বিডিবিএলে ঋণ কেলেঙ্কারি তদন্তে দুদক

বিডিবিএলে ঋণ কেলেঙ্কারি তদন্তে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক : জামানতবিহীন ও অস্বিত্বহীন জামানত রেখে অযোগ্য ব্যক্তি ও ভূঁইফোর কিছু প্রতিষ্ঠানকে অর্ধশত কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ডেভেলমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পরিচালক ড. মো. জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরেই দুদকের সহকারী পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধানকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানিয়েছে, সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে এরই মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণসংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র তলব করে পৃথক ৩টি চিঠি দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। যা আগামী ৫ জুলাইয়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের মূলকপি সংরক্ষণর্পূবক সত্যায়িত ছায়ালিপি সরবরাহের জন্য ব্যাংকটির বর্তমান এমডিকে অনুরোধ করা হয়েছে।

তলবকৃত নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ ডেভেলমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহক এম এম ভেজিটেবলের অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম, ব্যাংক স্টেটম্যান্ট, এমও ইউ, উক্ত গ্রাহকের ঋণের আবেদনপত্র, শাখার সুপারিশ, ক্রেডিট কমিটির অনুমোদন, পরিচালনা পর্ষদের ৬৫ ও ৬৬তম সভায় উপস্থাপিত বোর্ড মেমো এবং বোর্ড রেজ্যুলেশনপত্র এবং শাখায় প্রেরিত সেংশন অর্ডার। উক্ত ঋণ ও এলটিআর বিপরীতে শাখায় সংগৃহীত জামানত, ঋণের বিপরীতে জামানত হিসাবে ১২ কোটি টাকার এফডিআরসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র। এছাড়া, ওই গ্রাহকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত কপি (২০১৩, ২০১৪) এবং উক্ত ব্যাংকের প্রিন্সপাল শাখার উক্ত গ্রাহকের ওপর ওই ব্যাংকের নিজস্ব ইন্টারনাল তদন্ত প্রতিবেদন এর সত্যায়িত কপি।

দ্বিতীয় চিঠিতে তলবকৃত নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে, বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহক ঢাকা ট্রেডিং হাউজের অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম, ব্যাংক স্টেটম্যান্ট, এমও ইউ, উক্ত গ্রাহকের ঋণের আবেদনপত্র, শাখার সুপারিশ, ক্রেডিট কমিটির অনুমোদন, পরিচালনা পর্ষদের ৬৩তম সভায় উপস্থাপিত বোর্ড মেমো এবং বোর্ড রেজ্যুলেশনপত্র এবং শাখায় প্রেরিত সেংশন অর্ডার। ওই ঋণ ও এলটিআর বিপরীতে শাখায় সংগৃহীত জামানত সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র। উক্ত শাখায় ওই গ্রাহকের ২০১২ সালের ৪ মার্চের এলটিআরের আবেদন, শাখার প্রস্তাব, বোর্ড অনুমোদনপত্র, এসববিষয়ক স্থানীয় এলসিসংক্রান্ত শাখার প্রস্তাব থেকে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন। একই বছরের ২৯ এপ্রিলে গ্রাহকের ৩০ কোটি টাকার এলসিসংক্রান্ত আবেদন, শাখার নোটিং থেকে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন (বিশষত ৩২ পৃষ্ঠার নোটিংসহ), এলসিসংক্রান্ত সেট অব ডকুমেন্টস (শিপিং ডকুমেন্টস, ইনভয়েস, ট্রাক চালান, মালামাল গ্রহণের রিসিপ্ট) শাখার এলসি বিপরীতে একসেপটেন্স লেটারের সত্যায়িত কপি।

গ্রাহক মেসার্স ঢাকা ট্রেডিং হাউজের সঙ্গে ডিরেক্টর জেনারেল অব ফুডস, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকারের সম্পাদিত এমওইউ (স্থানীয় বাজার থেকে ১৫০০০ মেট্রিক টন গম সংগ্রহের) এর সত্যায়িত কপি, উক্ত ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহকের উপর অডিট ফার্ম জি. কিবরিয়া অ্যান্ড কোম্পানির ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অডিট প্রতিবেদনের সত্যায়িত কপি। গ্রাহকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত কপি। (২০১৪, ২০১৫) এবং উক্ত ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার উক্ত গ্রাহকের ওপর ওই ব্যাংকের নিজস্ব ইন্টারনাল তদন্ত প্রতিবেদন এর সত্যায়িত কপি (২০১৪, ২০১৫)।

সর্বশেষ চিঠিতে তলবকৃত নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ ডেভেলমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহক টাটকা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম, ব্যাংক স্টেটম্যান্ট, এমও ইউ, উক্ত গ্রাহকের ঋণের আবেদনপত্র, শাখার সুপারিশ, ক্রেডিট কমিটির অনুমোদন, পরিচালনা পর্ষদের ৪৫তম সভায় উপস্থাপিত বোর্ড মেমো এবং বোর্ড রেজ্যুলেশন পত্র এবং শাখায় প্রেরিত সেংশন অর্ডার। উক্ত ঋণ বা এলটিআর বিপরীতে শাখায় সংগৃহীত জামানতসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র। প্রস্তাবিত ঋনের বিপরীতে জামানত হিসেবে বন্ধকী সম্পত্তির ওপর ব্যাংক আল-ফালাহর গুলশান শাখার ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বরের অসম্মতিবিষয়ক কপি। এ এইচ জেড এগ্রো ইন্ড্রাট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেডের অনুকূলে গ্রাহকের ক্যাশ ক্রেডিট বাবদ আবেদন, শাখার প্রস্তাব, ক্রেডিট কমিটির সুপারিশসংক্রান্ত প্রস্তাব বা অনুমোদন, ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বরের পরিচালনা পষর্দে উপস্থাপিত বোর্ড মেমো, বোর্ড রেজ্যুলেশন, একইভাবে ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বরের পরিচালনা পষর্দে উপস্থাপিত বোর্ড মেমো, বোর্ড রেজ্যুলেশন, শাখার প্রেরিত সেংশান অর্ডার,  ১৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা উত্তোলন এবং কীভাবে বিতরণ হলো এর তথ্যাদি, লেনদেনসংক্রান্ত তথ্যাদি ও প্রতিবেদন। এছাড়া ওই শাখার গ্রাহকের ওপর ওই ব্যাংকের নিজস্ব ইন্টারনাল তদন্ত প্রতিবেদন এর সত্যায়িত কপি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *