নিজস্ব প্রতিবেদক : নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন করেছেন, বঙ্গবন্ধুর অবদান ভুলে যান কেন? রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই প্রশ্ন তোলেন। নৌমন্ত্রী বলেন, আমার পিতৃতুল্য ড. কামাল হোসেন। তিনিও দেখি আজকে উল্টো কথা বলছেন। ভুলে গেছেন বঙ্গবন্ধু আপনাকে পাকিস্তান থেকে নিয়ে এসে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। আমার প্রশ্ন হলো, বঙ্গবন্ধুর অবদান ভুলে যান কেন? সত্য যারা ভুলে যায় ইতিহাস কিন্তু তাদের শিক্ষা দেয়।
শাজাহান খান বলেন, ১/১১’র কুশিলবরা আজকে নানা কথা বলছেন। আমি কয়েকজনের কথা বলতে চাই। মাহমুদুর রহমান সাহেব তিনি একজন সাংবাদিক। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কি লেখেন? কত ঔদ্ধত্য লেখা, বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে এ ধরনের লেখা তিনি কিভাবে লেখেন? বি চৌধুরীর মতো একজন মানুষ যিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি কি বললেন? বি চৌধুরী বলেছেন, তার কাছে নাকি বিএনপির কিছু নেতাকর্মী যান, যাদের বুক কাঁপে। যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তাহলে তাদের কি হবে? আবার নাকি আওয়ামী লীগেরও কিছু কর্মীরা তার কাছে যান যাদেরও বুক কাঁপে। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের কী হবে এই ভয়ে। তিনি এমন একটি শক্তির কথা বলছেন যারা নাকি দুদলকেই সামাল দিতে পারবে।
নৌমন্ত্রী বলেন, ভিত্তিহীন কিছু মানুষ তৃতীয় শক্তির কথা বলছেন। ২০১৩-১৪ সালে যারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না উল্লেখ করে নৌমন্ত্রী বলেন, ৯২ জন ড্রাইভার, হেলপার, ১৭ জন পুলিশ, তিন জন বিজিবি সদস্য, দুজন মুক্তিযোদ্ধা, দুজন ব্যাংক কর্মচারী, রিকশা শ্রমিক, হকার, ফল ব্যবসায়ী, গরু এবং মুরগির বাচ্চাসহ যারা হত্যা করেছেন তাদের মুখে গণতন্ত্র মানায়? যারা এক হাজার গাড়ি পুড়িয়েছেন, তিন হাজার বাস ভাঙচুর করেছেন, পতাকা পুড়িয়েছেন, শহীদ মিনার ভেঙেছেন, গাছ কেটে ধ্বংস করেছেন, কোরআন শরীফ, হাদিস শরীফ পুড়িয়েছেন তাদের মুখে গণতন্ত্র মানায়? এই গণতন্ত্র বাংলার মানুষ চায় না। যেই কাজটি আমরা পারিনি, অসমাপ্ত রয়েছে সেই কাজটি এখন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের করতে হবে। তোমাদেরকে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে হবে।
রাজাকারদের তালিকা তৈরি করতে হবে উল্লেখ করে শাজাহান খান বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। উনাকে বলেছি যে রাজাকারদের তালিকা তৈরি করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী যারা আছে তাদের সন্তানদের চাকরি যাতে না হয়, সেজন্য আমি একটি ৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছি। যার প্রথম দফাতেই বলেছি স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকারের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওযা যাবে না। কারণ একজন সরকারি উচ্চপদের কর্মকর্তা অনেক কিছু করতে পারেন। নৌমন্ত্রী বলেন, যদি রাজাকারের সন্তানেরা চাকরি পায় তাহলে তারা সরকারি অফিসে বসে বসে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কাজ করবে। স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য কাজ করবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে তারা হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।
উত্তরা ষড়যন্ত্র হয় নাই? কারা করেছিল? এই মাহমুদুর রহমানসহ আরও কয়েকজন। শেখ হাসিনাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিল। কারণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলে তারা দেশ দখল করতে পারবে না। আমি বারবার বলেছি এই সরকারের মধ্যেও ঘাপটি মেরে বসে আছে অনেক স্বাধীনতাবিরোধী লোক। তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। তাদের চিহ্নিত করে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে। মন্ত্রী বলেন,আজকে সাংবাদিক যদি মিথ্যা লেখে সেটাকেই মানুষ সত্য মনে করেন, আবার সত্য লিখলেও সেটাকে সত্য মনে করেন। কারণ লেখা যারা পড়েন ইতিহাস না জানার কারণে যা পড়েন তাকেই সত্য মনে করেন। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক কমান্ডের সভাপতি শামসুদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি জিহাদুর রহমান জিহাদ প্রমুখ।