পিতা হত্যা; ছেলে-মেয়েসহ গ্রেফতার ৪

পিতা হত্যা; ছেলে-মেয়েসহ গ্রেফতার ৪

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : পারিবারিক কলহের জেরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে দেশে। এবার নওগাঁর পোরশায় এজাতীয় হত্যায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মাকে মারধর ও তালাক দেয়ায় বিবাদ চরমে পৌঁছালে ক্ষিপ্ত হয়ে নিহতের সন্তানরা তাদের বাবা আব্দুল খালেককে (৫০) শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে বাবার মরদেহ বস্তাবন্দি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার একটি খালে ফেলে আসে।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২৮) ও মেয়ে নাজমা খাতুন (৩৩) সহ নিহতের স্ত্রী ফাইমা খাতুন (৪৮) ও মেয়ে জামাই মোদাচ্ছের হোসেনকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রকিবুল আকতার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) রকিবুল আকতার বলেন, গত সোমবার (০৮ মার্চ) খায়রুল ইসলাম তার বাবা আব্দুল খালেকের ‘নিখোঁজ হওয়া’র বিষয়ে পোরশা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ‘নিখোঁজ’ হওয়ার এক মাসের অধিক সময় পরে থানায় এসে জিডি করায় সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। তদন্তে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সন্দেহভাজন আসামি ‘নিখোঁজের’ ছেলে খায়রুলকে নওগাঁ পুলিশের সাপাহার সার্কেল অফিসে ডেকে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে খায়রুল তার বোন নাজমা খাতুনের সহযোগিতায় বাবা আব্দুল খালেককে শ্বাসরোধ হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে খায়রুলের দেয়া তথ্যমতে আব্দুল খালেক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার (০৯ মার্চ) রাতে ফাইমা খাতুন, নাজমা খাতুন ও তার স্বামী মোদাচ্ছেরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশের কাছে অভিযুক্ত আসামি খায়রুলের দেওয়া স্বীকারোক্তির বর্ণনার বরাত তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খায়রুলের বাবা আব্দুল খালেকের সঙ্গে তার মা ফাইমা খাতুনের বনিবনা হচ্ছিল না। পারিবারিক কলহের জেরে গত ২৭ জানুয়ারি ফাইমা খাতুনকে মৌখিকভাবে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন আব্দুল খালেক। মাকে তালাক দেওয়ার সংবাদ পেয়ে ছেলে খায়রুল ইসলাম তার কর্মস্থল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শ্রীরামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক) থেকে এবং মেয়ে নাজমা খাতুন শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে বাবা-মার মধ্যে বিবাদ মিমাংসার চেষ্টা করেন। স্থানীয়ভাবে আপস-মিমাংসায় ব্যর্থ হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি খায়রুল মাকে উপজেলার পিছলডাঙ্গা গ্রামে তার খালার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ওই দিন রাতে খায়রুল ও নাজমা তাদের বাবা আব্দুল খালেককে মায়ের সঙ্গে বিবাদের মিমাংসা করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাদের অনুরোধ মানতে অস্বীকার করলে বোন নাজমা ও বোন জামাই মোদাচ্ছেরের সহযোগিতায় খালেকের মাফলার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে খায়রুল। পরে মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে খায়রুল বাবার মরদেহ একটি বড় পাটের বস্তায় ভরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপজেলা সদরে তার কর্মস্থল শ্রীরামপুর হাফেজিয়া মাদরাসার পেছনে একটি খালে ফেলে দিয়ে আসে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, খালে মরদেহ ফেলে দেওয়ার ১২ দিন পর বস্তাবন্দি ওই মরদেহটি ভেসে উঠলে চাঁপাইনাবাবগঞ্জ সদর থানা পুলিশ সেটি উদ্ধার করে এবং অজ্ঞাতনামা মরদেহ হিসেবে দাফন করে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছোট ভাই জাকির আলম (৪৫) মরদেহের আলমত দেখে আব্দুল খালেককে শনাক্ত করেন এবং থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মামুন খান চিশতী, সাপাহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বিনয় কুমার, সহকারী পুলিশ সুপার সুরাইয়া আখতার, পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

/এএ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *