পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে উদ্যোগ

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে উদ্যোগ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ‘আমি দলিত সম্প্রদায়ের লোক। অনেক জায়গায় চাকরির আবেদন করছি। কিন্তু কাগজপত্র দেখে তারা হয়তো মনে করছে, এ তো দলিত কমিউনিটির, এ কী করতে পারবে বা কেমনভাবে এগোবে। এ রকমভাবে অনেক জায়গা আছে, যেখান থেকে আমি বঞ্চিত হয়েছি।

আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন খুলনার পরিণীতা দাস।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। সেখানে পরিণীতার মতো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আরো অনেকেই তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি ব্যবসা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর যোগ্যতাসম্পন্ন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘কর্মসংস্থানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক এই পরামর্শসভার আয়োজন করা হয়।

সভায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক চর্চা দূর করা, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নপ্রক্রিয়ায় তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ক্রিশ্চিয়ান এইডের সহায়তায় নাগরিক উদ্যোগ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশন ২০২১ সাল থেকে ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়নপ্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ’ শিরোনামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের উদ্যোগে সম্প্রতি খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সেসব বিভাগে একটি করে ‘চাকরি মেলা’ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৮ নভেম্বর খুলনায় এবং পরে ক্রমান্বয়ে সিলেট ও রাজশাহীতে মেলার আয়োজন করা হবে।

পরামর্শসভার মূল ধারণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো দলিত, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিজড়া এবং ট্রান্সজেন্ডার ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। জনগোষ্ঠীগুলো তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে মানসম্মত শিক্ষা থেকে শুরু করে একটি সম্মানজনক পেশা গ্রহণের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়।

নাগরিক উদ্যোগের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. আব্দুল্লাহ আল ইসতিয়াক মাহমুদ তিন বিভাগে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের একটি আংশিক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের কর্মসংস্থানের অবস্থা জানার জন্য তিন বিভাগে র‌্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট করেছিলাম কিছুদিন আগে।

এটি খুবই কম সময় ধরে। হয়তো বা এখানে পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাব না। সর্বমোট ৪২২ জন তরুণ ও যুবকের ওপর এটি করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় ২১৩ জন, সিলেটে ১০০ জন এবং রাজশাহীতে ১০৯ জন রয়েছেন। আমরা দেখেছি, তাঁদের মধ্যে ১৬৭ জন পড়ালেখা শেষ করেছেন কিন্তু এখনো কোনো চাকরি পাননি। অল্প কিছু লোক খণ্ডকালীন চাকরি, দিনমজুরি, ক্ষুদ্র ব্যবসা করলেও তা তাঁরা একান্ত বাধ্য হয়ে করছেন। বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পরিচালক শহিদুল আলম বলেন, চাকরির পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়াদের কিছুটা ছাড় ও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *