-২২ অর্থবছর ৪ হাজার ৯৫২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। তার মানে গত দুই অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি কমছে। যদিও ইপিবি রপ্তানির হিসাব অনেক বাড়িয়ে দেখিয়েছে। সংস্থাটির দাবি, তাদের তথ্যের উৎস এনবিআর।

ইপিবির রপ্তানি পরিসংখ্যান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে রপ্তানিকারকেরা সন্দেহ ও অভিযোগ করে আসছিলেন। দেশের লেনদেন ভারসাম্যে ট্রেড ক্রেডিট বেড়ে যাওয়ায় সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের শুরু থেকেই অনুসন্ধানে নামে বাংলাদেশ ব্যাংক। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর হঠাৎ গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকৃত রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করে। তাতে দেশের আর্থিক হিসাব ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্ত হয়ে গেছে। তবে নতুন করে ঘাটতিতে পড়েছে চলতি হিসাব।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এত দিন ইপিবির তথ্যের ভিত্তিতের রপ্তানির হিসাব করা হতো; কিন্তু সেই হিসাব অনুযায়ী দেশে রপ্তানি আয় আসছিল না। এ নিয়ে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাও প্রশ্ন তুলেছে। এরপর পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখা যায়, রপ্তানির হিসাবেই গরমিল রয়েছে। তাই রপ্তানি আয়ও কম এসেছে। এ কারণে এখন থেকে প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে রপ্তানির হিসাব করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ইপিবি একই রকম রপ্তানির তথ্য ব্যবহার করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত গত দুই অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস করে (অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত) মোট ২০ মাসের প্রকৃত রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ কম। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে ৩ হাজার ৬১৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

যদিও ইপিবির তথ্যানুযায়ী, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪ শতাংশ। তার আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি হয় ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ডলার। তখন প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশের বেশি।

এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩ হাজার ৬৭৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এই রপ্তানি আরও কম। তার মানে এনবিআরের প্রাথমিক তথ্যও ভুল। ফলে বিদায়ী অর্থবছরে প্রকৃত পণ্য রপ্তানি ৪৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়নের নিচে নেমে যেতে পারে।

বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ৮৪-৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে। ফলে তৈরি পোশাকের রপ্তানি হ্রাস বা বৃদ্ধিতে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতেও একই ধরনের প্রভাব পড়ে। এনবিআরের রপ্তানির প্রাথমিক তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি ১ দশমিক ২৫ শতাংশের চেয়েও বেশি কমেছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমানে চারটি কারণে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কম। ১. ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য রপ্তানির জন্য কম লিড টাইমে (ক্রয়াদেশ থেকে পণ্য জাহাজীকরণ পর্যন্ত সময়) ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। কিন্তু গ্যাস–সংকটের কারণে কম লিড টাইমে পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ২. কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে সময় বেশি লাগছে। ৩. কাস্টমসের হয়রানি। বিভিন্ন অজুহাতে কাঁচামাল আটকে রাখছে সংস্থাটি। ৪. খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক ক্রয়াদেশ নেওয়া যাচ্ছে না। আবার যেগুলো নেওয়া যাচ্ছে, সেগুলোও অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে দিতে পারছেন না রপ্তানিকারকেরা। এতে ক্রেতাদের আস্থা কমছে।

Related Articles