পাকিস্তানে তাপপ্রবাহে শতাধিক মানুষের হিটস্ট্রোক

পাকিস্তানে তাপপ্রবাহে শতাধিক মানুষের হিটস্ট্রোক

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : পাকিস্তানজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে শতাধিক মানুষের হিটস্ট্রোকের চিকিৎসা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এবিসি এ খবর জানিয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, পাকিস্তানের মহেঞ্জো দারোতে আগের দিন ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়েছে। ২০২২ সালে দক্ষিণ সিন্ধু প্রদেশের এই প্রত্নতাত্ত্বিক শহর মৌসুমি বৃষ্টি ও বিধ্বংসী বন্যায় আক্রান্ত হয়েছিল। এই তাপপ্রবাহ অন্তত এক সপ্তাহ থাকতে পারে।

সাধারণ মানুষদেরকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু শ্রমিকরা বলছেন, আমাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। পরিবারের খাবার জোগাড়ের জন্য কাজে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ুবিষয়ক সমন্বয়কারী রুবিনা খুরশীদ আলম রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পঞ্চম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হলো পাকিস্তান। আমরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ও বন্যা দেখেছি।

চিকিৎসকরা বলছেন, পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে শত শত রোগীর চিকিৎসা করছেন তারা। এছাড়া ওই সময় দক্ষিণ সিন্ধু প্রদেশের হায়দরাবাদ, লারকানা ও জ্যাকোবাবাদ জেলার অনেক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম ফরিদ বলেছেন, গতকাল থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। পাঞ্জাব প্রদেশে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শুরু করেছেন। তাই রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে জরুরি সেবাকেন্দ্র স্থাপন করেছে সরকার।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের জরুরি সেবা দিতে পানি ও বরফ সরবরাহ করছে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স।

হিটস্ট্রোক একটি মারাত্মক অসুস্থতা। এতে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। সম্ভাব্য এই তাপমাত্রার কারণে মানুষ অচেতন হয়ে পড়েন। মারাত্মক হিটস্ট্রোকে মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

পাকিস্তানে ১৯৬১ সালের পর থেকে সবচেয়ে আর্দ্র এপ্রিল মাস ছিল চলতি বছর। ওই মাসে দ্বিগুণেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত মাসের বৃষ্টিতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া অনেক সম্পদ ও কৃষিজমি বিধ্বস্ত হয়েছে। দিনের তাপমাত্রা মে মাসে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। সেইসঙ্গে হিমবাহ গলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে৷

২০২২ সালের বন্যায় সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ওই বন্যায় সারা দেশে এক হাজার ৭৩৯ জন নিহত হন।

বর্তমানে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলও তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছে। পাঞ্জাবে এক সপ্তাহের জন্য স্কুল বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

আলম বলেন, আবহাওয়ার এই অনিয়মিত পরিবর্তন হচ্ছে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফল।

Related Articles