পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে সমগ্র বাংলাদেশ। এই ঝুঁকি নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার প্রয়োজন। তাই আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার ঘোষণা করতে হবে।
আজ বুধবার রাজধানীর আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় রাজনৈতিক সংলাপ’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে তারা এ আহ্বান জানান।
উন্নয়ন সংস্থা ‘অ্যাওসেড’ ও ‘ক্যানসা-বাংলাদেশ’ আয়োজিত সংলাপটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্ট্যাডিজ (বিসিএএস)’র নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান। আলোচনায় অংশ নেন একশন এইড-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারহা কবীর, কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকূল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান ড. মো. আব্দুল কাদের, ক্যানসা বাংলাদেশের চেয়ারপারসন রাবেয়া বেগম, অ্যাওসেডের নির্বাহী পরিচালক শামীম আরেফিন, সিডিপির নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম, ডরপের উপ-নির্বাহী পরিচালক মো. জুবায়ের হাসান, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, পানি অধিকার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ববি, কেষ্টাল ভয়েস অব বাংলাদেশের সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা জামাল পপলু, সিপিআরডির আল ইমরান প্রমুখ।
সংলাপে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এ বিপদ আরো ভয়ংকর রূপ নেবে।
অথচ পরিবেশের ক্ষতির জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোর কোনো উদ্বেগ নেই। তারা ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ক্ষতি কমানোর বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চায়। পরিবেশের ক্ষতি করেও ক্ষতিপূরণ দিতে চায় না। উল্টো ক্ষতির শিকার দেশগুলোকে তাদের দাসত্বে পরিণত করতে চায়।
এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য দল-মত নির্বিশেষে এখানে একসঙ্গে কথা বলতে হবে। নির্বাচনী ইস্তেহারে সেই ঘোষণা দিতে হবে।
সংলাপে নির্বাচনী ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট ৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবনায় বলা হয়, রাষ্ট্রপতির কাছে প্যারিস চুক্তি পেশ করতে হবে। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে জাতীয় সংসদে প্যারিস চুক্তির ওপর সাধারণ আলোচনার আয়োজন করতে হবে।
প্যারিস চুক্তির অসারতা ও সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য শিল্পোন্নত ও নির্গমনকারী দেশগুলোর নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির জন্য জাতিসংঘ জলবায়ু আলোচনায় অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এই শতকের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত রাখতে নতুন লক্ষ্য জলবায়ু আলোচনা শুরুর দাবি জানাতে হবে।
প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাস্তচ্যুতি ও অভিবাসন বিষয়ে জাতিসংঘের অধীনে একটি স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক ফোরাম গড়ে তুলতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জাতীয় নীতি দলিলগুলোর মধ্যকার বিশৃঙ্খলা নিরসন করে সাংবিধানিক নির্দেশনার আলোকে সকল জাতীয় নীতি-দলিলের মধ্যে নীতিগত সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অভ্যন্তরীণভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের প্রকল্প অনুমোদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং প্রকল্প অনুমোদনে অভিযোজনকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ, নাগরিক সমাজ, নারী, তরুণ, ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসহ ও অপরাপর জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করে জাতীয় নীতি ও অবস্থানগ্রহণ করতে হবে।