- আমিনুল ইসলাম কাসেমী
কী অপরুপ সুন্দর লিখনী। স্নিগ্ধতায় ভরা। মায়ের রুপের ছোঁয়া শব্দে শব্দে। ফুটে ওঠেছে যেন ভাষা-সাহিত্যের বসন্ত। যেন তেন মা নয়। আবার যেন তেন সন্তান নয়। সকলেই নিজ অবস্থানে শ্রেষ্ঠত্বের মর্য্যাদায়। আসলেই তিনি ছিলেন রত্নগর্ভা। যে রত্নগুলো তিনি গর্ভে ধারণ করেছেন, তাঁরা এখন জগদ্বিখ্যাত। দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁদের খ্যাতি। বিশ্ব পরিমন্ডলে তাঁরা সুউচ্চ মার্গে আসীন।
‘মা আমার সর্বংসহা সৌম্য ধরিত্রীর প্রকৃতি’। সামান্য একটা নিবন্ধে যে আলোর ঝলকানি। যে সাহিত্যরস। শব্দের গাঁথুনি। প্রাঞ্জল ভাষা ব্যবহার করেছেন। তাতে শ্রোতাকে বিমোহিত করে দেয়। পড়তে পড়তে ভাবনার জগতে চলে যায়। নিজেকে হারিয়ে ফেলে। তাঁর লিখনীগুলো এমনি। সেই আশির দশকের শেষের দিকে ’ইসলামে শ্রমিকের অধিকার’ পড়েছিলাম। এরপর ‘মাসিক পাথেয়’ পড়তাম নিয়মিত। বিশেষ করে তাঁর সম্পাদকীয় কলাম পড়া হয়েছে সব সময়। তখন থেকে আমার বদ্ধমুল হয়েছে, বাংলা ভাষা সাহিত্যের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। যার উচ্চাঙ্গের সাহিত্য, ভাষার অলংকার, নান্দনিক উপস্হাপনা মানুষকে হয়রান করে দেয়।
আলেম সমাজের গর্ব তিনি। তাঁর লিখনীগুলো তুলনাহীন। যেমন তাঁরই উস্তাদ বাংলা ভাষার সুপন্ডিত আলেম আল্লামা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ (রহ.) জগতে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। আর তিনি তো তাঁর উস্তাদ থেকে অনেক অগ্রসর। যেটার সার্টিফিকেট কাজী সাহেব নিজেই দিয়ে গেছেন। এজন্য আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের লিখনী যেন কথা বলে। তাঁর কলমের ডগায় ভেসে ওঠে বিশ্ব বিখ্যাত লেখকদের রুপ। বিশ্ব জোড়া লেখকগণ যেভাবে কালের স্রোতে মহা মনীষীদের কাতারে ওঠে এসেছেন। তেমনি তিনিও যেন সেই জগদ্বিখ্যাত লেখকদের কাতারে নাম লেখিয়েছেন।
এই তো কদিন আগে দুইহাজার পৃষ্টার সীরাত গ্রন্হ লিখেছেন। যেটা অচিরেই আমাদের হাতে চলে আসবে। এভাবে একটারপর একটা লিখনী এসে যাচ্ছে আমাদের সামনে। কোনটা কিন্তু কম নয়। একটার থেকে আরেকটা সেরা।
প্রকৃতি তার অপরুপ সৌন্দর্য যেমন ঢেলে দিয়েছে। ভ্রমণপিপাসুদের মন কেড়ে নেয়। যৌবনের উচ্ছলতা, যৌবনের বসন্ত দেখে পর্যটককে পাগল করে ফেলে। তেমনি আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের কলমের ছোঁয়াতে সাহিত্যের অপরুপ সৌন্দর্য। সাহিত্য যেন মেদহীন জীবন লাভ করে। সুঠাম- সুদৈর্ঘের জীবন ফিরে পায়।
একজন দেওবন্দী আলেমের কলমের গতি এমন বিরামহীন ভাবে ছুটে চলে, যেটা কল্পনাতীত। কারো কল্পনাতে আসে না। তাছাড়া এমনই এক সময় তিনি কলম মেরামত করেছেন। যখন পদে পদে ছিল ছিল বাঁধা। কলমকে আটকে দেওয়া হত। গতি স্লথ করা হত। জামার আস্তিন ধরে টেনে নামানো হত। তারপরেও তিনি কিন্তু বীরদর্পে কলম চালিয়েছেন। পিছপা হননি।
সবচেয়ে বড় মজার বিষয় হলো, এক ঝাক যোগ্য কলম সৈনিক তিনি তৈরী করে গেছেন। যারা পুরো সাহিত্যাঙ্গন এখন দপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই দেশের ইসলামী সাহিত্যের ময়দানে এখন যারা সেরা, এঁরা তো তাঁরই হাতের স্পর্শে গড়ে ওঠেছে। আজকের জাতীয় দৈনিকগুলোর অধিকাংশ ইসলামী পাতা, ধর্মপাতা, জীবন ও ইসলাম পাতা যে নামেই আছে, এর অধিকাংশ সম্পাদক, লেখক, আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের সোহবত প্রাপ্ত। কেউ সরাসরি আবার কেউ কারো মধ্যস্থতায় তাঁর শিষ্যত্বগ্রহণ করেছেন। বতর্মানের প্রভাবশালী অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং পত্রিকার ইসলামী কলাম লেখক তাঁরই ছোঁয়াতে গড়ে ওঠেছে।
এমনই এক প্রবাদ পুরুষ। বাংলা সাহিত্যের এমনই একজন দিকপাল। যার অবদান অনস্বীকার্য। কোন ক্রমেই হয়ত অস্বীকার করা যাবে না। যেভাবে ইলমী ময়দানে দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী কাল বুখারী শরীফের দরস দিচ্ছেন। সুলুকের লাইনে যুগের পর যুগ মেহনত করছেন। আত্মমানবতার খেদমতে নিজেকে বিলীন করে দিচ্ছেন। তেমনী বাংলা ভাষা সাহিত্যে অসামান্য অবদান তাঁর। আলেম, উলামা, তলাবা এবং সাধারণ মানুষের পিপাসা নিবারণ করছেন তিনি।
অসি এবং মসির লড়াই এর কথা শুনেছি। দেখিনি। তবে তিনি যেভাবে কলম চালিয়ে যাচ্ছেন। মসির লড়াইতে তিনি বিজয়ী। একজন সফল সৈনিক। হার না মানা মুজাহিদ। মর্দে মুজাহিদ হিসাবে তাঁর অবস্হান এখন। এবং দৃঢ় পদে ছুটে চলেছেন। আমরা আশাবাদী আরো উচ্চতায় তিনি যাবেন। বিশ্ব বিখ্যাত লেখকদের মিছিলের অগ্রভাগে তাঁর স্হান হবে। এই কামনা করি। পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে দুআ করি, আল্লাহ তায়ালা তাঁর হায়াতে বরকত দান করেন। আমিন।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট