বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০,০০০ মেগাওয়াট ছাড়াবে এ বছরই

বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০,০০০ মেগাওয়াট ছাড়াবে এ বছরই

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০,০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে এ বছরই। এছাড়া অব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাও ৫০% বৃদ্ধি পাবে।

সরকারের এক সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ইউএনবি।

তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে গ্রিড ও অফ-গ্রিড বিদ্যুৎসহ মোট স্থাপন করা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ক্ষমতা ২৮,১৫৯ মেগাওয়াট।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছরের মধ্যে এটি ৩১,২৭৩ মেগাওয়াট হবে। এর মধ্যে ৫০%-এর বেশি অব্যবহৃত থাকবে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬,০০০ মেগাওয়াট।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে গ্রিডে যুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪,৯১১ মেগাওয়াট। এ ছাড়া ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ অফ-গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩,২৪৮ মেগাওয়াট।

অফ-গ্রিড বিদ্যুৎ বিশেষ করে, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো বড় পরিবর্তন নেই। এ ধরনের বিদ্যুৎ প্রধানত শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ২২,৪৮২ মেগাওয়াট। এ বছরের একই সময় পর্যন্ত এই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ২৪,৯১১ মেগাওয়াট। অর্থাৎ এক বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ২,৪২৯ মেগাওয়াট।

বর্তমানে আরও ৩,১১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাইপলাইনে রয়েছে যা আগামী ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩১,২৭৩ মেগাওয়াটে পৌঁছাবে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “সব মিলিয়ে এ বছর গ্রিডটি ৫,৫৪৩ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ পাবে। যদিও চাহিদা এক হাজার মেগাওয়াট বাড়তে পারে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, “নতুন সব বিদ্যুৎ বেসরকারি খাত থেকে আসছে, সরকারি প্ল্যান্ট থেকে নয়।”

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই সময়ের মধ্যে ভাড়ায় চালিত প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, “অনেক গ্রাহক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার বিশাল বৃদ্ধিতে খুশি হতে পারেন। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৫০% অব্যবহৃত রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ বা পরিচালন ব্যয় পরিশোধের ক্ষেত্রে এটি কর্তৃপক্ষের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “২০২২-২৩ সালে আমাদের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে ২৬,০০০ কোটি টাকা দিতে হয়েছিল। এ অর্থবছরে এর পরিমাণ ৩৬,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছাবে। ২০২১-২২ অর্থবছর যার পরিমাণ ছিল প্রায় ২১,০০০ কোটি টাকা।”

“ক্যাপাসিটি পেমেন্টের সঙ্গে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো-দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র এক বছর আগে ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেলেও পেমেন্টের ৯০%-এর বেশি অর্থ পরিশোধ করা হবে বৈদেশিক মুদ্রায়।”

ক্যাপাসিটি চার্জ হলো বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) অধীনে এক ধরনের জামানতযুক্ত পেমেন্ট। বেসরকারি উৎপাদনকারীর কাছ থেকে বিপিডিবি বিদ্যুৎ নিলেও সেই অর্থ দিতে হয়, না নিলেও দিতে হয়।

বিপিডিবির আরেক কর্মকর্তা বলেন, “দুই বছর আগের তুলনায় চলতি অর্থবছরে আমাদের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ৮০ থেকে ৯০% বাড়বে।”

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নতুন কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এরই মধ্যে গ্রিডে যুক্ত হয়েছে বা সংযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১,৬০০ মেগাওয়াট, রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৬২০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের বাশখালীর এস আলম গ্রুপের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১,২২৪ মেগাওয়াট, মেঘনাঘাটে রিলায়েন্স পাওয়ার এলএনজি-ভিত্তিক প্ল্যান্ট থেকে ৭১৮ মেগাওয়াট, এলএনজি-ভিত্তিক জিই-সামিট মেঘনাঘাট-২ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৫৯০ মেগাওয়াট এবং মেঘনাঘাটে এলএনজি-ভিত্তিক ইউনিক গ্রুপের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৫৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে গ্রিডে।

সরকারি পরিসংখ্যানে আরও জানা গেছে, বিপিডিবি তহবিলের ঘাটতি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। কারণ বেসরকারি খাতে এটির বকেয়া বিল এখন এই বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ২৫,৯৪৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

“কিন্তু বেসরকারি খাতের মে ও জুলাইয়ের বিল যোগ করা হলে তা ৩৫,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে,” বলেন বিপিডিবির এক কর্মকর্তা।

বিদ্যুৎ খাতের পরিস্থিতিকে আমদানিনির্ভর জ্বালানি সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে ভুল নীতির ফলাফল উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “বিপিডিবির বোঝা কমাতে ‘বিদ্যুৎ নেই পেমেন্ট নেই’ পদ্ধতি চালু করতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বন্ধে কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে ‘ফোর্স ম্যাজেউর’ প্রয়োগ করা উচিত।”

“দ্বিতীয়ত, সরকারকে আমদানি-ভিত্তিক এলএনজি-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে হবে।”

অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে জানান তিনি।

সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *