পাথেয় টোয়েন্টিপোর ডটকম : পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়েই চলেছে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না বাজার। তরতর করে বাড়ছে উত্তাপ। কেন? বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। অন্যথায় পেঁয়াজের দাম কমানো কঠিন হবে। দেশের কৃষিখাতে পেঁয়াজের প্রয়োজনীয় গবেষণা হয় না। বাজারে পেঁয়াজসহ প্রায় সব ধরনের তরিতরকারির দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের আর্থিক কষ্টের কারণ হয়েছে। পেঁয়াজের দাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন সরকারের কর্মকর্তারা। সেই ২৪ ঘণ্টার পর পেরিয়ে গেছে পাঁচ দিন। এখনো সরকারের কথার কোনো প্রভাব পড়েনি পেঁয়াজের বাজারে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের সরবরাহ কম। নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই। আমাদের দেশে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের উৎপাদন কম বলে আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর আংশিক নির্ভরশীলতা আছে; প্রধানত ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর আমাদের বাজারের পেঁয়াজের দাম কিছুটা নির্ভরশীল।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল, মুগদা, খিলগাঁও, মালিবাগসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। প্রতিবেশী দেশ ভারতে পেঁয়াজের রফতানিমূল্য তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মূলত এর প্রভাবেই দেশের বাজারে গত ২০ দিনে ৮০ টাকায় উঠেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। বন্দরে কেনার দাম বেশি পড়ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আজকে (রোববার) আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি করছি ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়, আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। গত এক সপ্তাহে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ টন। চাহিদার বিপরীতে দেশের উৎপাদন হয় ১২ থেকে ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ। বাকি ১০ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে। এদিকে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নির্দেশে ন্যায্যমূল্যে ট্রাকে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে ৪৫ টাকা দরে আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি।
ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়লেই দেশি পেঁয়াজের মজুদদারি বাজারে যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে, দেশি পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ মূলত এটাই। সেজন্য চাহিদা অনুযায়ী অন্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। অর্থাৎ আমদানি করা পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশের ভেতরে উৎপাদন আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে সরকারকে নানারকমের সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষিতে ফসলবৈচিত্র্য অবশ্যই বাড়াতে হবে, শুধু ধানের ওপর প্রাধান্য দিলে আর চলবে না। আমরা আশা করি, বাজার স্থিতিশীল রাখতে অবশ্যই নিয়মিত মনিটরিং করা হবে।
ইনসার্ট : ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়লেই দেশি পেঁয়াজের মজুদদারি বাজারে যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে, দেশি পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ মূলত এটাই। সেজন্য চাহিদা অনুযায়ী অন্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। অর্থাৎ আমদানি করা পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশের ভেতরে উৎপাদন আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি