বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানী

বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানী

আমিনুল ইসলাম কাসেমী : বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন আল্লামা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানী দামাত বারাকাতুহুম। এদেশের উল্লেখযোগ্য এক দ্বীনি ইদারা, জামেয়া মাদানীয়া বারিধারার খতমে বুখারীর অনুষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি প্রোগ্রামে তিনি যোগদান করেছেন। এদেশের খ্যাতনামা আলেমদের সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়েছে। আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের দাওয়াতে তিনি ফরীদ সাহেবের বাসায়ও গিয়ে ছিলেন।

শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানীকে (রহ.) দেখিনি। তাঁর বড় সাহেবজাদা ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী (রহ.) কে দেখেছি। তাঁর ছোট সাহেবজাদা আসজাদ মাদানী (দা.বা.) কে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আর সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী দামাত বারকাতুহুম হলেন শায়খুল ইসলাম মাদানী (রহ.) এর মেজো সাহেবজাদা।

শায়খুল ইসলাম মাদানী (রহ.)-কে না দেখলেও তবে তাঁর সোহবত প্রাপ্ত মানুষগুলোকে দেখার সুযোগ হয়েছে। হযরত মাদানী (রহ.) এর অন্যতম শাগরেদ আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ (রহ.) কে কাছে থেকে দেখার তাওফিক হয়েছে। আরো দেখেছি, মাদানী রহ. এর অন্যতম খলিফা আল্লামা আহমদ শফি (রহ.) কে। আরো দেখেছি, মাদানী (রহ.) এর আরেক খলিফা আল্লামা আব্দুল মোমিন (রহ.) শায়েখে ইমামবাড়ীকে।

এই সমস্ত মহা মনিষীদের কাছ থেকে মাদানী (রহ.) সংগ্রামী জীবনের গল্প, তাঁর ইখলাস, তাঁর বুজুর্গির কথা শোনা পড়েছে অসংখ্যবার। বিশেষ করে মাদানী এর প্রতিচ্ছবি আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ (রহ.) এর নিকটে বেশী জানা পড়েছে মাদানী এর জীবন- কথা। যিনি মাদানী এর সোহবতে থেকে তাঁর জীবনের অনেক কিছু কাজী সাহেব স্বচক্ষে দেখেছিলেন। এমনকি মাদানী (রহ.) এর ইন্তেকালের সময় তাঁর কাছেই ছিলেন।

মাদানী (রহ.) যেমন প্রতিভাবান আলেমেদ্বীন, যেমন প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ, তেমনী ছিলেন সুলুকের লাইনের মহা সম্রাট। চতুর্মুখি জ্ঞান সম্পন্ন একজন ব্যক্তিত্ব। যাকে বলে কামেল শখছিয়্যাত। পরিপুর্ণ একজন ব্যক্তি। সকল ফনুনাতে তাঁর দখল ছিল। এমন কোন সাবজেক্ট নেই, যে বিষয়ে হযরত মাদানীর জ্ঞান ছিল না।

মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) তো অনেক বড় কথা বলেছেন। অবশ্য তিনিও তো মাদানী (রহ.) এর শাগরেদ। বহুকাল তাঁর কাছে ছিলেন। মাওলানা ফরীদপুরী এমন কথাও বলেছেন, মাওলানা মাদানী এমন মেধা- ধী শক্তির অধিকারী ছিলেন, খোদা নাখাস্তা, দুনিয়ার সকল ফন্নের কিতাব যদি বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে তিনি সেসব কিতাবাদী পুনরায় রচনা করে দিতে পারতেন। এবং তাতে কোন প্রকার ভুল ভ্রান্তি হবে না।

মানে অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। যার কোন তুলনা তাঁর সমকালিন জামানার মধ্যে ছিল না। পুরো আরব-আজমের শায়েখ। পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলে ছিলেন। সবচেয়ে বড় এক অবদান মাওলানা মাদানীর, তিনি ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের মহানায়ক। এই ভারতবর্ষসহ বিশ্বের বহু রাষ্ট্র ব্রিটিশদের দুঃশাসন চলেছিল। বিশেষ করে আমাদের এই অঞ্চলেও ব্রিটিশ বেনিয়াদের দোর্দান্ড প্রতাপে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছিল। ঠিক তেমনি মুহুর্তে তাঁর শায়েখ, শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী (রহ.) রেশমী রুমাল আন্দোলনের ডাক দেন। যে আন্দোলনে তিনি সাড়া দিয়েছিলেন। শায়েখের সাথে ব্রিটিশদের হাতে বন্দী হয়ে মাল্টার জেলে যেতে হয়েছিল।

শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী (রহ.) এর ইন্তেকাল এর পরে সে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী (রহ.)। প্রিয় শায়েখদের আমানতকে হযরত মাদানী পরিপুর্ণ ভাবে হেফাজত করেন। কিঞ্চিৎ পরিমাণ অবহেলা তাতে করেননি।

ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনকে এক বিশাল জোয়ারে পরিণত করেছিলেন তিনি। যার কারণে তাঁর উপর নেমে এসেছিল জুলুম- নির্যাতনের খড়গ। বারবার ব্রিটিশদের কারাগারে যেতে হয়েছে তাঁকে। এক বার দুইবার নয়, অসংখ্যবার, বছরের পর বছর তাঁকে জেলে বন্দী থাকতে হয়েছে। মাওলানা মাদানীর সেই কোরবানীর বদৌলতে এই উপমহাদেশে স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়েছিল। মানুষ নিস্তার পেয়েছিল ব্রিটিশদের দুঃশাসন।

মোটকথা, মাদানী পরিবারের সীমাহীন অবদান এদেশ ও জাতির জন্য। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা এদেশ পেয়েছি বলা যায়। হযরত মাদানী এর ইন্তেকালের পরে তাঁর জানেশীন ছিলেন বড় সাহেবজাদা ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহ.। যিনি পিতার যোগ্য উত্তরসুরী ছিলেন। পিতার মত তিনিও বিশ্ব বরেণ্য হয়ে ওঠেছিলেন। দেশ ও জাতির কল্যাণে তিনি নিজেকে বিলীন করে দিয়েছিলেন।

ফেদায়ে মিল্লাত এমন ব্যক্তিত্ব ছিলেন, নিজ দেশের জনতার পাশাপাশি বিশ্ব মুসলিমের মুক্তির দিশারী বনে গিয়েছিলেন। আমাদের এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর বিশাল অবদান ছিল। এদেশকে স্বাধীন করাতে তিনি নিজের জীবন সঁপে দিয়েছিলেন। এমনি ভাবে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের বন্ধ মাদ্রাসাগুলো তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে খুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ফেদায়ে মিল্লাতের সে আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: তাঁর বয়ানে প্রশমিত হয় হৃদয়ের যাতনা | আমিনুল ইসলাম কাসেমী

ফেদায়ে মিল্লাতের ইন্তেকালের পরে এখন সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানী জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের ছদর। তিনি স্বীয় পিতা এবং বড় ভাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ-অনুকরণ করে যাচ্ছেন।

বর্তমান বিশ্বের ক্ষমতাধর মুসলিম নেতা হলেন আল্লামা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানী এবং মাওলানা মাহমুদ মাদানী। যারা তীব্র গতিতে ছুটে চলেছেন। মুসলিম বিশ্বের যে কোন সমস্যা মোকাবেলায় তাঁরা এগিয়ে চলেছে।

সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানী সেদিন আসলেন আমাদের বাংলাদেশে। বারবার তারা ছুটে আসেন আমাদের কাছে। অবশ্য বর্তমানে আমাদের দেশে তাদের ইসলাহী মিশন নিয়ে বেশী আসেন। হাজারো আলেমদের শায়েখ তিনারা। হযরত মাদানী রহ. এবং ফেদায়ে মিল্লাত যেভাবে কাজ করেছেন, আলেম ও আম জনতার মাঝে। তাঁরাও সেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষের দ্বারে ঘুরছেন।

আরশাদ মাদানী সাহেবকে দেওবন্দে দেখেছি, তিনি আমার উস্তাদ। যেন অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর তুলনা হয় না। মনে হয় পিতার কোন সিফাত তাঁর মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি যখন নাজেমে তালীমাত ছিলেন,অত্যন্ত কঠোর ভাবে পরিচালনা করতেন। পুরো দারুল উলুমের হাজার হাজার ছাত্রকে একাই কন্ট্রোল করতেন তিনি।

হুজুর এখন অনেক বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। তারপরেও থেমে নেই তাঁর সফর। মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নেক হায়াত দান করেন। আমিন।

লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *