বাড্ডা ইউলুপ চালু হচ্ছে আগস্টে

বাড্ডা ইউলুপ চালু হচ্ছে আগস্টে

নিজস্ব প্রতিবেদক : হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে আগামী আগস্টে চালু হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত বাড্ডা ইউলুপ। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে তিন বছর পেরিয়ে এ প্রকল্পের কাজ ৯৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী দেড় মাসের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে মালিবাগ-নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা ও যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে রামপুরা ও বাড্ডা প্রান্তে দুটি ইউলুপ নির্মাণের পরিকল্পনা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ জুন রামপুরা প্রান্তের (দক্ষিণ) ইউলুপটি চালু হয়। কিন্তু বাড্ডার দ্বিতীয় ইউলুপটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। বাড্ডা ইউলুপের অবস্থান গুলশান-বাড্ডা সংযোগ সড়কের কাছে মেরুল বাড্ডায়। এটি দৈর্ঘ্যে ৪৫০ মিটার, প্রস্থে ১০ মিটার। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি শুরু হলেও প্রায় ৪০ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এর প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ প্রকৌশল নির্মাণ ব্যাটালিয়ন। নির্মাণ কাজের দায়িত্বে আছে স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।

ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ইউলুপের দুই প্রান্তের প্রবেশপথ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে রাখা। দুই পাশের র‌্যাম্পের কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। মাঝখানের বক্সগুলো ঢালাই ও ফিনিশিংয়ের কাজও প্রায় শেষের দিকে। তবে ইউলুপ নির্মাণের ধীরগতির কারণে নিচের সার্ভিস রোডের অবস্থা বেহাল। এবড়ো-থেবড়ো রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। বৃষ্টি হলেই গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে কাদা।

ইউলুপের দুই পাশে মাটি স্তূপ করে রাখা। যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে কনক্রিট ও নির্মাণসামগ্রী। ফলে এই রুটে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে ইউলুপের নিচে পিলারের ফাঁকের সরু রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দুই পাশের গাড়ি একলেনে চলতে গিয়ে তৈরি হচ্ছে যানজট। সকাল ও বিকেলে অফিস আওয়ারের শুরু ও শেষের দিকে এই যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় মানুষকে।

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পটির কাজ চলায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে এর আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। যাওয়া-আসার পর্যাপ্ত রাস্তা না থাকায় কিছু কিছু দোকান বন্ধই রাখতে হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল মতিন বলেন, দুই বছর ধরে দোকানে কোনো খরিদ্দার নেই। একবার মনে করি অন্য জায়গায় চলে যাব। কিন্তু একবছর আগে থেকেই শুনছিলাম, ইউলুপ চালু হয়ে যাবে। তাই এই জায়গা ছাড়া হয়নি। তাতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে পারব বলে মনে হয় না।

মেরুল বাড্ডার বাসিন্দা ইমরুল কবির বলেন, বর্ষার সময় এখানকার রাস্তা যেন পুকুর হয়ে যায়। আর গরমের দিনে বা শীতে ধূলার কারণে শ্বাস নেওয়া কষ্ট হয়ে যায়। প্রকল্প শুরুর পর থেকে এই যন্ত্রণার মধ্যে আমরা আছি। জানি না, আর কতদিন এই কষ্ট ভোগ করতে হবে।

নতুন বাজার-পল্টন রুটে চলাচলকারী বন্ধু পরিবহনের চালক শরিফ হোসেন বলেন, ইউলুপের নিচের এই রাস্তায় অধিকাংশ সময় যানজট লাগে। রাস্তা এতটাই খারাপ যে একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এই রুটের নিয়মিত যাত্রী হামিদা বানু বলেন, মালিবাগ রাস্তার সমস্যা খানিকটা কমলেও এই ইউলুপের কারণে রাস্তার উন্নতি হচ্ছে না। গাড়ি এমনভাবে ওঠানামা করে, মনে হয় এই বুঝি উল্টে যাবে।

হাতিরঝিল প্রকল্পের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অংশের পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া বলেন, জায়গা নিয়ে মামলার কারণে ইউলুপ নির্মাণে দেরি হয়েছে। তা ছাড়া মাটির নিচে বিভিন্ন সেবা সংস্থার তার সরিয়ে নিতে দেরি হয়েছে। তবে সব সমস্যা মিটিয়ে বর্তমানে প্রায় ৯৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী আগস্টের মধ্যেই এই ইউলুপ চালু করতে পারব।

জামাল আক্তার আরো বলেন, যে কাজটুকু বাকি আছে, তা শেষ করে ইউলুপ চালুর আগেই দুই পাশের রাস্তা মেরামত করা হবে এবং কার্পেটিং করে দেওয়া হবে। বিভিন্ন জটিলতায় কাজে দেরি হওয়ায় মানুষের কিছু ভোগান্তি হয়েছে। তবে ইউলুপ উদ্বোধন হয়ে গেলে এই এলাকায় চলাচল নির্ঝঞ্ঝাট হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *