ভারতে থেকে গিয়ে মুসলমানেরা আমাদের ধন্য করেননি : যোগী আদিত্যনাথ

ভারতে থেকে গিয়ে মুসলমানেরা আমাদের ধন্য করেননি : যোগী আদিত্যনাথ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: দখলদার ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসন শেষে অর্থাৎ দেশভাগের সময় যেসব মুসলমান ভারতে থেকে গিয়েছিলেন, তারা ভারতে থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে ‘ধন্য’ করেননি বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সবচেয়ে বিতর্কিত ডানপন্থী রাজনীতিবিদ যোগী আদিত্যনাথ।

বিবিসিকে দেয়া তার এক সাক্ষাৎকার সূত্রে জানা যায়, তিনি অভিযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা ভারতে ‘বিভাজনের আগুন’ উস্কে দিচ্ছে।

ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশ্য করে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

এছাড়া তিনি দাবি করেন, “পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে মুসলমানেরা কষ্টে নেই, সেসব জায়গায় কষ্টে আছে হিন্দু, জৈন এবং শিখরা। সুতরাং তাদের সুরক্ষা প্রয়োজন।”

আদিত্যনাথ ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা। ভারতের ২০ কোটি মুসলমানের অন্তত এক চতুর্থাংশ এ রাজ্যে বাস করেন।

সম্প্রতি তার সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের দমনে, বিশেষ করে মুসলমানদের ওপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত যোগী আদিত্যনাথ।

কিন্তু প্রমাণসহ উদাহরণ দেবার পরেও আদিত্যনাথ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তবে, ৪৭ বছর বয়েসী, সর্বদা গেরুয়া কাপড় পরিহিত, প্রভাবশালী এক হিন্দু মন্দিরের পুরোহিত এই রাজনীতিবিদের জন্য বিতর্কিত মন্তব্য নতুন কোন ব্যাপার নয়। কট্টর মন্তব্য বিশেষ করে মুসলমানবিরোধী মন্তব্যের জন্য তিনি বহুবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন।

সম্প্রতি ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, যা সংক্ষেপে সিএএ নামে পরিচিত, পার্লামেন্টে পাশ হওয়ার পরে দেশ জুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হলে, কিছু ক্ষেত্রে তার মন্তব্য আরো ক্ষোভ উস্কে দিয়েছে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আসা সব অমুসলমানদের অ্যামনেস্টি বা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।

মুসলমানদের টার্গেট করার অভিযোগে এ আইন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে এবং দেশের বহু জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে। এর মধ্যে শাহীন বাগের বিক্ষোভ উল্লেখযোগ্য, যেখানে শত শত মুসলমান নারী এক মাসের সময় ধরে বিক্ষোভ করছেন।

এছাড়াও সরাসরি নাম উল্লেখ না করে আদিত্যনাথ শাহীনবাগের বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে বলেন, “কিছু সম্প্রদায়ের পুরুষ লোকেরা কাপুরুষ, তারা কম্বল মুড়ি দিয়ে বাড়িতে বসে আছে। আর মহিলা ও বাচ্চাদের বাড়ির বাইরে এই আইনের বিরোধিতা করতে পাঠিয়েছে।”

ভারতজুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা নিয়ে তিনি বলেন, “ভারতে নাগরিকত্ব আইন আগেই প্রণয়ন করা হয়েছিল, দেশভাগের পরেই। এখন কেবল তাতে একটি বাড়তি লাইন যুক্ত করা হয়েছে। এখন তার বিরোধিতা করছে কংগ্রেস। কিন্তু এই আইন যখন প্রণয়ন করা হয় তখন তো তারাই ক্ষমতায় ছিল।”

আদিত্যনাথ ভারতভাগের জন্য কংগ্রেস পার্টিকে দায়ী করে বলেন, “তাদের দেশভাগের বিরোধিতা করা উচিত ছিল, যার ফল হিসেবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল।”

যদিও ‘ভারতে সব নাগরিকের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ’ করার অধিকার রয়েছে, স্বীকার করলেও তিনি দাবি করেন শাহীনবাগের বিক্ষোভ ‘শান্তিপূর্ণ ছিলো না, এবং সাধারণ বাসিন্দা ও পথচারীদের ব্যাপক ভোগান্তি’র কারণ হয়েছে তা।

শাহীন বাগের বিক্ষোভ বরাবর শান্তিপূর্ণ ছিল, তবে এটি দিল্লির অন্যতম ব্যস্ত সড়কের ওপর অবস্থিত, যে কারণে এর কারণে শহরজুড়ে ব্যাপক যানজট হয়েছে শহরে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা জরুরি যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়নি।

শাহীন বাগের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মি. আদিত্যনাথের ক্ষোভ এই প্রথম নয়।

বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি কয়েকবার অভিযোগ করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ‘বিক্ষোভকারী নারী ও শিশুদের বিরিয়ানি’ খাওয়াচ্ছেন!

এই অভিযোগ তিনি সামনের শনিবারে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারণায় প্রথম তোলেন, যেখানে তিনি ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদের’ পক্ষে বক্তব্য দিয়ে প্রতিবেশী পাকিস্তানের সমালোচনা করেন।

উল্লেখ্য, কেজরিওয়াল বিজেপি এবং মি. মোদীর কট্টর সমালোচক। ২০১৫ সালে তিনি ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে মুখ্যমন্ত্রী হন।

নির্বাচনী প্রচারণার জন্য বানানো ট্রেইলে মি. আদিত্যনাথ বলেন, “আমরা বিরিয়ানি খাওয়া লোক না।” এরপর তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হবার পর মি. মোদী “সন্ত্রাসীদের দমনে বিরিয়ানির বদলে তিনি বুলেট চালিয়েছেন।”

বিবিসিকে তিনি জানিয়েছেন, ‘তিনি ঐ বক্তব্যে অটল রয়েছেন।’

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন, এবং পুলিশের সঙ্গে সহিংস সংঘর্ষে অনেকে মারাও গেছেন। বিক্ষোভকারীরা প্রায়শই অভিযোগ করে আসছেন, ‘পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে।’

আর এই অভিযোগ মি. আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তর প্রদেশেই সবচেয়ে বেশি, সেখানে এ পর্যন্ত ১৯জন মানুষ মারা গেছেন।

এছাড়া মুসলমানদের ওপর হুমকি ও হামলার বহু অভিযোগ রয়েছে। রাজ্যজুড়ে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী, বিশেষ করে মুসলমানদের কারাবন্দী করা হয়েছে।

পুলিশের বলপ্রয়োগের অভিযোগ স্বীকার করেননি তিনি।

এছাড়া বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনাকে ‘জাস্টিফাই’ করে বা বৈধতা দিয়ে মি. আদিত্যনাথ বিক্ষোভকারীদের ‘সহিংস’ অভিহিত করে বলেন, “অস্ত্রধারী ও বিক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা জনগণের সম্পদ নষ্ট করা শুরু করলে তাদের পুলিশ দিয়ে দমন করা হয়েছে।”

আবারো বিক্ষোভকারীদের দমনে এমন উদ্যোগ তিনি নেবেন কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন, “হ্যাঁ, তারা যদি কোন আইনের, যেটা বৈষম্যমূলক নয়, তার বিরোধিতা করতে গিয়ে সরকারি সম্পদ বিনষ্ট করে তাহলে তাই করা হবে।”

২০১৭ সালে আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

জবাবে তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “এমন কোন হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। আমার বিরোধিতাকারীরা আমার নামে গুজব রটাচ্ছে, কিন্তু আমাদের প্রশাসন দারুণ গতিতে চলছে।”

সূত্র : বিবিসি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *