পাঠ্যবইয়ে ট্রাফিক আইন অন্তর্ভূক্তির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

পাঠ্যবইয়ে ট্রাফিক আইন অন্তর্ভূক্তির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক : পছন্দের পোস্ট করতে আপনাকে লগইন করতে হবে। প্রতিদিন অফিসে পৌঁছাতে হয় সকাল নয়টায়। এজন্য সাড়ে আটটায় বাসা থেকে বের হতে হয়। এরপর পায়ে হেঁটে আগ্রাবাদ মোড়, সেখান থেকে বাসে করে কাস্টমস মোড়। এ রুটিনেই চলছে নিত্যদিনের জীবন। তবে গত দুই সপ্তাহে এ দৃশ্যে ভিন্নতা এনে দিয়েছিল নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আর পুলিশের ‘ট্রাফিক সেবা সপ্তাহ’। একদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং তার পরবর্তী সময়ে ট্রাফিক পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণে কয়েক দিনে লাইসেন্সবিহীন একটি গাড়িও চলেনি সড়কে। আর যথারীতি এর খড়গ এসে পড়ে সাধারণ যাত্রীদের ওপর। ভোগান্তির কি আর শেষ আছে? নয়টার অফিস পৌঁছাতে হয়েছে সাড়ে দশটারও পরে। গুণতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া, সাথে ঝক্কি-ঝামেলাতো আছেই। সকালে অফিসে যাওয়া আর বিকেলে অফিস ছুটির পরের সময়ে সড়কে গাড়ি পেতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়েছে সবাইকে।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় কতটা অব্যবস্থাপনা আর নৈরাজ্য ভর করে আছে। ফলে সর্বস্তরের মানুষের সমর্থনও পেয়েছে আন্দোলন। শত দুর্ভোগেও আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে সাধারণ মানুষ। এ যে সবার চাওয়া। আন্দোলনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ‘বিপ্লব’ ঘটেছে বলা চলে। পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারণা, আন্দোলনের রাজনীতিকরণ, আরো কত কি। কেউ স্বপ্ন দেখছিলেন, রাতারাতি ট্রাফিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের। স্বপ্ন দেখতেই পারেন। কিন্তু চিন্তা করতে হবে রাতারাতি কি এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব? বিষয়টি নিশ্চয়ই ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ নয়। তাহলে অনেক আগেই এর বাস্তবায়ন হয়ে যেত। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন এবং থেমে যাওয়ার পরও দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলো পরিবহন ব্যবস্থার নানা অব্যবস্থাপনা ও ক্রুটি নিয়ে লিখেছে, লিখছে। সংবাদ মাধ্যমগুলোর সংবাদে প্রাধান্য পেয়েছে আন্দোলনের সময়কার সড়কের চিত্র এবং বর্তমান সময়ের চিত্র। এর অধিকাংশ শিরোনাম ছিল এমন, ‘পুরোনো চেহারায় ফিরেছে ঢাকার সড়ক’। অর্থাৎ আন্দোলনের আগের অবস্থায় ফিরে গেছে পরিবহন ব্যবস্থা।

যাত্রী নিতে সড়কে প্রতিযোগিতা, যত্রতত্র ওভারটেকিং আর পার্কিং। পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও ট্রাফিক আইন না মানার চিত্র প্রাধান্য পেয়েছে গণমাধ্যমের শিরোনামে। তাহলে কি এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় নেই? এমন প্রশ্ন সচেতন নাগরিকের মনে আসতেই পারে। সমস্যা যখন আছে, সমাধানও আছে এটি চিরন্তন সত্য। তবে সমস্যার সমাধান একদিন, সপ্তাহ, মাস কিংবা বছরে সম্ভব নয়। আমরা ছোট থেকে যা দেখে-জেনে বড় হচ্ছি, চাইলেই আমাদের দীর্ঘদিনের সে অভ্যাসগুলো মুহূর্তে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন আইন জানা, চর্চা এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর যথাযথ পদক্ষেপ।

গত ৯ অগাস্ট বিবিসি বাংলার ‘বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে ট্রাফিক নিয়মের পাঠ কতটা আছে?’ শিরোনামের প্রতিবেদনে দেশের স্কুল পাঠ্যসূচিতে ট্রাফিক আইন কতটুকু পড়ানো হয় তা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তৃতীয় শ্রেণিতে একটি বিশেষ অধ্যায় এবং চতুর্থ শ্রেণিতে একটি কবিতা ছাড়া আর কোনও পাঠ্য নেই আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায়। তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে তা নির্ধারণ করা অনেকটা জটিল। বিচ্ছিন্ন শিক্ষা যেমন কোনও মানুষকে নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ করে তোলে না, ঠিক তেমনি নিত্যদিনের একটি আচরণও গড়ে ওঠে না ধারাবাহিক শিক্ষার অভাবে। তাই একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি পর্যন্ত ধারাবাহিক ট্রাফিক আইন শিক্ষা আমাদের আচরণকে প্রভাবিত করবে এটি নিশ্চিত বলা যায়।

উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে বিষয়টি সহজে অনুমেয় হবে। একটি শিশু যখন বুঝতে শেখে তখন সে তার আশপাশের মানুষের কর্মকা- দেখে সে অনুযায়ী আচরণ করে। বড় হতে হতে আচরণগুলোও পূর্ণতা পায় এবং তার ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আমরা বাস্তব জীবনেও যদি চর্চা করি তবে ট্রাফিক আইন নিয়ে আমাদের আর আন্দোলনে নামতে হবে না। শিক্ষার্থীদেরও আর সড়কে অকালে প্রাণ দিতে হবে না। আন্দোলন হয়েছে, সরকারের টনক নড়েছে, নতুন আইন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পাঠ্যবইয়ে ট্রাফিক আইন অন্তর্ভূক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী, একদিন এ ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে। হয়তো সে দিন আর বেশি দূরে নয়। তবে এর শুরুটা হোক শ্রেণিকক্ষ থেকেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *