বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক, ধর্মান্ধ নয়: ধর্মমন্ত্রী

বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক, ধর্মান্ধ নয়: ধর্মমন্ত্রী

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলাল বলেছেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে কিছু অপতৎপরতা চালানো হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সবাইকে কঠোর হাতে দমন করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক, ধর্মান্ধ নয়।

রবিবার (২ জুন) সকালে জামালপুরের ইসলামপুরে মো. ফরিদুল হক খান দুলাল অডিটোরিয়ামে ধর্মীয় ও নৈতিকতা উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের অবদান, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, নারী নির্যাতন, যৌতুক, বাল্যবিবাহ ও মাদক প্রতিরোধে উলামা-মাশায়েখদের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ফরিদুল হক খান বলেন, ‘কিছু বিপথগামী লোক অতীতে কখনও জেএমবি, কখনও হরকাতুল জিহাদ, কখনও আল্লাহর দল ইত্যাদি নামধারণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে তাদের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এ দেশের জনগণ জঙ্গিদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই জঙ্গীবাদ আর কখনোই যেন বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ জনসংখ্যার বিবেচনায় বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। বর্তমানে এদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলমান। আর সৌদি আরব হলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জন্মভূমি। আল্লাহর ঘর কাবা ও মসজিদে নববীসহ মুসলিম ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানা স্মৃতিবিজড়িত একটি পূণ্যভূমি। আমাদের দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগ ও অনুভূতির সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সৌদি আরবের মানুষের প্রতি আমাদের বিশেষ সম্মান ও শ্রদ্ধা রয়েছে।’

সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ধর্মমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরব আমাদের প্রধান শ্রম বাজার। সে দেশে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা সর্বাধিক। আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স এবং সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে। অন্যদিকে, সৌদি সরকারের গৃহীত ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের শ্রমিকরা অন্যতম ভূমিকা রাখছে। এভাবে আমরা ভাতৃপ্রতিম দুইটি দেশ পারস্পরিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করছি।’

ফরিদুল হক খান আরও বলেন, ‘স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ দেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন। যা আজ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর খেদমতে অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ লাভ করেছে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর খেদমতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩০০টির নির্মাণ কাজ শেষে উদ্বোধন করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান। সরকারি অর্থায়নে এরূপ বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প সারা বিশ্বে অনন্য, যেটি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা করে দেখিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি রাষ্ট্রদূতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সৌদি সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশের আটটি বিভাগীয় শহরে আটটি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার পূর্বাচলে একটি মোট নয়টি আইকনিক মসজিদ স্থাপিত হতে যাচ্ছে। এছাড়া, সৌদি সরকার ঢাকায় অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে যাচ্ছেন।’ মন্ত্রী এসব কার্যক্রম বেগবান করার জন্য সৌদি রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুহাইলান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সৌদি আরবের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করে সৌদি সরকার ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছে। আমাদের এই ভিশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশের শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।’ তিনি বাংলাদেশের শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান হিসেবে উল্লেখ করেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দীক জানান, জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুহাইলান, জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রশিদ, জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ, ধর্ম সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মহা. বশিরুল আলম, জামালপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, ইসলামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল আবদুন নাছের বাবুল ও জামালপুর আইন কলেজের অধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আব্দুস ছালাম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *