বিদ্যুতের চাহিদা কমে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট

বিদ্যুতের চাহিদা কমে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: গ্রীষ্ম মৌসুমে তীব্র লোডশেডিং থাকলেও শীত শুরু হতেই ব্যাপক হারে কমে গেছে বিদ্যুতের চাহিদা। বর্তমানে দৈনিক গড়ে এ চাহিদার পরিমাণ সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা কমে যাওয়ায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। বর্তমানে দিনে ও সন্ধ্যায় মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবহার হচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ চাহিদা তৈরি না হওয়া সত্ত্বেও একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অনুমোদন বাড়ছে। জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপরীতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইতিবাচকতা থাকলেও বিদ্যুতের চাহিদা বিবেচনায় এসব কেন্দ্র আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সারা দেশে দিনের বেলায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার পূর্বাভাস ছিল সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াট। আর সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। যদিও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গতকালের বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদার বিষয়ে তথ্য জানা যায়নি।

তবে ১৫ ডিসেম্বর বিদ্যুতের চাহিদা ছিল দিনে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৫ মেগাওয়াট আর রাতে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৪৬৬ মেগাওয়াট।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে গত এক সপ্তাহে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল গড়ে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট। এ চাহিদার অর্ধেক পূরণ হচ্ছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দিয়ে। এরপর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ভারত থেকে আমদানীকৃত বিদ্যুৎ এবং বাকিটা নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এসেছে। জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন করার খুব বেশি প্রবণতা দেখা যায়নি বিপিডিবির তথ্যে।

দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের বিষয়টি দেখভাল করে সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ। গতকাল বিজয় দিবসের ছুটি ও ১৫ ডিসেম্বর সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি থাকায় সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে বিদ্যুতের ঘণ্টাপ্রতি উৎপাদন ও লোডশেডিং তালিকার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গ্যাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৪ হাজার ৫৭ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৩ হাজার ২২৯ মেগাওয়াট, ভারত থেকে আমদানীকৃত ৭১২ মেগাওয়াট, সৌর ও হাইড্রো থেকে ১০০ মেগাওয়াট এবং জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৮০৬ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে দিনের বড় একটি অংশে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট থেকে সর্বনিম্ন ১০০ মেগাওয়াটের নজির রয়েছে।

দেশের জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট সক্ষমতা প্রায় ৭ হাজার মেগাওয়াট। বিপুল পরিমাণ এ সক্ষমতার সিংহভাগই বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিপিডিবি এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ না নিলেও কেন্দ্র ভাড়া বাবদ ঠিকই ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে। বর্তমানে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বিপিডিবির কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা পাবে। বিপুল পরিমাণ এ বিলের বড় একটি অংশই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ।

দেশে বিদ্যুতের ইনস্টল ক্যাপাসিটি ২৫ হাজার ৯৫১ মেগাওয়াট। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিন হাজার মেগাওয়াটের সক্ষমতাসহ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৯ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। বর্তমান চাহিদা হিসাব করলে দ্বিগুণেরও বেশি সক্ষমতা বসে থাকছে। বিশেষ করে খরচ বিবেচনায় বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এখন ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যদিও শীত মৌসুমের বিদ্যুতের চাহিদার বিষয়টি বিবেচ্য নয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।

বিদ্যুতের নীতি ও গবেষণা সংস্থা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে এটাই স্বাভাবিক। আর বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ হয় মেরিট ডিসপ্যাচ অর্ডারের ভিত্তিতে। অর্থাৎ কম উৎপাদন খরচ হয় এমন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ব্যবহারের ভিত্তিতে। জ্বালানি তেলে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। ফলে অন্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা গেলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনের তো প্রয়োজন নেই।’

দেশে জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে যাবে এমন পরিকল্পনা থেকে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। মূলত জীবাশ্মনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমানোর কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবহার কমিয়ে ফেলতে হবে। এগুলো বিপিডিবির ওপর আর্থিকভাবে বিরাট চাপ ফেলছে। বিশেষ করে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ কয়লার চেয়ে অনেক বেশি।’

যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে সেগুলোর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার পরামর্শও দিয়েছেন এ বিশেষজ্ঞ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *