বন্যায় হালুয়াঘাট-ধোবাউড়ায় ৫৭ কোটি টাকা মূল্যের মাছ-পোনা ভেসে গেছে

বন্যায় হালুয়াঘাট-ধোবাউড়ায় ৫৭ কোটি টাকা মূল্যের মাছ-পোনা ভেসে গেছে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ায় বন্যায় প্রায় ৫৭ কোটি টাকার মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এতে দুই উপজেলায় ছয় হাজার ৮৭৫ জন খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবেন- এ নিয়ে চিন্তিত তারা।

জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, হঠাৎ বন্যায় হালুয়াঘাট উপজেলার ৬১৫০টি মাছের খামার সম্পূর্ণভাবে পানিতে ডুবে যায়। এখানে চার হাজার ২০ জন খামারির ১১২০ মেট্রিক টন মাছ ও ৫০ মেট্রিক টন পোনা পানিতে ভেসে গেছে। ফলে ২২ কোটি টাকার মাছ ও ৭৫ লাখ টাকার পোনার ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে, ধোবাউড়া উপজেলার ৪২৯৬টি মাছের খামার সম্পূর্ণভাবে পানিতে ডুবে যায়। এখানে দুই হাজার ৮৫০ জন খামারির ২১৪৫ মেট্রিক টন মাছ ও ১২ মেট্রিক টন পোনা পানিতে ভেসে গেছে। এর ফলে ৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকার মাছ ও ৫০ লাখ টাকার পোনার হয়েছে।

ধোবাউড়ার পোড়াকান্দুলিয়া গ্রামের মাছের খামারি কামরুল ইসলাম জানান, গত ১২ বছর ধরে খামারে দেশীয় মাছের চাষ করে আসছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খামারের পুকুর ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। শুক্রবার মধ্যরাতের পর তলিয়ে গিয়ে চাষের সমস্ত মাছ ভেসে গেছে। এর ফলে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ চলে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

তিনি আরও বলেন, মাছ চাষ করতে গিয়ে সরকারি দুটি ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। মাছ বিক্রি করে কিস্তি পরিশোধ করার কথা ছিল। এভাবে হঠাৎ বন্যায় সব পুকুর তলিয়ে গিয়ে মাছ ভেসে যাবে- এটা কল্পনাও করতে পারিনি। এখন ব্যাংকের ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবো, আর বন্যার পর কীভাবে খামারে মাছ চাষ আবারও শুরু করবো এই নিয়ে চিন্তায় এখন আর ঘুম আসে না।

ধোবাউড়ার ঘোষগাঁও গ্রামের মাছ চাষি আকরাম হোসেন জানান, এভাবে বন্যা হবে এটা কারও ধারণার মধ্যেই ছিল না। বন্যা থেকে রক্ষা পেতে আগাম প্রস্তুতি আমাদের মাছ চাষিদের নেওয়া ছিল না। এ কারণে বন্যায় আমাদের মাছ চাষিদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও জানান, অধিকাংশ মাছ চাষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মাছের চাষ করে আসছেন। এখন কীভাবে তারা ঋণ পরিশোধ করবে এটা কেউ ভেবে পাচ্ছে না।

হালুয়াঘাটের নড়াইল গ্রামের মাছ চাষি আব্দুল্লাহ জানান, মাছ চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহজ শর্তে ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। এর পাশাপাশি সরকারি ব্যবস্থাপনায় মৎস্য অধিদফতরের মাধ্যমে প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে চাষিরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক নাজিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বন্যাকবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের তালিকা নির্ণয়ের কাজ চলছে। তালিকা নির্ণয় শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

Related Articles