বেড়েছে চিংড়ি রফতানি

বেড়েছে চিংড়ি রফতানি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক ● অপরিকল্পিতভাবে চাষের কারণে উন্নত বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগদা ও গলদা চিংড়ির উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে প্রায় প্রতি বছরই দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত ও ঋণখেলাপি হচ্ছেন। এর সঙ্গে বৈদেশিক বাজারে চাহিদা ও মূল্যের নিম্নগামিতা তো রয়েছেই। এর পরও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে হিমায়িত চিংড়ির রফতানি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।

চলতি মৌসুমে খুলনা জেলায় ২০ হাজার ৭০৬ হেক্টর জমিতে গলদা ও ৩৬ হাজার হেক্টরে বাগদা চিংড়ির চাষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ চিংড়ি চাষে বড় একটি প্রতিবন্ধকতা। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত এপ্রিলের দাবদাহে এ অঞ্চলের গলদা খামারে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের মারাত্মক সংক্রমণ দেখা দেয়। মার্চ-এপ্রিলে তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৩৬ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছিল। এদিকে জুনে ৩৫৬ মিলিমিটার ও জুলাইয়ে ৬৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সেপ্টেম্বরে ১৮ দিন স্বাভাবিকের চেয়ে ২৫ মিলিমিটার ও অক্টোবরে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮০ মিলিমিটার বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনদিনের শৈত্যপ্রবাহ ও গত বছরের ডিসেম্বরে তিনদিনের মৃদু শৈত্যপ্রবাহে বাগদা চিংড়ির খামারে মড়ক দেখা দেয়।

কিন্তু এতসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে হিমায়িত চিংড়ির রফতানি বেড়েছে। খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপপরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার জানান, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা মূল্যের ১১ হাজার ৯৮৭ টন হিমায়িত চিংড়ি বিদেশে রফতানি হয়। গত বছরের একই সময় ১২ হাজার ৭৮২ টন চিংড়ি রফতানি হয়েছিল। খুলনাঞ্চলের ৪৩টি হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুকতকারী প্রতিষ্ঠান চিংড়ি রফতানি করছে। মোট চিংড়ির ৮৩ শতাংশই রফতানি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে। তিনি আরো জানান, মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকায় দুটি হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে র‌্যাপিড অ্যালার্ট (সতর্কতা বার্তা) দেয়া হয়েছে। হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মডার্ন সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) সাইফুদ্দিন তনু জানান, বেলজিয়াম, জার্মান, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসে হিমায়িত চিংড়ি সবচেয়ে বেশি রফতানি হচ্ছে। তবে প্রকারভেদে হিমায়িত বাগদার দাম নিম্নমুখী। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রতি পাউন্ডে দেড় থেকে দুই ডলার দাম কমেছে। যুক্তরাজ্যে গলদা রফতানি ৭০ শতাংশ কমেছে। ন্যাশনাল সি ফুডের একজন প্রতিনিধি জানান, এক পাউন্ড ওজনের পাঁচ পিস হিমায়িত বাগদা চার মাস আগেও ১৩ ডলার মূল্যে বিক্রি হয়েছে। সে চিংড়িই এখন ১১ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এমন দরপতন সত্ত্বেও ন্যাশনাল সি ফুড অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৩০ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *