বাবরী মসজিদ নিয়ে চূড়ান্ত লড়াই করতে প্রস্তুত হিন্দ জমিয়তুল উলামা

বাবরী মসজিদ নিয়ে চূড়ান্ত লড়াই করতে প্রস্তুত হিন্দ জমিয়তুল উলামা

পাথেয় রিপোর্ট : ৩০জুন শনিবার নয়া দিল্লী মাদানী হলে জমিয়তে উলামা হিন্দের একটি সাধারণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নয়া দিল্লীর বাহাদুরশাহ জাফর মার্গ-এ- জমিয়তে উলামা হিন্দের চেয়ারম্যান মাওলানা কারী সৈয়দ মুহাম্মদ উসমান মানসুরপুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বিশেষ বৈঠকে বাবরি মসজিদ সম্পৃক্ত আইনি বিষয়ক বর্তমান অবস্থা, দেশের বর্তমান সমস্যা এবং আসামে নাগরিকত্বের গুরুত্ব ও ফিলিস্তিনিদের চলমান মানবিক সংকট বিষয়ে সার্বিক আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

১. দেশে চলমান সহিংস পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে সংযুক্ত কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক সরকার এবং জেলাগুলোর সাথে সংযুক্তি ও যোগাযোগ রক্ষা করবে।

২. ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইসলামী নীতিমালা দ্বারা অ-মুসলিমদেরকে বোঝানোর জন্য হিন্দি, ইংরেজি ও আঞ্চলিক ভাষায় (লিটারেচার) সাহিত্য রচনা করা উচিত।

৩. বাবরি মসজিদ সম্পৃক্ত মামলা বিষয়ক যে কোনও প্রয়োজনে জমিয়তে উলামা হিন্দ সব উপায়ে ভারত সরকারকে সাহায্য করবে।

৪. আসামে সঠিক নাগরিকত্বের সমস্যাটি অত্যন্ত গুরুতর হয়ে উঠেছে, তাই জমিয়তে উলামা হিন্দ মনে করে যে, সুপ্রিম কোর্টে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে আদালতে পূর্ণ বিচার করা উচিত।

৫. ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে জমিয়তে উলামা হিন্দ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফর্মুলা, “শতাব্দীর চুক্তি” প্রত্যাখ্যান করেছে এবং শীঘ্রই তাদের নিজ এলাকা ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা উচিত এ মতামত ব্যক্ত করে।

৬. সৌদির চলমান সংস্কার সম্পৃক্ত বিষয়ে একটি কমিটি গঠন।

৭. ১০০ বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে মনীষা আলেমদের সৌজন্যে সেমিনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত।

জমিয়তে উলামা হিন্দের জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা মাহমুদ মাদানি সাধারণ সভার এ বৈঠকে দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পর সভায় অংশগ্রহণকারী সকল সদস্যই গভীর চিন্তাভাবনা ও কৌশলের সঙ্গে বর্তমানে চলমান যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবেলা করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এরসাথে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, দেশে চলমান সহিংস পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে সংযুক্ত কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক সরকার এবং জেলাগুলোর সাথে সংযুক্তি ও যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। এছাড়াও সাধারণ এ সভায় ‘দূরত্বকে’ পারস্পরিক ক্ষোভ এবং ভুল বোঝাবুঝির একটি প্রধান কারণ বলে বিবেচিত করা হয়।

তাই জমিয়তে উলামা হিন্দ পরস্পরে এ দূরত্ব নিরসনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। আর এ কারণেই ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইসলামী নীতিমালা দ্বারা অ-মুসলিমদেরকে বোঝানোর জন্য হিন্দি, ইংরেজি ও আঞ্চলিক ভাষায় (লিটারেচার) সাহিত্য রচনা করা উচিত বলে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

পরস্পর এ দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব নিরসনে ম্যানুয়াল ইস্যুগুলোয় সামাজের সেবায় মনোযোগী হতে হবে। মুসলমানদের মধ্যে ‘ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির অনুসরণ’ সৃষ্টির জন্য বক্তৃতা ও লিখনির মাধ্যমে কাজ করতে হবে। এ সবকটি বিষয়কে কার্যত রূপ দেয়ার জন্য খুব শীঘ্রই জমিয়তে উলামা হিন্দ বিভিন্ন জেলার দায়িত্বশীলদের নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করবে বলেও জানা যায়।

জমিয়তে উলামা হিন্দের সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ

বাবরি মসজিদ সম্পৃক্ত আইনি বিষয়ক বর্তমান অবস্থা এবং আসামে নাগরিকত্বের গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। বাবরী মসজিদ মামলার বর্তমান অবস্থা ও পরিস্থিতির ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন মাওলানা মাহমুদ মাদানী এবং মাওলানা নিয়াজ আহমেদ ফারুকী সাহেব। এ বিষয়ে সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, এ মামলায় যদি কখনও কোনও ধরণের প্রয়োজন পড়ে জমিয়তে উলামা হিন্দ সর্বাবস্থায় তা করতে প্রস্তুত। এছাড়াও যেহেতু আসামে সঠিক নাগরিকত্বের সমস্যাটি অত্যন্ত গুরুতর হয়ে উঠেছে, তাই জমিয়তে উলামা হিন্দ মনে করে যে, সুপ্রিম কোর্টে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে এ মামলা লড়া হবে।

উল্লেখ্য, জমিয়তে উলামা হিন্দ বিগত দেড় বছর ধরে এ সম্পৃক্ত মামলাটি লড়ে আসছে। সম্প্রতি একটি প্রতিনিধি দল জমিয়তের প্রচেষ্টায় আই,এস,আই এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হোম সেক্রেটারিসহ বেশ ক’জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাত করে ‘আর,সি’ প্রক্রিয়ায় অপ্রয়োজনীয় শর্তাবলী বৃদ্ধির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

জমিয়তে উলামা হিন্দের ১০০বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশ বাস্তবায়ন সম্পর্কিত আলোচনায় মাওলানা মাহমুদ মাদানি এবং মাওলানা মুইয উদ্দীন এর সাথে সম্পৃক্ত সব বিষয় সাধারণ সভায় উত্থাপন করে করণীয় সম্পর্কে উল্লেখ করেন।
সভায় উপস্থিত প্রত্যেক সদস্যবৃন্দও মনীষা আলেমদের সৌজন্যে আয়োজিত এ সমাবেশ বাস্তবায়নে পূর্ণ সম্মতি জ্ঞাপন করে প্রাদেশিক ও জেলা পর্যায়ে জমিয়তের কনফারেন্সের উপর জোর দিয়েছেন।

সভায় ফিলিস্তিন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ এক আলোচনায় জেরুজালেমে আমেরিকার অবৈধ এম্ব্যাসি স্থাপনকে বিশ্ব জনমত, জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক আইন এবং চুক্তি ভঙ্গের স্পষ্ট অপমান ও বিরুদ্ধাচরণ বলে মনে করেন জমিয়তে উলামা হিন্দ। এছাড়াও ফিলিস্তিনের শহরগুলোতে লাগাতার ইসরাইলের নৃশংসতা ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞে গভীর শোক ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়। সভায় বক্তারা মনে করেন, মার্কিন সরকার ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ উপেক্ষা করে পুরো দুনিয়ায় নিজস্ব মার্কিননীতি চালু করে তার দূতাবাস বন্ধ রাখে।

এরই ভিত্তিতে ভারতের বর্তমান সরকারের সাথে কেন্দ্রীয় সরকার দাবী করছে যে, বৈধ পন্থায় ফিলিস্তিনীদের সাহায্যে তারা যেকোনো অবস্থায় এগিয়ে আসবে। ফিলিস্তিন সঙ্কট, আরব ও অন্যান্য প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক বাহিনীর যৌথতার ভিত্তিতে ইসরাইলি আগ্রাসন, প্রতারণা, যুদ্ধাপরাধ ও অবৈধভাবে মৌলিক সম্পদ দখল করার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস আদালতে মামলা দায়ের করা হবে। মসজিদুল আকসা শুধু ফিলিস্তিনীদের সাথেই সম্পৃক্ত নয় বরং পুরো ইসলামি বিশ্বের প্রেম-ভালোবাসা এর সাথে জড়িয়ে। তাই আমরা হিন্দুস্থানের মুসলমানদের কাছে নিবেদন করছি তারা নিজেদের ট্রাভেলসে দ্রুত মজিদুল আকসা সফরকে শামিল করে নেয় যাতে মসজিদুল আকসার সঙ্গে আমাদের আত্মা ও দ্বীনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রকাশ পায়। ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে জমিয়াত উলামা হিন্দ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফর্মুলা, “শতাব্দীর চুক্তি” প্রত্যাখ্যান করেছে এবং শীঘ্রই তাদের নিজ এলাকা ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা উচিত বলে মতামত ব্যক্ত করে।

সভায় সৌদি আরবে সংস্কার নামে গৃহীত আধুনিক পদক্ষেপের ব্যাপারেও আলোচনা করেছে এবং এর ভিত্তিতে একটি কমিটিও গঠন করেছে যা সংস্কার সম্পৃক্ত আধুনিক এ পদক্ষেপের সব বিষয়ের রিপোর্ট পেশ করবে। কমিটির সদস্য মুফতী মুহাঃ সালমান মানসুরপুরি, মাওলানা সালমান বিজনৌরি, মাওলানা নিয়ায আহমেদ ফারুকী।

সাধারণ এ বৈঠকে সভাপতি মহোদয় ছাড়াও নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন : মাওলানা মাহমুদ মাদানি, জেনারেল সেক্রেটারি জমিয়তে উলামা হিন্দ। মাওলানা হাসিব সিদ্দিকী, কোষাধ্যক্ষ জমিয়তে উলামা হিন্দ। শাকীল আহমেদ সায়ীদ, এডভোকেট সুপ্রিমকোর্ট। মাওলানা হাফেজ পীর সাব্বির আহমেদ, সভাপতি জমিয়তে উলামা হিন্দ, তেলেঙ্গানা অন্ধপ্রদেশ। মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ সালমান মানসুরপুরী, উস্তাযুল হাদীস জামিআ কাসীমিয়া শাহী মুরাদাবাদ। মাওলানা সালমান বিজনৌরি, উস্তাদ দারুল উলুম দেওবন্দ। মাওলানা রহমত উল্লাহ মীর কাশ্মীরি। মাওলানা মতিনুল হক উসামা, সভাপতি জমিয়তে উলামা হিন্দ ইউ,পি। মাওলানা হাফেজ নাদিম সিদ্দীকি, সভাপতি জমিয়তে উলামা মহারাষ্ট্র। মাওলানা মুফতী আহমদ দিওয়ালা, গুজরাট। মাওলানা মুহাঃ কাসেম, সভাপতি জমিয়তে উলামা বিহার। মাওলানা কারী শওকত আলী বেট। মাওলানা মুহাঃ রফিক মাযহারি, সভাপতি জমিয়তে উলামা গুজরাত। মাওলানা মুফতী জাবেদ ইকবাল, সহসভাপতি জমিয়তে উলামা বিহার। কারী মুহাঃ আমীন, সভাপতি জমিয়তে উলামা রাজস্থান। মাওলানা মুহাঃ আসলাম ফারুকী, সভাপতি জমিয়ত উত্তরখণ্ড। মাওলানা মুহাঃ আরশাদ আযমী, উস্তাদ দারুল উলুম দেওবন্দ। ডক্টর মাসুদ আহমেদ আযমী। মাওলানা মুহাঃ কালীমুল্লাহ খান কাসেমী। মুফতী হাবীবুর রহমান, এলাহাবাদ। মাওলানা সাইয়িদ সিরাজ উদ্দিন, পরিচালক নদওয়া আজমির। মাওলানা মুহাঃ আকেল। মাওলানা আলী হাসান মাযহারি, শিক্ষাসচিব জমিয়তে উলামা পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল। হাজী মুহাঃ হারুন, ভুপাল। মাওলানা নিয়াজ আহমেদ ফারুকী, এডভোকেট। মুফতী আঃ রহমান সাদাত, সভাপতি জমিয়তে উলামা আমরুহি। মুফতি সাইয়িদ মুহাঃ আফফান মানসুরপুরি। ডক্টর সায়ীদ উদ্দীন কাসেমী। মাওলানা আব্দুল কাদের,আসাম। মুয়ীয উদ্দীন আহমেদ, মডারেটর শরিয়াহ হিন্দ। মাওলানা হাকীমুদ্দীন কাসেমী, সেক্রেটারি জমিয়তে উলামা হিন্দ।

______________________________________/

অনুবাদ ও গ্রন্থনা : কাউসার মাহমুদ
তথ্য সূত্র : মুম্বাই উর্দূ নিউজ, তাছীর, ডেইলি সাহাফাত দিল্লী, আবাদনামা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *