পাকিস্তানি ভিক্ষুকরা উড়োজাহাজে চড়ে বিদেশে গিয়ে ভিক্ষা করেন

পাকিস্তানি ভিক্ষুকরা উড়োজাহাজে চড়ে বিদেশে গিয়ে ভিক্ষা করেন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সৌদি আরবে পাকিস্তানি ভিক্ষুকদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তানি ভিক্ষুকরা হজের অজুহাতে সৌদি আরবে প্রবেশ করছেন।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানায়, এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ না করা হলে পাকিস্তানি ওমরাহ ও হজযাত্রীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি “ওমরাহ আইন” চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে করে ওমরাহ যাত্রার ক্ষেত্রে ভ্রমণ সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। এছাড়া ভিক্ষুকদের হজের আড়ালে সৌদি আরবে যাওয়া বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে সচেষ্ট হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

পাকিস্তানি ভিক্ষুকরা দল বেঁধে মধ্যপ্রাচ্যের উড়োজাহাজে চড়ছেন–এ ঘটনা আজব শোনালেও, এটি একেবারে নতুন নয়। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। সেখানে তারা হজ ভিসার সুবিধা কাজে লাগিয়ে থাকেন। কারণ এ ভিসার জন্য ব্যাংক হিসাবের তথ্য, কর সংক্রান্ত কাগজপত্র, পেশাগত আয় এবং সম্পত্তির বিবরণীর মতো জটিল নথি জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

গত আগস্ট মাসে ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) পাকিস্তানের মুলতান বিমানবন্দরে সৌদি আরবগামী ১টি ফ্লাইট থেকে ১৬ জন ভিক্ষুককে নামিয়ে দেয়। ১ সপ্তাহ পরে, একই বিমানবন্দরের আরও একটি ফ্লাইট থেকে ৮ জনকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তারা সবাই দক্ষিণ পাঞ্জাব জেলার বাসিন্দা। জেলাটি পাকিস্তানের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচকের দিক থেকে সবচেয়ে নিচে।

নামিয়ে দেওয়া ব্যক্তিরা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তারা ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য এজেন্টদের ১ লাখ ৮৫ হাজার রুপি (প্রায় ৬৬০ মার্কিন ডলার) দিয়েছেন। কিছু ভিক্ষুক তাদের সহায়তাকারীদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এমন চুক্তি অনুযায়ী, তারা ভ্রমণ খরচ এবং ভিসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য ভিক্ষা থেকে আয়ের ৫০ শতাংশ এজেন্টদের পরিশোধ করবেন।

পাকিস্তানেরবাজার, শহর, মফস্বল অথবা গ্রামে কিংবা সড়কে চলতে থাকা যেকোনো গাড়িতে বসে চোখে পড়বে ভিক্ষাবৃত্তি। কিছু বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত থাকলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছোট শিশুদের ভিক্ষা করতে দেখা যায়। ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলোর বাইরে কিছু ভিক্ষুক দৈনিক মজুরি হিসেবে কাজ (ভিক্ষা) করেন এবং তারা দিন শেষে সংগ্রহ করা পুরো টাকা বসদের কাছে জমা দেন।

১৯৫৮ সালের ভেগ্রেন্সি অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, পাকিস্তানে ভিক্ষাবৃত্তি বেআইনি। এই আইনে ভিক্ষুক বা ভিক্ষা করা শিশুদের অভিভাবকদের ৩ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

পাকিস্তানে ভিক্ষাবৃত্তি এখন একটি পেশা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কিছু অঞ্চলে সম্পূর্ণ গোত্র এবং উপজাতির সদস্যরা এটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এ পেশা এখন প্রায় একটি সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক ব্যবসা হয়ে উঠছে, পাকিস্তানি ভিক্ষুকরা ইরান থেকে সৌদি আরব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছেন।

বিভিন্ন দেশের উচ্চপদস্থ কূটনীতিকরা মাসের পর মাস ধরে এই অস্বাভাবিক ঘটনাটি তুলে ধরছেন এবং বলছেন, তাদের কারাগারগুলো পাকিস্তানি ভিক্ষুক দিয়ে ভরে গেছে। তারা পাকিস্তান সরকারকে এ বিষয়ে কিছু করার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

Related Articles