ভিন্ন ভিন্ন নামে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সক্রিয় জঙ্গিরা

ভিন্ন ভিন্ন নামে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সক্রিয় জঙ্গিরা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ৪ বছর পূর্তি আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় নব্য জেএমবির হামলায় প্রাণ হারান দেশি-বিদেশি ২৩ জন। আহত হন আরও অনেকে।

দেশের ইতিহাসে বর্বর এ জঙ্গি হামলার পরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে হামলাকারী নব্য জেএমবির অনেকেই নিহত হন। অনেকে গ্রেফতার হন।

ইতোমধ্যে হামলাকারী ৭ জঙ্গির ফাঁসির রায় হয়েছে। তারপরও থেমে নেই জঙ্গিদের অপতৎপরতা। ভিন্ন ভিন্ন নামে ভার্চুয়াল মাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় জেএমবি এবং নব্য জেএমবির ভিত নড়বড়ে হয়ে গেলেও এখন ভার্চুয়াল মাধ্যমে বেশি সক্রিয় নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরির ও আনসার আল ইসলাম।

এছাড়া মাঝে মধ্যে আলকায়দা ইন সাব-কন্টিনেন্ট (একিউআইএস) নামের জঙ্গি সংগঠনটি অনলাইনে বিবৃতি দিয়ে তাদের উপস্থিতি জানান দেয়। পুলিশ এবং জঙ্গি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সুযোগে অন্য সময়ের তুলনায় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় হচ্ছে এসব জঙ্গিরা।

এরা অনলাইনে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে সদস্য সংগ্রহের পর বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সদস্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন অনলাইনে।

আগে ফিজিক্যালি বিভিন্ন দুর্গম এলাকা যেমন চর ও পার্বত্য এলাকায় প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। এখন তারা ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে।

সেখানে হামলা থেকে শুরু করে আত্মরক্ষার নানা কৌশল শেখানো হচ্ছে। আবার হিজবুত তাহরির তাদের অবস্থান জানান দিতে মাঝে-মধ্যেই লিফলেট প্রচার করছে।

সম্প্রতি লিফলেটসহ বেশ কয়েকজন হিজবুত তাহরিরের সদস্য গ্রেফতার হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গি কর্মকাণ্ড স্থিমিত হয়ে পড়লেও স্বস্তি প্রকাশের কোনো অবকাশ নেই। সাময়িক বিরতি দিয়ে তারা আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর দেশে জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ বিস্তারের পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে।

ওই হত্যাকাণ্ডের পরপরই দেশে জঙ্গি ও জঙ্গিবাদবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে নাগরিকদের মধ্যে। এ কারণে দেশে জঙ্গিদের মতাদর্শ প্রচারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

হলি আর্টিজানে হামলার পর দেশের অভ্যন্তরে তাদের কোনো সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তুলতে পারেনি। এজন্য কোনো কোনো জঙ্গি নেতা তার অনুসারীকে ‘লোন উলফ’ হামলার নির্দেশনা দিচ্ছে।

সেদিন যা ঘটেছিল : ২০১৬ সালের পহেলা জুলাই হলি আর্টিজানে দেশ-বিদেশের অতিথিদের অনেকেই আড্ডা দিচ্ছিলেন বিভিন্ন টেবিল ঘিরে।

রাত পৌনে ৯টার দিকে রেস্তোরাঁয় একদল যুবক পিস্তল, সাব-মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়ে। ভেতরে ঢুকেই তারা বিদেশি নাগরিকদের টার্গেট করে গুলি শুরু করে।

পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর বোমা নিক্ষেপ ও এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। আত্মরক্ষার্থে তারা পাল্টা গুলি চালায়।

একপর্যায়ে সন্ত্রাসীদের নিক্ষিপ্ত গুলি ও গ্রেনেডে সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালেহ উদ্দিন লুটিয়ে পড়েন। আহতদের মধ্যে কেউ কেউ মারাত্মক জখম হন।

পরে ২ জুলাই সকাল আনুমান ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন জিম্মিদের উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদেও গ্রেফতারের লক্ষ্যে অপারেশন থান্ডার বোল্ড নামে এক অভিযান পরিচালনা করে। এতে ৬ জন নিহত হয়। প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ান দেশি-বিদেশি ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *