পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোকে অব্যবহৃত রেখে বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয় বিগত সরকারের আমলে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়তা করছে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপি)। ইতিমধ্যে বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ কিছুটা এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে সরকার পরিবর্তনের পর মন্ত্রণালয় থেকে পিপিপি অথরিটিকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বড় প্রকল্প হিসেবে বে-টার্মিনালের মতো বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরুত্সাহিত করা হয়েছে। যদিও বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে ‘ট্রানজেকশন এডভাইজার’ নিয়োগ করেছে পিপিপি অথরিটি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আমি চট্টগ্রাম বন্দরের প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করব। মাতারবাড়ী, বে-টার্মিনালের মতো প্রকল্পগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যদি কোনো প্রকল্প আমাদের জরুরি না হয় তাহলে আমরা সেগুলো কেন বাস্তবায়ন করব। তবে তিনি জানান, বন্দরের প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করে পুরো প্যাকেজ নিয়ে আমি সাংবাদিকদের জানাব। উপদেষ্টা পরিষদের সভায়ও এটা আলোচনা হবে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সরকারি এবং বেসরকারি জেটিগুলোর প্রায় অর্ধেক অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সেগুলো ব্যবহার না করে বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে বে-টার্মিনাল নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে বর্তমানে যে জেটিগুলো কার্যকর ও নির্মাণাধীন আছে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন জেটি সংখ্যা ১৭টি, যার মধ্যে ১১টি কনটেইনার জেটি, বাকি ছয়টি বাল্ক কার্গো জেটি। এছাড়াও সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত চালু জেটিগুলোর মধ্যে রয়েছে :পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, ডলফিন ওয়েল জেটি, গ্রেইন সাইলো জেটি, সিমেন্ট ক্লিংকার জেটি, টিএসপি জেটি ও সিইউএফএল জেটি। আর ড্রাই ডকের জেটির মধ্যে আছে কাফকো ইউরিয়া জেটি, ইস্টার্ন রিফাইনারি লি., পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব জেটি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ড্রাইডকের দুটি জেটি; যা ১১ মিটার ড্রাফট পর্যন্ত জাহাজ হ্যান্ডলিং করতে পারে।
এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির মন্দার কারণে বন্দরের মালামাল ওঠানামা কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বন্দরে জাহাজ আসার সংখ্যাও আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। একই সঙ্গে কনটেইনার ও বাল্ক কার্গোর চাহিদা নিম্নগামী হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৭টি জেটির মধ্যে সব সময়ই দুই-চারটি জেটি অলস অবস্থায় বসে থাকে। অনুরূপভাবে সিমেন্ট ক্লিংকার, ড্রাইডক এবং কর্ণফুলী জেটিসহ অন্যান্য জেটিসমূহও কার্গোর অভাবে খালি পড়ে থাকে।
মাতারবাড়ী ডিপ সি পোর্ট যেখানে ১৪ থেকে ১৬ মিটার গভীরে জাহাজ ভিড়তে পারবে বলে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেটি চালু হলে আরো ৩০ লাখ টিইইউ হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি যোগ হবে। ফলে দেশের কনটেইনার জেটিগুলোর বাত্সরিক মোট হ্যান্ডলিং ক্ষমতা হবে প্রায় ১১ দশমিক ৩ মিলিয়ন টিইইউ, যার শতভাগ চাহিদা মেটাতে বর্তমান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যত চাহিদা বিবেচনায় কমপক্ষে আরও ৫০ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘বে টার্মিনালের বিশাল জায়গা জুড়ে দ্রুত পলি পড়ার কারণে যতই ড্রেজিং করা হোক না কেন, দীর্ঘ মেয়াদে নাব্য সংকট দূর করা প্রায় অসম্ভব। বিদ্যমান জেটিগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হবে। বে-টার্মিনাল নির্মাণ শেষ হলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসার পরিমাণও কমে যাবে। উপরন্তু চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে প্রতি বছর যে ২ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা উপার্জন করছে বন্দর সেই উপার্জনও হারাবে। অর্থাৎ এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশি অপারেটরদের হাতে চলে যাবে। ফলে হুমকির মধ্যে পড়তে পারে চট্টগ্রাম বন্দর, কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে এর ২০ হাজার কর্মী। প্রসঙ্গত, বে-টার্মিনাল প্রকল্পে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ।