পেঁয়াজের বাম্পার ফলনেও কৃষকের হাত শূন্য

পেঁয়াজের বাম্পার ফলনেও কৃষকের হাত শূন্য

মাদারীপুর প্রতিনিধি ● বর্তমানে যে পেঁয়াজ বাজারে ৯০-১শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬-৭ মাস আগে উৎপাদন মৌসুমে এই পেঁয়াজই কৃষক ৮-১২ টাকায় বিক্রি করে নিঃস্ব হয়। অথচ গুনে মানে আমাদের দেশের পেঁয়াজ অনেক ভাল মানের। তাহলে কি সেই কারণ যে পানির দরের সেই পেঁয়াজ এখন ৯০-১শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে? অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে কৃষি নিয়ে দেশে সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব, অঞ্চল ভিত্তিক ফসল সংরক্ষনাগার বা কোল্ড স্টোরেজ না থাকা ও বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবই মূল দায়ী। যার ফলে ভুক্তভোগী কৃষকসহ সাধারন মানুষ। শুধু পেঁয়াজই নয় উৎপাদন মৌসুমে এই ৩ কারনেই সকল কৃষি পন্য পানির দরে বিক্রি হলেও বছর ধরেই সেসকল পন্য আমদানি করে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। পদ্মা আড়িয়ালখা কুমারসহ অসংখ্য নদ-নদী খাল বিল সমৃদ্ধ মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুরসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের  কৃষি জমিতে  প্রতি  বর্ষায় পর্যাপ্ত পলি পড়ে। ফলে প্রতিবছরই বাম্পার ও সুস্বাদু পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। তাই এ অঞ্চলের পেঁয়াজের কদর দেশজুড়েই সমাদৃত। কিন্তু উৎপাদন মৌসুমে সংরক্ষণের অভাবে কৃষক পেঁয়াজ পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। গত বছর জেলার ৪ উপজেলায় প্রায় ৪১ শ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ  হয়ে ৯০ হাজার মে.টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু পচনশীল এ পন্য শুধুমাত্র সংরক্ষনের অভাবে পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয় এ অঞ্চলের কৃষক। গত বছর উৎপদান মৌসুমে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয় ১২-১৫ টাকায়। মন প্রতি বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬ শ টাকায়। পাইকারি বাজার হয়ে কৃষকের হাতে তা পৌছায় আরো কম দামে। অথচ বীজ,সার, শ্রমিকদের টাকা দিয়ে পেয়াজ চাষে মণ প্রতি কৃষকের খরচ হয় ৭ শ থেকে সাড়ে ৭ শ টাকা। তাই গত বছর অনেক কৃষককে মাঠেই পেঁয়াজ রেখে দিতে দেখা গেছে। চলতি বছর পেঁয়াজের উচ্চ মুল্য চলায় কৃষক বিপুল উৎসাহে আবাদ শুরু করেছেন। উচ্চ মুল্যের কারনে চলতি বছর কৃষক গত বছরেরও দ্বিগুনেরও বেশি জমিতে আবাদ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছেন প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু উৎসাহের মাঝেও হাসির কোন চিহ্ন মিলছে না কৃষকের মুখে। বীজ ও সারের বাড়তি দাম তাদের শুধু ভাবনার কারন নয় এরসঙ্গে রয়েছে উৎপাদন পরবর্তী সংরক্ষনাগার বা উপযোগী কোল্ড স্টোর না থাকার মহাচিন্তা। শুধু দুচিন্তার ভাজ এখানেই থেমে নেই একই সময় বহিঃবিশ্ব থেকে আমদানি বন্ধ না হওয়া, সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব ও বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবসহ নানান সংকটে চিন্তার ভাঁজ কৃষকের কপালে।

কৃষি ও কৃষককে বাচাতে অঞ্চলভিত্তিক যে ফসল বা সবজি যে এলাকায় ভাল হয় সংরক্ষনের জন্য সে এলাকায় কৃষি সংরক্ষনাগার বা কোল্ড স্টোরেজ নির্মানের দাবী কৃষক ক্রেতা বিক্রেতা সকলের। উপ পরিচালক, কৃষি অধিদপ্তর, মাদারীপুর কৃষিবিদ জিএম এ গফুর বিষয়টি স্বীকার করে কৃষক কৃষিকে বাচাতে অঞ্চল ভিত্তিক সংরক্ষনাগার বা কোল্ড স্টোর নির্মানের দাবী জানান।

দেশের কৃষক ও কৃষিকে বাচাতে শুধু আমদানি নির্ভর না হয়ে উৎপাদনকৃত ফসল সংরক্ষন করে তা বছর ধরে ব্যবহার করলে কৃষকও ন্যায্যমুল্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতারাও স্বল্প্য মুল্যে খেতে পারবেন। তাই উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের দিকে সরকারকে মনোযোগী হওয়ার দাবী সকলের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *