বাতিল হলো সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমই

বাতিল হলো সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমই

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে সরকার পুরো স্কিমই বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী এমন ঘোষণা দেন।

এরপর দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সর্বজনীন পেনশনের “প্রত্যয়” স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে পুরো “প্রত্যয়” স্কিমই বাতিলের কথা জানিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এ মর্মে জানানো যাচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয়, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থার কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রত্যয় স্কিমসহ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।”

এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “পেনশন সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।”

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত ১৩ মার্চ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত ও বিধিবদ্ধ সংস্থায় নতুন যোগ দেওয়া চাকরিজীবীদের জন্য প্রত্যয় স্কিম চালু করে। বলা হয়, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে যারা এসব সংস্থায় নতুন যোগ দেবেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রত্যয় প্রযোজ্য হবে। এর পর এই স্কিম থেকে নিজেদের বাদ দিতে থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। গত ১ জুলাই থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, পরীক্ষা বর্জনসহ সব ধরনের কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।

এর আগে দীর্ঘদিন ধরে এ ইস্যুতে আন্দোলন করে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এর অংশ হিসেবে দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছিল কর্মবিরতি। এরমধ্যে বৈঠক হয় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে। তবে তাতে কোনো সমাধান আসেনি। আজ নতুন এ ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে সরকারের সর্বজনীন পেনশন স্কিম “প্রত্যয়”-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর প্রতিবাদে আন্দোলনের ঘোষণা দেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের দাবি ছিল—সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি বাতিল করা। এর সঙ্গে যোগ করা হয় ২০১৪ সালে আশ্বাস দেওয়া শিক্ষকদের জন্য বিশেষ গ্রেড (সুপার গ্রেড-সিনিয়র সচিব সমমান) নিশ্চিত করা। জুনের মধ্যে দাবি না মানলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যান তারা। সব ধরনের ক্লাস পরীক্ষা ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হয় তাদের আন্দোলনের ফলে।

এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

উল্লেখ্য, চলমান অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকেই সর্বজনীন পেনশনের “প্রত্যয়” স্কিম যাত্রা শুরু করে। এর আগে সমাজের সব স্তরের মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনার লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইন করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এর আলোকে সর্বজনীন পেনশনের “প্রত্যয়” স্কিমে অন্যদের পাশাপাশি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও তার অঙ্গসংগঠন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য “প্রত্যয়” স্কিম প্রবর্তন করা হয়।

সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন

Related Articles