পৃথিবীর সবচেয়ে অলস মানুষ রয়েছে কোন দেশে, জানেন?

পৃথিবীর সবচেয়ে অলস মানুষ রয়েছে কোন দেশে, জানেন?

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আজ ১০ আগস্ট আলস্য দিবস। ‘আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় আলস্য।’ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন কবি হেলাল হাফিজ। মজার ছলে বললেও বক্তব্যটা কিন্তু অনেকের জীবনেই সত্য। বাঙালি তো রীতিমতো উল্লাস করে আলস্য করে। বাংলা অভিধানে ‘পিপুফিশু’ বলে একটি শব্দই আছে। এটি আসলে ‘পিঠ পুড়ছে ফিরে শুই’—বাক্যের আদ্যক্ষর। এর অর্থ অত্যন্ত অলস, কুঁড়ের বাদশাহ। সেই যে এক রাজা রাজ্যের সবচেয়ে অলস ব্যক্তিটিকে পুরস্কৃত করার জন্য ডাকলেন। সব অলস এল। সবাইকে কুঁড়েঘরে ঢুকিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হলো। বাকি কুঁড়ের দল দৌড়ে পালালেও রয়ে গেল তিনজন। আগুনের তাপ শরীর স্পর্শ করলে প্রথমজন বলল, কত রবি জ্বলে রে। দ্বিতীয় অলস আঁখি মেলে দেখতে নারাজ। বলল, কেবা আঁখি মেলে রে। আর তৃতীয়জন? গোটা একটা বাক্য বলতেও তার আলসেমি। শুধু বলল, পিপুফিশু। বলল বটে, কিন্তু ফিরে আর শুল না। কেবল বাঙালি নয়, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত কিংবা মন্টেনেগ্রোর নাগরিকদেরও আলস্যের জন্য খ্যাতি আছে। নেচার সাময়িকীর এক গবেষণা অনুযায়ী, পৃথিবীর সবচেয়ে অলস মানুষ রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। ইউরোপের দেশ মন্টেনেগ্রোতে ১২ বছর ধরে ‘অলসতম নাগরিক’ খোঁজার প্রতিযোগিতা হয়। গত বছর আগের সব রেকর্ড ভেঙে টানা ৫০ দিন শুয়ে থেকে সেই চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন ফিলিপ নেজেভিচ ও লিডিজা মার্কোভিচ নামের স্থানীয় দুই তরুণ-তরুণী।

আলসেমির জন্য কাজের লোকেরা কুঁড়েদের খুব তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। আত্মপক্ষ সমর্থনে কুঁড়েরা এ ক্ষেত্রে ইংরেজ কবি ও নাট্যকার অস্কার ওয়াইল্ডের এই কথাটিকে আমলে নিতে পারেন। তিনি বলেছেন, ‘কিছু না করাটা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। সবচেয়ে কঠিন এবং সবচেয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক।’ অর্থাৎ বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ কিছুটা অলস। এটি কিন্তু শুধু কথার কথা না। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক প্রমাণও রয়েছে। গবেষণা বলছে, আলসেমি উচ্চ বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ। তাঁদের বুদ্ধ্যঙ্ক (আইকিউ) উচ্চমাত্রার। জার্নাল অব হেলথ সাইকোলজিতে ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, শারীরিকভাবে কম সক্রিয় তথা অলস ব্যক্তিরা অন্যদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। তাঁরা তুলনামূলকভাবে অধিকতর চৌকস, সফল এবং কর্মী হিসেবে অন্যদের চেয়ে ভালো। কেউ কেউ তো সোজাসাপটা আলস্যকে সৃজনশীলতার চাবিকাঠি বলেছেন। ইংরেজ লেখিকা অগাথা ক্রিস্টির কথাটাই ধরুন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, প্রয়োজনীয়তা উদ্ভাবনের জনক। উদ্ভাবন আসে সরাসরি আলস্য থেকে।’ এ পর্যায়ে বিল গেটসের কথাটিও মনে রাখার মতো, ‘আমি কঠিন কাজের জন্য সব সময় একজন অলস মানুষকেই বেছে নেব। কেননা একজন অলস ব্যক্তিই কাজটি সম্পাদনের সহজ পথ খুঁজে বের করবে।’

আলসেমির জন্য কাজের লোকেরা কুঁড়েদের খুব তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে!

সাফল্যের জন্য শারীরিক পরিশ্রমের যে ধারণা আমাদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা যে সত্যিই মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, সে-সম্পর্কিত সুন্দর বিবরণ পাওয়া যায় দ্য রাইট টু বি লেজি বইয়ে। ‘অলস হওয়ার অধিকার’ শীর্ষক বইটি লিখেছেন কার্ল মার্ক্সের জামাতা পল লাফার্গ। ১৮৮৩ সালে এটি প্রকাশিত হয়।

আজ ১০ আগস্ট আলস্য দিবস। দিনটি কবে কীভাবে শুরু হয়েছিল? থাক না, পরিশ্রম করে তা আর খোঁজার কী দরকার। তার চেয়ে বরং কিছুটা আলস্য করা যাক।

ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে

Related Articles