বাসচাপায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর প্রতিবাদে রাস্তায় শিক্ষার্থীরা

বাসচাপায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর প্রতিবাদে রাস্তায় শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে অবস্থান নিয়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পুরো ঢাকা প্রায় স্থবির।

দুই বাসের রেষারেষির সময় গত রোববার রাজধানীর কুর্মিটোলায় উড়াল সেতুর ঢালে রাস্তার পাশে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের ওপর বাস তুলে দেন জাবালে নূর পরিবহনের চালক। এতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত এবং আরও নয়জন আহত হয়। আহত শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে সিটি কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা কলেজ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজসহ ধানমন্ডি ও আশপাশের কয়েকটি কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করছে। পুলিশের (ট্রাফিক) ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আকরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কাঁটাবন-বাটা সিগন্যাল মোড়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। ধানমন্ডি থেকে শাহবাগমুখী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সব গাড়ি পান্থপথ হয়ে ঘুরে যাচ্ছে। বিক্ষোভস্থলে পুলিশ রয়েছে।

রামপুরা ব্রিজে রাজারবাগ এলাকায় বিভিন্ন স্কুল কলেজে শিক্ষার্থীরা এবং শান্তিনগর মোড়ে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। আগারগাঁও এলাকায়ও রাস্তায় নেমে এসেছে শিক্ষার্থীরা। মতিঝিলে শাপলা চত্বরের সামনে অবস্থান নিয়েছে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপুর থেকে ওই কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী শাপলা চত্বরের সামনে জড়ো হন। শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ‘বিচার চাই’ ‘বিচার চাই’ স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা। ফলে যাত্রাবাড়ী, পল্টন, বিজয়নগর এবং শাহবাগ থেকে মতিঝিলে আসার পথ বন্ধ রয়েছে ।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদের সরিয়ে দিতে চেষ্টা করছে। এর আগে সকাল ১০টা থেকে কমার্স কলেজসহ আশপাশের বেশ কিছু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বরের রাস্তায় অবস্থান নেয়। সাড়ে ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ওই পথে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। কিছু বাস যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের তাড়ার মুখে গতিপথ পরিবর্তন করেন চালকেরা। তবে স্কুলগামী বাস ও শিক্ষার্থী বহনকারী প্রাইভেট কারগুলোকে যেতে দেওয়া হয়।

এ সময় মিরপুর-১, ২, ১০ নম্বর গোল চত্বর, কাজীপাড়া ও ১১ নম্বর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে পুরো এলাকা স্থবির। এসব এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরল কেন, সরকার জবাব চাই’, ‘আমার বোন মরল কেন, সরকার জবাব চাই’—এমন বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। ৪০০ থেকে ৫০০ শিক্ষার্থী পুরো এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিরপুর এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে আরও শিক্ষার্থী এসে এই বিক্ষোভে যোগ দেয়। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলে তারা বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেয়। এখন এসব সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও গাড়ির সংখ্যা কম।

সকালের দিকে শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধনের উদ্দেশ্যে রাজধানীর হোটেল র‍্যাডিসনের সামনে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফার্মগেটে বাবুল টাওয়ারের সামনে স্থানীয় কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। কিছু সময় পর শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। তবে ফার্মগেট এলাকায় এখন শুধুমাত্র বিআরটিসির বাস চলতে দেখা যাচ্ছে।

শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে গতকালও বিমানবন্দর সড়ক, এমইএস, জিয়া কলোনি চেকপোস্ট, শেওড়া এলাকায় থেমে থেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে নয়টা বাজতে না-বাজতেই বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হতে শুরু করে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে কুর্মিটোলায় হোটেল র‍্যাডিসনের উল্টো দিকে রোববারের দুর্ঘটনাস্থলে শ খানেক শিক্ষার্থী জড়ো হয়। তারা সড়ক অবরোধ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে উত্তরাগামী বাসগুলোতে তুলে দেয় পুলিশ। কিন্তু সাড়ে ১০টা বাজতে না-বাজতেই রমিজ উদ্দিন কলেজসহ আশপাশের অন্তত ১০টি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা স্রোতের মতো আসতে থাকে। পুলিশ জলকামান, সাঁজোয়া যান নিয়ে এক দফা ধাওয়া দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। শিক্ষার্থীরা রাস্তা আটকে যানবাহন ভাঙচুর শুরু করে। এরপর পুলিশ সরে গিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে রেল চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

রাস্তা অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় ‘আমরা বিচার চাই’ (উই ওয়ান্ট জাস্টিস) স্লোগান দেয়। এ সময় তারা ওই চালকের ফাঁসি, নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ, দুর্ঘটনাস্থলে স্পিডব্রেকার তৈরি, নিহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণসহ কয়েকটি দাবি করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *