বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেবার প্রতিশ্রুতি ব্যত্যয়ের সুযোগ নেই : নরেন্দ্র মোদী

বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেবার প্রতিশ্রুতি ব্যত্যয়ের সুযোগ নেই : নরেন্দ্র মোদী

বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেবার প্রতিশ্রুতি ব্যত্যয়ের সুযোগ নেই : নরেন্দ্র মোদী

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : হঠাৎ করেই ভারত সরকার ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বাংলাদেশে জন্য টিকা প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর মাঝেই ভারতীয় গণমাধ্যম ইকনমিক টাইমস এর প্রকাশিত খবর আশার আলো জ্বেলেছে।

বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাবে, কারণ বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে নয়, জনস্বার্থে এই ভ্যাকসিন নিচ্ছে বাংলাদেশ। ভারত বাণিজ্যিক স্বার্থে ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এর সঙ্গে মানবিক কারণের বিরোধ হতে পারে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজস্ব সার্কেলে এই মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ইকনমিক টাইমস।
সেই সূত্র বলেছে, ভারতের নেতারা বাংলাদেশকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা কোনওভাবেই ভাঙার সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশ সেরামের চুক্তিতে ভারত সরকার পক্ষ না হলেও প্রথম থেকেই এই ব্যাপারে তাদের অনাপত্তি ছিলো। বরং সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া আছে, বাংলাদেশ থেকে এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শুরু হলেই যেনো দ্রুত ভ্যাকসিন পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাচ্ছে এই নিশ্চয়তা দিয়ে সেই সূত্র আরও জানায়, কখনই বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন না দেবার কথা ভাবেনি ভারতের পিএমও। এর আগে সোমবার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এর সিইও নাজমুল হাসান পাপনের বরাত দিয়ে দৈনিক আমাদের নতুন সময় জানিয়েছিলো, গত ১৭ ডিসেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সেও এই ব্যাপারে কথা হয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনাকে ভ্যাকসিন প্রদানের নিশ্চয়তা দেন নরেন্দ্র মোদী।

বিশেষজ্ঞদের মত

বাংলাদেশকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার তৈরি করোনার টিকা পেতে আরও সময় লাগবে। মূলত ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার করোনা ভ্যাকসিন এ মাসেই বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই দেশে করোনার টিকা আসতে পারে বলে একাধিকবার বলেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের যথা সময়ে টিকা পাওয়ার আশা এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেলো। টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘ভারত সে দেশের জনগণের জন্য টিকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত না করা পর্যন্ত বাংলাদেশকে টিকা দেবে না। এ বিষয়টি আমি অনেক আগেই বলেছিলাম, আমরা মে- জুনের আগে টিকা পাবো বলে মনে হয় না। এখন দেখা যাক, হয়তো মে-জুনের মধ্যে আমরা পেয়ে যাবো।’ আমাদের টিকা পাওয়ার আশা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেলো মন্তব্য করে কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘টিকার জন্য একক নির্ভরশীলতা এর কারণ।আমাদের উচিত ছিল একাধিক সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা,যেটা আমরা করিনি। আর কেবল যে করিনি তা-ই নয়, আমরা অবহেলাও করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশে সিরামের ভ্যাকসিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আমাদের অ্যাগ্রিমেন্টে যেভাবে বলা আছে, অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী ভ্যাকসিন পাবো।

বাংলাদেশ প্রথম থেকেই ভ্যাকসিন পাবে

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের করোনা ভ্যাকসিন পেতে কোনো সমস্যা হবে না। প্রথম থেকেই বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাবে। শ্রিংলা বলেন, সিরাম ইন্সটিটিউটের সিইও যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আমাদের নজরে এসেছে। তবে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। বাংলাদেশ এই ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে। এর আগে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ.কে. আব্দুল মোমেন জানান, ভারত বাংলাদেশকে যথাসময়ে ভ্যাকসিন দেবে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভ্যাকসিন পেতে দেরি হবে না

স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান বলেছেন, ‘করোনা ভ্যাকসিনের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের শীর্ষ পর্যায় অবগত আছেন। তাই আশা করি ভ্যাকসিন পেতে দেরি হবে না।’ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন জিটুজি (দুই সরকারের মধ্যে) পর্যায়ে না বেসরকারিভাবে আসবে, সেটা কোনও বিষয় নয়।’

উল্লেখ্য, ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার করোনা ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটির সরকার। রবিবার (৩ জানুয়ারি) এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সিরাম ইনস্টিটিউটের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এপি। রবিবার সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালা এপিকে বলেন, কয়েক মাসের জন্য ভ্যাকসিন রফতানির অনুমতি দেবে না ভারত। ভারতীয়রা যাতে যথাযথভাবে ভ্যাকসিন পায় সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই খবরে ভারতের কাছ থেকে ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, ‘ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, আমাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় যে চুক্তি হয়েছে সেটি পালন করা হবে। ওরা বলেছে ভ্যাকসিনের বিষয়ে অন্য ব্যান (নিষেধাজ্ঞা) থাকতে পারে। কিন্তু যেহেতু একদম উচ্চ পর্যায়, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলাপ করে এটা হয়েছে, কাজেই বাংলাদেশ প্রথম ভ্যাকসিন পাবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে যে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে সেটি এই সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকেই পাওয়ার কথা। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ হিসেবে পুরো তিন কোটি টিকার জন্য অগ্রিম ৬০০ কোটি টাকাও সেরামের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সব দেশেই টিকা রপ্তানির অনুমোদন আছে

টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়ার প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালা বলেছেন, ভারত থেকে সব দেশেই ভ্যাকসিন রপ্তানির অনুমোদন আছে। এক সাক্ষাৎকারে তার বক্তব্য নিয়ে দুদিন ধরে বিভ্রান্তি চলার পর মঙ্গলবার টুইট করে এ কথা জানালেন সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান। টুইটে তিনি লিখেছেন, যেহেতু সাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তাই তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করতে চান। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা মিলে করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করেছে, তার উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। কোভিশিল্ড নামের ওই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *