বিশ্বজুড়ে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি, উল্টোপথে চীন

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি, উল্টোপথে চীন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে বিশ্বজুড়ে চলছে মূল্যস্ফীতির জোয়ার। কিছু কিছু দেশে তা নিয়ন্ত্রণে এলেও তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি বলেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে উল্টো সমস্যায় পড়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন। সেখানে মুদ্রাস্ফীতির হার কমতে কমতে মূল্য-সংকোচনের পর্যায়ে চলে গেছে। বিষয়টি চীনের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবর বিবিসি।

বিশ্বেজুড়ে যেখানে কিছুটা মূল্যস্ফীতিকে স্বাভাবিক বলে ধরা হয় সেখানে চীনের কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বা মূল্য সূচক আগের বছরের তুলনায় ০.৩ শতাংশ কমে গেছে। এদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মূল্যস্ফীতির ঢেউয়ের কারণে চীনের আমদানি-রপ্তানিতেও এর বড় একটি প্রভাব পড়েছে। ফলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, সামনের দিনে বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে চীনা সরকার ।

কোনো জিনিসের চাহিদা বেড়ে গেলে যখন পণ্য বা সেবার দাম বেড়ে যায় তখন সেটাকে বলা হয় মূল্যস্ফীতি। সে ক্ষেত্রে কোনো কিছু কিনতে বেশি দাম দিতে হয়। মূল্য-সংকোচনের বিষয়টি তার পুরোপুরি বিপরীত। কোনো পণ্য বা সেবার দাম আগের চেয়ে নিম্নমুখী হলে তাকে মূল্য-সংকোচন বলে। এক্ষেত্রে দ্রব্য বা সেবার দাম কমে যায়। ফলে একই দামে আগের চেয়ে বেশি জিনিস কেনা যায় বা বেশি সেবা পাওয়া যায়।

মূলত ভোক্তার চাহিদা কমে যাওয়া, কঠোর মুদ্রানীতির কারণে অর্থের যোগান কমে যাওয়া, ব্যয় কমিয়ে মানুষের সঞ্চয়ে আগ্রহী হওয়া, খরচ কমায় উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মূল্য-সংকোচন হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির সময়ের চীনের উল্টোযাত্রার জন্য মানুষের চাহিদার মাত্রা ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদ ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি চায়না সেন্টারের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট জর্জ ম্যাগনাস। তিনি বলেন, চীনের নাগরিকদের চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়ায় দামের দিকটাও দুর্বল হয়ে গেছে। এছাড়া করোনা মহামারির কঠোর বিধিনিষেধ থেকে বের হয়ে আসার পরও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতির কথাও তার পর্যালোচনায় উঠে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির সময় চীন সরকার সাধারণ জনগণকে বিশেষ কোনো সুবিধা দেয়নি। নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই মেটাতে হয়েছে। এতে মহামারির সময়ে খরচ সংকোচনের যে অভ্যাস তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে, তা থেকে তারা আর বের হয়নি।

চীনের চাকরির বাজারেও এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিতেও মানুষের আস্থার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ফলে মানুষ খরচ কমিয়ে সঞ্চয়ের দিকে ঝুঁকছে।

এ ব্যাপারে হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক অ্যালিসিয়া গার্সিয়া-হেরেরো বলেন, এই মূল্য-সংকোচন চীনকে সাহায্য করবে না। বরং ঋণের বোঝা আরও ভারী হয়ে উঠবে।

এদিকে চীনের এই মূল্য-সংকোচন দীর্ঘায়িত হলে তা অন্যান্য দেশের জন্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া বয়ে আনবে। ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে, অন্যান্য দেশ তুলনামূলক কম দামে চীনের পণ্য কিনতে পারবে। বিষয়টি সেসব দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। অন্যদিকে মন্দ দিকটি হচ্ছে, চীন থেকে কম দানে পণ্য কেনা হলে সেটি দেশীয় উৎপাদকদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এর ফলে সেসব দেশেও ব্যবসায় বিনিয়োগ কমবে, কর্মসংস্থানের জায়গা কমবে। বাড়বে বেকারত্ব। এছাড়া চীনের বাজারে চাহিদা কমলে বিশ্বের রপ্তানি খাতেও এর আঘাত এসে পড়বে।

এ বিষয়ে কর্নেল ইউনিভার্সিটির বাণিজ্য নীতি ও অর্থনীতির অধ্যাপক ঈশ্বর প্রসাদ বলেন, এ মুহূর্তে বিনিয়োগকারী ও ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করাই হবে চীনের পুনরুদ্ধারের মূল বিষয়। ট্যাক্স কমিয়ে আনাসহ আরও বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তবে তিনি এও মন্তব্য করেছেন, চীনের সরকার এখন পর্যন্ত এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তেমন কিছুই করছে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *