পালিত কুকুর ভূমিধস থেকে রক্ষা করলো পুরো পরিবারকে

পালিত কুকুর ভূমিধস থেকে রক্ষা করলো পুরো পরিবারকে

পাথেয় ডেস্ক : ইদুকি নদীর উপচেপড়া পানি ও বন্যায় কেরালায় ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন রেখে গেছে। রাজ্যটির ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে এবারের বন্যা অন্যতম। এ পর্যন্ত ৩৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩৫ হাজার মানুষ স্থান নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে।
গত বৃহস্পতিবার মোহানান পি ও তার পরিবার ইদুক্কি জেলার কানিজকুজি গ্রামে তাদের বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। ভোর প্রায় ৩টার দিকে মোহানান জেগে ওঠেন। তিনি শুনতে পান তার কুকুর ঘেউ ঘেউ করে ডাকছে। অন্যান্য দিনের মতোই তিনি অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এক মিনিট পরই রকি নামের কুকুরটি ডাক আরও চড়া হতে থাকে। এক পর্যায়ে কুকুরটি আর্তনাদ শুরু করে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে মোহানান বলেন, আর্তনাদটি আমার কাছে অস্বাভাবিক ঠেকে। তখন আমাদের মনে হয়েছিল খারাপ কিছু একটা ঘটেছে। আমি তখন বাইরে বের হই দেখার জন্য। মোহনান জানান, রকিকে দেখতে বাইরে বের হওয়ার পর আমরা দুর্যোগ পরিস্থিতি দেখতে পাই। ভূমিধসে তাদের ঘর চাপা পড়ার একেবারে শেষ মুহূর্তে তারা বাড়ি সরে যান। এনডিটিভি লিখেছে, রকি ও পরিবারটি এখন সরকারিভাবে পরিচালিত ত্রাণ শিবিরে অবস্থান করছে। কেরালায় যখন বন্যা দুর্যোগ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে তখন মানুষের প্রতি মানুষের সহযোগিতা করার অনেক ঘটনার কথা উঠে আসছে। মোহনানের বাসার একতলা উপরে এক বয়স্ক দম্পতি বাস করতেন। ভূমিধসে তাদের মৃত্যু হয়েছে। ওই দম্পতি অল্প কয়েকদিন আগে তাদের নিজেদের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে এই বাসায় উঠেন ভাড়াটিয়া হিসেবে। তাদের বাড়িটি ছিল পেরিয়ার নদীর তীরে।কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করার পর নিজেদের বাড়ি ছেড়ে এখানে উঠেছিলেন।

বয়স্ক এই দম্পতির ২৪ বছরের নাতি বিবিন এনডিটিভিকে বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাদের বন্যার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। তাই আমাদের বাড়ি ছাড়তে হয় ও ভাড়া বাসায় উঠি। কিন্তু এই ভূমিধস দাদা-দাদিকে মেরে ফেলল এবং বাসার সবকিছু নষ্ট করে দিয়েছে। লোকজন আমার স্ত্রী ও এক বছরের মেয়েকে বাঁচাতে পেরেছে। পেরিয়ার নদীর তীরে বিবিনদের যে বাড়িটি ছিল তা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। অপর এক ব্যক্তি বিবিনের স্ত্রী ও মেয়েকে উদ্ধার করেন। উদ্ধারের আগ মুহূর্তে বিবিনের স্ত্রীর পুরো শরীর মাটির মধ্যে চাপা পড়েছিল শুধু এক হাত ছিল বাইরে। ওই হাত দিয়েই তিনি এক বছরের মেয়েকে ধরেছিলেন। ইদুক্কি কানজিকুজি গ্রামেই ১২টি ত্রাণ শিবির চালু করা হয়েছে। এখানে একটি শিবিরেই অবস্থান করছে ১২৮টির মতো পরিবার। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ান বন্যায় নিহতদের পরিবারের জন্য ৪ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যারা বাড়িঘর হারিয়েছে তাদেরকেও ৪ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর যারা স্বজন ও বাড়িঘর হারিয়েছেন তাদেরকে ১০ লাখ রুপি দেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *