বঙ্গোপসাগরের তলদেশে মূল্যবান খনিজ সম্পদ

বঙ্গোপসাগরের তলদেশে মূল্যবান খনিজ সম্পদ

অর্থ প্রতিবেদক ● অতি মূল্যবান খনিজ সম্পদ ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বাংলাদেশের অগভীর ও গভীর সমুদ্রের তলদেশে। সূত্রমতে, ১৩টি জায়গায় আছে সোনার চেয়ে দামি বালি। যাতে মিশে আছে ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমানাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট। অগভীর সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ সিমেন্ট তৈরির অন্যতম কাঁচামাল ‘ক্লে’-এর সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরের ১৩টি স্থানে ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমানাইট, জিরকন, রুটাইল ও ম্যাগনেটাইট সমৃদ্ধ ভারী খনিজ বালু পাওয়া গেছে।

এছাড়া ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সমুদ্র ভাগেও বড় ধরনের গ্যাসের মজুদ আছে। ব্লু ইকোনমি ও নীল সমুদ্রের অর্থনীতির সম্ভাবনা-সংক্রান্ত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সম্প্রতি করা একটি প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অগভীর সমুদ্রের তলদেশে কোবাল্ট, ভানাডিয়াম, মলিবডেনাম ও প্লাটিনামে গঠিত ম্যাঙ্গানিজ ক্রাস্ট এবং তামা, সিসা, জিংক, কিছু পরিমাণ সোনা ও রুপা দিয়ে গঠিত সালফাইডের অস্তিত্ব আছে। এসব অতি মূল্যবান সম্পদ সমুদ্রের ১৪০০ থেকে ৩৭০০ মিটার গভীরে রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের তলদেশ শুধু অপার খনিজ সম্পদেই পূর্ণ নয় ৩০ থেকে ৮০ মিটার গভীরতায় এক ধরনের ক্লের সন্ধান পাওয়া গেছে। অগভীর সমুদ্রের এই ক্লে উত্তোলন করা গেলে বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্পে বিপ্লব ঘটে যাবে। কারণ ক্লে সিমেন্ট উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল। বিশেষজ্ঞরা জানান, সমুদ্রে মূলত দুই ধরনের সম্পদ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে প্রাণিজ (লিভিং) ও অপ্রাণিজ (নন-লিভিং) সম্পদ। অপ্রাণিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস, চুনাপাথর প্রভৃতি। খনিজের মধ্যে আরও রয়েছে ১৭ ধরনের খনিজ বালু। এর মধ্যে ইলমেনাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, মোনাজাইট, কায়ানাইট, লিকোক্সিন উল্লেখযোগ্য। এ আটটি খনিজ বালু বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এগুলোর দামও বেশি।

বঙ্গোপসাগরের অর্জিত সমুদ্রসীমা থেকে প্রায় ১০ লাখ টন এসব খনিজ বালু আহরণ করা সম্ভব। এছাড়াও সাগরের তলদেশে ক্লেসার ডেপোজিট, ফসফরাস ডেপোজিট, এভাপোরাইট, পলিমেটালিক সালফাইড, ম্যাঙ্গানিজ নডিউল, ম্যাগনেসিয়াম নডিউল নামক খনিজ পদার্থ আকরিক অবস্থায় পাওয়া যাবে। এদের নিষ্কাশন করে লেড, জিংক, কপার, কোবাল্ট, মলিবডেনামের মতো দুষ্কর ধাতুগুলো আহরণ করা সম্ভব হবে। এসব দুষ্কর ধাতু উড়োজাহাজ নির্মাণ, রাসায়নিক কাজে এবং বিভিন্ন কলকারখানার কাজে ব্যবহার করা যাবে।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের জুলাইয়ে ভারত এবং এর আগে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকা (টেরিটোরিয়াল সি), ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার পেয়েছে। এ বিশাল অঞ্চলে কী পরিমাণ মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে ১৯টি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্লু ইকোনমি বা নীল সমুদ্রের অর্থনীতি হিসেবে খ্যাত এ খনিজ সম্পদ উত্তোলন করতে পারলে রাতারাতি ভাগ্য বদলে যাবে বাংলাদেশের। আগামী দিনের জ্বালানি নিরাপত্তাসহ অর্থনীতির সামগ্রিক পরিবর্তনে ব্ল- ইকোনমিতে (নীল অর্থনীতি) জোর দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকে নীল অর্থনীতি বাস্তবায়নে ১৪টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি গঠন করা হয়েছে ব্লু ইকোনমি সেল। এই সেল থেকে ব্লু ইকোনমির আওতায় সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এদিকে বঙ্গোপসাগর জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে।

বঙ্গোপসাগরের সীমানা নিয়ে বিরোধ ছিল তিন দেশের মধ্যে। ২০১২-তে মিয়ানমার, ২০১৪-তে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর ভাগাভাগি সমস্যা মিটেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রে বিরোধপূর্ণ ১৭টি ব্লকের ১২টি পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর এবার ভারতের দাবিকৃত ১০টি ব্লকের সবগুলোই পাওয়া যায়। এর সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চলের ১৯ হাজার পেয়েছে বাংলাদেশ আর বাকি ৬ হাজার দেয়া হয়েছে ভারতের অধিকারে। বাংলাদেশের ভাগে যা পড়েছে তা বিশাল। ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। পাশাপাশি ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অধিকার।

চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩০৪ নটিক্যাল মাইল মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ, অপ্রাণিজ সম্পদের সার্বভৌম কর্তৃত্ব এখন বাংলাদেশের। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্লু ইকোনমি বাস্তবায়ন হলে সাগরের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার হবে। দেশের চাহিদা পূরণ করে সামুদ্রিক খাবার বিদেশে রফতানি করা যাবে। অন্য দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এতে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দু’অঙ্কের ঘরে পৌঁছবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *